কলকাতা: মহান বিজয় দিবসের প্রাক্কালে বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে একাত্তরের রণাঙ্গণের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেছিলেন আকাশবাণী কলকাতার অবসর নেওয়া সাংবাদিক তথা ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রাপ্ত উপেন তরফদার।
তার স্মৃতির ঝুলি থেকে বেড়িয়ে আসছিল অনেক ঘটনা, এসব ঘটনার বেশির ভাগই তার স্মৃতিতে আছে।
এসব ঘটনাগুলো যেমন এক প্রামাণ্য ইতিহাস ঠিক তেমনই ওই সময়ের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝতে খুবই সহায়ক।
সে ধরনের একটি ঘটনার কথা জানালেন উপেন তরফদার।
দিল্লি থেকে আকাশবাণী কলকাতায় খবর আসে, রেডিও পাকিস্তানে বলা হচ্ছে পূর্ববঙ্গে নাকি ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন সাধারণ মানুষ।
এ খবর পাওয়ার পর বাস্তব পরিস্থিতির সংবাদ সংগ্রহ করতে রণাঙ্গণের উদ্দেশ্যে রওনা দেন এই সাংবাদিক। সঙ্গী তার মাইক এবং টেপ রেকর্ডার।
তিনি বর্ণনা করলেন, সেদিন তার সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনার। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন আরও কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিকও উপস্থিত হয়েছেন।
তাদের নিয়ে সরাসরি রণাঙ্গনের দিকে যাত্রা করে ভারতীয় সৈন্যদের একটি দল।
যশোর সীমান্ত দিয়ে এগিয়ে চললো সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া গাড়ি। সামনে একটি সেনাবাহিনীর ‘এসকর্ট রেজিমেন্ট’ তার পরের গাড়িতেই সাংবাদিকরা এবং তার পেছনে আরও বেশকিছু গাড়ি।
গাড়ি প্রবেশ করলো বাংলাদেশের মাটিতে, দু’পাশে দাঁড়িয়ে আছে সাধারণ মানুষ। একটি বিদেশি সেনাবাহিনীকে তারা যেভাবে হাততালি আর আনন্দের চিৎকারে বরণ করে নিচ্ছে সেটা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।
গাড়ি আরও কিছুটা এগিয়ে গেল, সাধারণ মানুষ দাঁড়িয়ে রইলেন পেছনে। কিন্তু একটি ১০ থেকে ১২ বছরের ছেলে ছুটে চলল গাড়ির সঙ্গে সঙ্গে।
খালি গা, খাটো ধুতির চেয়েও খাটো একটি সুতির কাপড় জড়ানো। দৌড়াচ্ছে আর চিৎকার করে বলছে, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’।
তার মুখে অন্য কোনো কথা নেই। খালি পায়ে সাঁজোয়া গাড়ির সঙ্গে ছুটে চলেছে সে। গলার শিরা ফুলিয়ে চিৎকার করে চলেছে একটি মাত্র বাক্য।
উপেন তরফদার জানালেন, সেদিন সেনাবাহিনীর গাড়ি থেকে মাইকটি বের করে বারবার তাকে কিছু বলতে অনুরোধ করা হলেও সে হাঁপাতে হাঁপাতে একটা কথাই বলেছিল ‘জয় বাংলা- জয় বঙ্গবন্ধু’।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৫
ভিএস/এমএ
** শোনো, একটি মুজিবুরের থেকে লক্ষ মুজিবুরের...
** ‘সেদিন ছিল আমাদেরও বিজয়ের দিন’