কলকাতা: ১৯২৬ সালে ৩ সেপ্টেম্বর জন্মেছিলেন অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। তবে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন বাঙালির ‘মহানায়ক’ উত্তম কুমার নামে।
সেই পথ চলার গল্প সবারই কমবেশি জানা। কিন্তু আজকের গল্প কিছু অজানা ঘটনা নিয়ে। ১৯৮০ সালে ২৪ জুলাই দিনটি বাঙালির কাছে নক্ষত্র পতনের দিন হিসেবে চিহ্নিত। এদিন মারা যান আমাদের মহানায়ক উত্তমকুমার।
সেদিন শুটিং চলছিলো বিখ্যাত সিনেমা ‘ওগো বধূ সুন্দরী’-র। এ কথাও কারো অজানা নয়। কিন্তু উত্তমকুমারের খুব ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষ ছাড়া কেউই প্রায় জানতেন না শুটিং চলার ফাঁকে ফাঁকে উত্তমকুমার লিখছিলেন তার আত্মজীবনী।
একজন মহান অভিনেতা তার আত্মজীবনী লিখবেন এটা অবাক হওয়ার মতো কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু চমকানোর মতো ঘটনা ছিলো অন্য। জানা যায়, তার মৃত্যুর দিনেই উধাও হয়ে যায় তার আত্মজীবনীর পাণ্ডুলিপিটি। তার মৃত্যুর বহু পরে খুঁজে পাওয়া যায় সেটি। পরে প্রকাশ করা হয় বই আকারে। বইয়ের নাম ‘আমার আমি’।
এই বইয়ে রয়েছে অনেক না জানা ঘটনা, আছে বন্দরের কেরানি অরুণ চট্টোপাধ্যায়ের উত্তম কুমার হয়ে ওঠার গল্প। আছে তার সংগ্রাম, সাফল্য, ব্যর্থতা, সম্পর্ক, পরিবার এসব নিয়ে অনেক কথা। খুব বেশিভাবে এ বইজুড়ে রয়েছে এক অভিনেতার একাকীত্বের কথাও।
কলকাতার স্টুডিও পাড়ায় নায়কোচিত ব্যবহারের কথা উঠলেই বহুবার বলা একটা গল্প এখনও উঠে আসে। একদিন স্টুডিওর সামনে থেকে গাড়িতে পেট্রোল নিচ্ছিলে অভিনেতা শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়। গাড়িতে বসে না থেকে তিনি গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ ঘটনা দেখে পরে উত্তমকুমার তাকে বলেন, নায়করা যদি এভাবে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় তবে দর্শকের সেই নায়কের সম্পর্কে আগ্রহ কমে যায়।
এরকম আরও একটি ঘটনার কথা জানা যায়। কোনো এক অনুষ্ঠানে উত্তমকুমারের নিরাপত্তার জন্য অনেক উঁচু মঞ্চ করা হয়েছিলো। মঞ্চে উঠে উত্তমকুমার দেখতে পান, এক নারী তাকে দেখার জন্য একটি বাড়ির কার্নিশ ধরে ঝুলছেন। তিনি তাকে নেমে আসতে বলেন। ওই নারী জানান তার পোর ভয় নেই, কারণ তিনি তার স্বামীর ঘাড়ে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। শুধু উত্তম কুমারকে দেখার জন্য।
একটি বিতর্কিত ঘটনা আজ পশ্চিমবঙ্গে মুখে মুখে আলোচিত হয়। যদিও উত্তমকুমারের তরফ থেকে কোনোদিনই এ ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে কোনো বক্তব্য আসেনি। তবে সেই সময়ের অনেক মানুষ এ ঘটনাকে সত্যি বলে মনে করেন।
সেই সময় কলকাতায় চলছে নকশাল আন্দোলন। এই সময়ে কোনো একদিন অভ্যাস মতো খুব ভোরে কলকাতা ময়দানে হাঁটতে গেছেন মহানায়ক। সেখানে তিনি নাকি দেখনে এক নকশাল নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। এরপর কিছুদিন ভয়ঙ্কর ‘ট্রমা’-তে ছিলেন উত্তম কুমার। এ ঘটনার প্রভাবে তিনি নাকি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। যা থেকে বের হতে তার অনেক সময় লেগেছিলো।
আত্মজীবনীতে মহানয়াক লিখেছিলেন, ‘আমার হৃদয় জানে- এই আলো এই ঔজ্জ্বল্য কিছুই একদিন থাকবে না। এই আলো একদিন নিভে যেতে পারে, আমাকে ছুড়ে ফেলতে পারে গভীর অন্ধকারে’। তিনি আজ নেই। কিন্তু ম্লান হয়নি তার স্মৃতি। তাই ৩ সেপ্টেম্বর ৮৯তম জন্মদিনেও তিনি বাঙালির কাছে ‘মহানায়ক’।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৫
ভিএস/এএ