কলকাতা: নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সরকারকে সুইস ব্যাংকে জমানো কালো অর্থের বাড়বাড়ন্তর জন্য বারবার কাঠগড়ায় তুলেছিলেন। ফেরত আনার দাবিও তুলেছিলেন মোদী।
অথচ ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর সাত বছর কেটে গেছে। সেই টাকাতো আসেইনি উল্টে, মোদী দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের কালো টাকার পরিমাণ অনেখানি বেড়েছে। তথ্য বলছে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর জমানায় ভারতীয়দের সুইস ব্যাংকে জমানো কলো টাকার পরিমাণ সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। করোনাকালে সেই অংক বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২১ হাজার কোটি রুপি। যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
অথচ মোদী যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তার অভিযোগ ছিল, কংগ্রেস সরকারের কালো টাকা ফেরানোর হিম্মত নেই। কারণ কংগ্রেসের লোকেরাই এই পাপে ডুবে আছে। রিপোর্ট প্রকাশ পাওয়ার পর কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণ শুরু করেছে। জানতে চাওয়া হয়েছে, করোনাকালে এত কালো টাকা কাদের নাম প্রকাশ করুক মোদি সরকার। পুরনো কথা মনে করিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা প্রশ্ন করেছেন, তিন বছরের বদলে সাত বছর কেটে গেছে। মোদীজির ফেরত আনার কি ইচ্ছাশক্তি নেই নাকি ওই সব অর্থ তার বন্ধুদের।
যদিও জমানো টাকা কাদের তা বলতে রাজি নয় সুইসব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ভারতের নতুন চুক্তি অনুযায়ী, সুইসব্যাংকে রাখা ভারতীয়দের টাকার হিসেব একবছর পর হাতে পায় ভারত। তাতে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালে ৯ হাজার কোটি রুপির বেশি জমা ছিল সুইস ব্যাংকে। এতদিন সেই হিসেবই ছিল সর্বোচ্চ। ২০১৭-১৮ সালে সেই টাকার পরিমাণ নীচের দিকে নামতে থাকে। ২০১৯ সালের শেষদিকে ভারতীয়দের জমানো অর্থের পরিমাণ হয়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৬২৫ কোটি রুপি।
তবে ২০২০ সালের শেষে তা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৭০৬ কোটি রুপি। অর্থাৎ মাত্র একবছরে কালো রুপির পরিমাণ বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। এরমধ্যে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি রুপি জমা হয়েছে বন্ড, সিকিউরিটিস এবং অন্যান্য আর্থিক প্রক্রিয়াতে। ৪ হাজার কোটির বেশি গ্রাহকরা নিজে জমা করেছেন। ৩ হাজার ১০০ কোটি রুপির বেশি এসেছে অন্য ব্যাংক থেকে এবং সাড়ে ১৬ কোটি রুপি এসছে বিভিন্ন ট্রাস্ট মারফত।
সুইস ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে জমা অর্থ কমলেও বন্ড, সিকিউরিটিজ় ও অন্যান্য ভাবে সুইস ব্যাংকে জমা হওয়া অর্থ বিপুল ভাবে বেড়েছে। ভারতের কেন্দ্রীও অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা জানিয়েছেন, সুইসব্যাংকে থাকা অর্থ মানেই তা কর ফাঁকির কালো টাকা নয়। এরমধ্যে সুইস ব্যাংকের বিভিন্ন ভারতীয় শাখায় জমা অর্থও রয়েছে। বিভিন্ন ট্রাস্ট এবং সংস্থার অর্থও রয়েছে। অর্থমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ভারতীয়দের জমা অর্থ ৩৯ শতাংশ বেড়েছে।
তবে প্রকাশিত এই রিপোর্টকে কেন্দ্র করে মোদী সরকারের উদ্দেশ্যে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে কংগ্রেস। তাদের দাবি, ২০২০ সালে সুইসব্যাংকে ভারতীয়দের জমানো অর্থের পরিমাণ ২৮৬ শতাংশ বেড়েছে। কংগ্রেসের মুখপাত্র অধ্যাপক গৌরব বল্লভ এক প্রেস বিবৃতিতে তিনটি প্রশ্ন তুলেছেন। এক, গত একবছরে যে সব ব্যক্তি সুইস ব্যাংকে টাকা জমা করেছেন, তারা কারা দুই, গত সাতবছরে কোন দেশ থেকে কত কালো টাকা কেন্দ্রীয় সরকার ফেরত এনেছে তিন, বিদেশি অ্যাকাউন্ট থেকে কালো টাকা সরানো রুখতে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে মোদী সরকার।
পশ্চিমবঙ্গে একুশের বিধানসভা ভোটে বিজেপির হয়ে প্রচারে এসে অমিত শাহ বলেছিলেন, মোদীর ওই প্রতিশ্রুতি ছিল ‘নির্বাচনী জুমলা’, অর্থাৎ তা ছিল কথার কথা। অথচ একসময় মোদী দেশকে কালো টাকা মুক্ত করতে নোট বাতিল পর্যন্ত করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ যে হয়নি তা এ বছরের রিপোর্টে দেখিয়ে দিল সুইস ব্যাংকের দেওয়া পরিসংখ্যান।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪০ ঘন্টা, জুন ২০,২০২১
ভিএস/এসআইএস