ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

বেহাল দশায় চুরুলিয়ার নজরুল জাদুঘর ও পাঠাগার

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৯ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৫
বেহাল দশায় চুরুলিয়ার নজরুল জাদুঘর ও পাঠাগার ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চুরুলিয়া থেকে ফিরে: সেসময়ে কবির বসতভিটায় আজকের নজরুল একাডেমি। পাশেই নজরুল জাদুঘর ও নজরুল পাঠাগার।

একাডেমি থেকে বেরিয়ে ঢুকলাম নজরুল জাদুঘরে। দোতলা বাড়ির একতলাজুড়ে জাদুঘর।

আমরা ঢুকে দেখলাম জাদুঘর ফাঁকা। দর্শনাথী বলতে আমরা দু’জন। ৫ রুপি করে মাথাপিছু টিকিট। সারাবছর খুব একটা লোক আসে না। তবে কাজী নজরুলের জন্মদিন উপলক্ষে মেলার সময় বেশ কিছু মানুষ আসেন এখানে। তখন বেশ ভিড়ও হয় জাদুঘরে।

অমূল্য সব সংগ্রহ রয়েছে এখানে। নজরুলের ব্যবহার করা খাট, চেয়ার, জামা-কাপড়, আসন প্রভৃতি ছাড়াও কাজী নজরুল এবং প্রমীলা দেবীর ব্যবহার করা বিভিন্ন জিনিস-পত্র। রয়েছে কাজী সব্যসাচী ও কাজী অনিরুদ্ধের ব্যবহৃত জিনিসও।
files/May_2015/May_23/3_naz_160139096.jpg
এইচ এম ভি কোম্পানি দু’টি গ্রামোফোন উপহার দেয় কাজী নজরুল ইসলামকে। জাদুঘরে দেখা মিলবে সে দু’টির। রয়েছে সে সময়ে তোলা কবির বেশ কিছু ছবি ও চিঠি।

এখানে সংগ্রহে থাকা হাতে লেখা বেশ কিছু পাণ্ডুলিপি ঐতিহাসিক তাৎপর্যের নিরিখে মহামূল্যবান। জাদুঘরের অনেক জিনিসই কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কর্তৃপক্ষের দেওয়া।

নজরুলকে নতুন করে চেনা-জানার জন্য রয়েছে এরকম অনেক উপকরণ। কিন্তু ভালোভাবে সংগ্রহে রাখার জন্য কী ব্যবস্থা রয়েছে এখানে? আর ভবনটিই বা কতটা উপযোগী?

ঐতিহাসিক মহামূল্যবান সব সংগ্রহ থাকলেও সংগ্রহশালাটি মোটেও উপযোগী নয়। অবকাঠামোগতভাবে খুবই দুর্বল। ঘরের কোণে জমে রয়েছে ধুলা, মাকড়সার জাল। পলেস্তরা খসে পড়ছে ছাদ, দেয়াল থেকে। পরিবেশও যেন কিছুটা স্যাঁতসেঁতে।

কোনো কোনো জায়গায় বিদ্যুতের তার খুলে গেছে। নেই কোনো অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা, গোপন ক্যামেরা।

অথচ একটি সংগ্রহশালার জন্য এসব বিষয়গুলি ঠিকঠাকভাবে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কবির বিরল মুহূর্তের অনেকগুলি ছবি মিউজিয়ামের মেঝের উপর সারি দিয়ে সাজানো। সঠিক সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে সেগুলো। নেই কোনো শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, আর আধুনিক সংরক্ষণ পদ্ধতির কথা বাদই দিলাম।

জাদুঘরের কোনো কিউরেটর নেই। সঠিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে অচিরেই নষ্ট হয়ে যাবে বিদ্রোহী কবি, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এ সংগ্রহশালাটি।

এর ঠিক পাশেই নজরুল পাঠাগার। এটি সরকারি। জানা যায়, দু’জন সরকারি কর্মচারি রয়েছেন এ পাঠাগারে। পাঠাগার খোলা পাওয়া গেলো কিন্তু সেই কর্মচারীদের খোঁজ পাওয়া গেলো না।

একজন ব্যক্তিই জাদুঘরে দেখভাল করেন। তিনিই টিকিট বিক্রি করেন। জানা গেলো তিনি পাঠাগারও সামলান।

পাঠাগারে প্রায় ২৩ হাজার বই আছে। তবে কথা বলে জানা যায়, এলাকার সাধারণ মানুষ খবরের কাগজ পড়তেই এ পাঠাগারে আসেন। এর পাশেই কবিপত্নী প্রমীলা কাজী ও ছেলে কাজী সব্যসাচীর সমাধি। বাংলাদেশ থেকে কবির সমাধির মাটি নিয়ে এসেছিলেন কাজী সব্যসাচী নিজেই।

নজরুল দুই বাংলার কবি, ঠিক যেমন রবীন্দ্রনাথ। তাদের দুজনের উপরই যেন সব বাংলা ভাষাভাষির অধিকার সমান। তাই নজরুলের শেষ স্মৃতিটুকু রক্ষার দায়ও এড়াতে পারে না দু’দেশ। যেভাবেই হোক কবির শেষ স্মৃতিগুলো রক্ষা করাই এখন সময়ের প্রধান দাবি।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৯ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৫
এএ

** ধুলার আস্তরে জমা অভিমানে কবি নজরুলের জন্মভিটা
** নজরুলতীর্থ চুরুলিয়ার পথে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।