কলকাতা: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের বিপক্ষে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেওয়ার আগে থেকেই কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।
যখন পাকিস্তানি বর্বর সেনা বাংলাদেশের উপর আক্রমণ শুরু করে সে সময় নিজে পশ্চিম ইউরোপ সফরে যান তিনি।
একাত্তরে কলকাতায় প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক ও তখনকার কলমযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেল।
পশ্চিম ইউরোপ সফরের উদ্দেশ্য ছিল যে কোনোভাবে বিশ্বের অন্যতম শক্তিগুলো যাতে পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়ায় তা আলোচনা করা। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধীর সে চেষ্টা সফল হয়নি।
তিনি চেষ্টা করেছিলেন ব্রিটেন এবং আমেরিকাকে বোঝাতে যে পাকিস্তানের এই হামলা অনৈতিক।
ওই সময় ব্রিটেন এবং আমেরিকাকে সে কথা বোঝাতে ব্যর্থ হন ইন্দিরা। এরপর উপায় না দেখে তিনি তৎকালীন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্মরণ সিংকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে পাঠান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশে পাকিস্তানের আগ্রাসন রুখতে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাশিয়াকে পাশে পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ইন্দিরা গান্ধীর দুরদৃষ্টির পরিচয় মেলে এর কিছুদিন বাদেই। ৩ ডিসেম্বর থেকে যুদ্ধ শুরু হলে ভারত প্রথমে ঢাকার পাকিস্তানি বিমান ঘাঁটিতে বোমা বর্ষণ করে।
অন্য দিকে ভারতীয় নৌবাহিনী চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে পাকিস্তানের নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রুখে দেয়।
কিছুদিন আগেই ভারত সরকারের প্রকাশ করা একটি নথি থেকে জানা যায়, বৃটেন ও আমেরিকার নৌবাহিনী ভারতীয় সেনার উপর আক্রমণ করতে একত্রিত হয়েছিল। কিন্তু তাদের মাঝে এসে দাঁড়ায় রাশিয়ার বিরাট নৌবহর।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক তথ্য থেকে জানা যায়, সেই সময় ফ্রান্স, চীন এবং পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশকে পাকিস্তানে সাহায্য করার জন্য আবেদন জানানো হয়। কিন্তু চীন সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি।
১৪ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে মেজর জেনারেল জেকবের কাছে আত্মসমর্পণ করার কথা জানান পাকিস্তানের সেনা প্রধান জেনারেল এ কে কে নিয়াজী।
জানা যায়, সেই সময় নিয়াজিই ঢাকায় অবস্থিত আমেরিকার কনস্যুল জেনারেল কার্যালয়ে সেই বার্তা পাঠানো হয়। পরে তা পাঠানো হয় ওয়াশিংটনে।
দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে ৯৩ হাজার সৈন্য নিয়ে ভারতীয় সেনা এবং মুক্তিবাহিনীর সামনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স (বর্তমান সোহরাওয়াদী উদ্যান) ময়দানে আত্মসমর্পণ করে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
ভিএস/এমএ