ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

শখের বনসাই এখন প্রসেনজিতের পেশা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২০
শখের বনসাই এখন প্রসেনজিতের পেশা বনসাই/ ছবি: বাংলানিউজ

কলকাতা: বাহারি টবে সাজানো রয়েছে বট, বকুল, শিমুল, পাকুড়, তেঁতুল, শিরিষ, বাবলা, পলাশ, বিলিতি বেলগাছ। নানা ধরনের বনসাই গাছের তালিকাটি এর থেকেও যেমন দীর্ঘ, তেমনই বৈচিত্র্যে ভরপুর।

আর তার টানা বর্ণনা দিতে গিয়ে ক্লান্ত হচ্ছেনা না প্রসেনজিৎ গুহ। কলকাতার বেহালার পর্ণশ্রীর বাসিন্দা প্রসেনজিতকে ববিন বললে সকলেই চেনেন।

বনসাই শিল্পকে ২০ বছর ধরে আঁকড়ে রেখেছেন তিনি। ছেলেবেলার নেশা পরে পরিণত হয় পেশায়। কলকাতার ট্রপিক্যাল বনসাই স্কুল থেকে তিন বছরের আন্তর্জাতিক ডিপ্লোমা কোর্স করেছেন তিনি। প্রশিক্ষণ দিতে কখনও উড়ে গিয়েছেন ইন্দোনেশিয়া, কখনও ফিলিপিন্সে। বিভিন্ন বনসাই প্রদর্শনীতে পেয়েছেন হাজারো প্রশংসা। পেয়েছেন সেরার শিরোপা।

নেশাকে কীভাবে জীবিকা করা যায় সেই গল্প জানতে গিয়ে জানা গেলো, একটি বনসাই গাছের মূল্য ভারতীয় বাজার দরে পাঁচ হাজার থেকে ২ লাখ রুপি, বা তারও বেশি দরে বিক্রি হতে পারে। তবে মূল্য নির্ধারিত হয় সংশ্লিষ্ট বনসাইয়ের প্রজাতি, তার আকৃতি, শিল্প ভাবনা এবং অবশ্যই বয়সের উপর। জিনিস যখন পুরাতন হয় তখন তার দাম কমে। তবে বনসাইয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু ঠিক উল্টোটা। যে বনসাই যত পুরনো, তার ততই মূ্ল্য। আর এখানেই লুকিয়ে রয়েছে এই ব্যবসার আসল মন্ত্র।  

একটা ভালো বনসাই করতে যত না খরচ হয় তার শতগুণ লাগে দৃষ্টিশক্তি ও শিল্প ভাবনা। অর্থাৎ বনসাইয়ের প্রধান অর্থ হলো এক জীবন্ত ভাস্কর্য। ধারণা করা হয় প্রায় দুই হাজার বছর আগে চীনে শুরু হয়ে পরবর্তী সময়ে জাপান, কোরিয়া ও ভিয়েতনামে এই শিল্প ছড়িয়ে পড়ে। চীনা শব্দে যাকে পেনজাই বলে জাপানিরা তাকে বনসাই বলে থাকেন। জাপানি ছোঁয়া লেগে এই শিল্পের আমূল পরিবর্তন ঘটে।

বনসাই কথার অর্থ খর্বাকৃতি বা বামন প্রকৃতির একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। সব গাছের বনসাই হয় না। ফলজ ও বনজ যেসব গাছের সহ্য ক্ষমতা বেশি, দীর্ঘদিন বাঁচতে পারে সেই ধরনের গাছকেই মূলত বেছে নেওয়া হয়। সারা বছরই বনসাই বানানোর প্রক্রিয়া চলে। তবে, বর্ষা হলো এর জন্য উপযুক্ত সময়। কারণ বৃষ্টির পানিতে প্রচুর পরিমাণ নাইট্রোজেন থাকে। যা গাছের পক্ষে অত্যন্ত উপযোগী।

ববিনের কথায়, এই শিল্পের প্রথম কাজ হলো গাছ নির্বাচন ও মাটি তৈরি। তারপ স্টাইল, নকশা, শিল্প ভাবনা এবং পরিচর্যা। বাংলার আবহাওয়ায় যে ধরনের গাছ বনসাইয়ের ক্ষেত্রে উপযুক্ত, সাধারণত সেই ধরনের চারাই বেছে নেওয়া হয়। যেমন বট, তেঁতুল, অশ্বত্থ, অর্জুন থেকে শুরু করে গন্ধরাজ, টগর, জবা, কাঞ্চন, বাবলা, পেয়ারা  ইত্যাদি। তবে বনসাইয়ের মধ্যে কমলালেবু, এলাচি, লেবু বেশ জনপ্রিয়।

গাছ নির্বাচনের পর আসে মাটি তৈরির পালা। মাটির সঙ্গে পুরনো গোবর মেশাতে হয় ৫০ শতাংশ হারে। অর্থাৎ, অর্ধেক মাটি এবং অর্ধেক গোবর সার। একটা ১০ ইঞ্চি টবে (প্লাস্টিকের বাদে) হিসেবে ১০০ গ্রাম হাড়ের গুঁড়োর সঙ্গে ৫০ গ্রাম স্টেরামিল ও দুই চামচ সুপার ফসফেট লাগবে। এর সঙ্গে মেশাতে হবে ১০ শতাংশের অনুপাতে লাল বালি। গাছ লাগানোর মাসখানেক পর দেখা যাবে সেটি বাড়তে শুরু করেছে। তখন নীচ থেকে দেড় থেকে দুই ফুট রেখে গাছটিকে সম্পূর্ণ ছেঁটে ফেলতে হবে।

এর দিন দশেক পর দেখা যাবে নতুন শাখা-প্রশাখা বের হতে শুরু করেছে। তখন প্রধান মূলটি এক থেকে দেড় ইঞ্চি রেখে কেটে ফেলতে হবে। এরপর সাথে শিল্প ভাবনা। অর্থাৎ, কোন ডালটি রাখা হবে আর কোনটি বাদ দিতে হবে। পছন্দমতো আকৃতির জন্য ডালগুলোকে অ্যালুমিনিয়ামের তার দিয়ে বেঁধে দিতে হয়।

পরিচর্যার জন্য প্রতি মাসে দু’বার করে পানির সঙ্গে তিন বা চারদিন ভেজানো সর্ষের খোলের পানি ৫০ শতাংশের অনুপাতে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দিতে হবে। বর্ষার সময় যেহেতু বৃষ্টির পানি পাওয়া যায়, তাই এই সময় আলাদা করে পরিচর্যার প্রয়োজন নেই।

তবে, যারা এই প্রথম হাতে কলমে বাড়িতে বনসাই করতে চান, তাদের জন্য এই সহজ পাঠ  কাজে লাগবে। আর ভবিষ্যতে বনসাইকে জীবিকা হিসেবে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে পা বাড়াতে পারবেন সহজে। এমনটাই মত প্রসেনজিৎ গুহ’র।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২০
ভিএস/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।