কলকাতা: সূর্যের তাপে পুড়ছে পশ্চিমবঙ্গ। গরমে ঘেমে রীতিমত হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণের।
এর মধ্যে হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, চলমান চৈত্রে রেকর্ড গরম পড়বে পশ্চিমবঙ্গে। আগামী কদিনের মধ্যেই কলকাতার তাপমাত্রা ছোঁবে ৪০ ডিগ্রিতে। বইতে পারে ‘লু’।
তারই মধ্যে রমজান। মূলত, রোজার মাসে কলকাতায় যাতায়াত বাড়ে বাংলাদেশিদের। এক তথ্যমতে, বর্তমানে ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি অবস্থান করছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। তার ৪০ শতাংশ আছে কলকাতায়। সিংহভাগ এসেছেন বিমানে করে। পাশাপাশি বেনাপোল-হরিদাসপুর (পেট্রাপোল) অর্থাৎ সড়ক ধরে ভারতে আসার সংখ্যাটা প্রতিদিন ৩৫০-৪০০ জন। জানা গেছে, রমজানের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই সড়ক পথে ঢল নামবে।
সেই আশায় প্রস্তুত হচ্ছেন কলকাতার ব্যবসায়ীরাও। বিশেষ করে কলকাতার নিউমার্কেট। কারণ প্রতিবার ঈদের আগে কলকাতায় যে ব্যবসাটা হয়ে থাকে তার অনেকটাই বাংলাদেশি কেন্দ্রিক। গত দুবছর কারোনা কারণে বর্ডার বন্ধ থাকায় ওই সময়টায় মন্দা গেছে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের। তবে এবার ভারতে করোনা বিধিনিষেধ উঠে যাওয়া এবং বর্ডার খুলে যাওয়ায় বাড়তি পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
শনিবার (২ এপ্রিল) সেখানে গিয়ে দেখা গেল, কলকাতার নিউমার্কেট এখন ঈদের হাটে পরিণত হয়েছে। বিকেল থেকেই কাতারে কাতারে মানুষ আসছেন কেনাকাটা করতে। প্রতিবার এখানে এত তাড়াতাড়ি বেচাকেনা শুরু হয় না। এবার ব্যতিক্রম! বাংলাদেশিদের সঙ্গে এই প্রথম দেখা গেল ঈদের অনেক আগেই স্থানীয়রাও মেতেছেন কেনাকাটায়।
বনানী থেকে এসেছেন রেশমা। তার কথায়, দুই বছর বাদ দিলে এই সময়টায় প্রতিবারই আসি। এবারও এসেছি। ঈদের কেনাকাটা কলকাতা থেকেই করি। থ্রি-পিস থেকে বাচ্চাদের পোশাক, জুতো, মশলাপাতি এমন কী হলদিরামের সেমাই সব এখান থেকে নিই। সবে শ্রী লেদার্স থেকে ১০ জোড়া জুতো, স্যান্ডেল কিনেছি। এখন দেখছি থ্রি-পিস। আরও কদিন আছি। ঘুরে কিনবো। বাজার কেমন? রেশমার উত্তর, 'রিজেনেবল! এখানে দাম বাড়েওনি-কমেওনি।
দোকানের অন্যদিকে মাথা ঘোরাতেই চোখ গেল উত্তরার মোমেনার দিকে। ভিডিও কলিংয়ে চলছে কথোপকথন। 'দেখ এটা পছন্দ হয় কিনা! এটা নিতে চাই তোর জন্যে। ' ওপারের প্রশ্ন, এর আর কি কি রঙের আছে। ' ফোন রাখতেই জানতে চাইলাম, ঈদ তো দেরি আছে, এত তাড়াতাড়ি কেনাকাটা? তার জবাবে বললেন, চিকিৎসার জন্য এসেছি। তারই মাঝে কেনাকাটা। এগুলো পাঠিয়ে দেব একজনের হাত দিয়ে। যাকে দিচ্ছি সে আবার বিদেশ চলে যাবে।
থ্রি-পিস বিক্রেতা রাজেশ তিওয়াড়ি বলেন, দু'বছর পরে এবছর বাজারে বাড়তি চাহিদা থাকবে জানি। সেভাবেই স্টক করেছে সবাই। মহিলাদের ফ্যাশানেও এসেছে পরিবর্তন। সারারা, ঘারারা সেল তো আছেই। তবে এবার বাড়তি সংযোজন অরগাঞ্জা। এগুলো কাটছে ভালো। দাম সাধ্যের মধ্যে।
সাধরণত স্থানীয় মুসলিমরা কেনাকাটা শুরু করেন রমজানের মাঝামাঝি সময় থেকে। তবে এবার অনেক আগেই নেমে পড়েছেন কেনাকাটায়। পার্ক সাকার্সের বাসিন্দা সাবিরা। একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। পরিবারের সঙ্গে নিউমার্কেটে এসেছে। তার কথায়, দুবছর বাসায় থেকে ঈদ করেছি। এ বছর আর নয়। তাই বাড়তি পিপারেশনের জন্য একটু আগেই আসা। একই মত আয়েশার। কলকাতার অপর একটি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল, রিপন স্ট্রিট থেকে এসেছেন তিনি। তার কথা, এখনই সব কিনব না। বাজারে নতুন কি এলো? তাই দেখতে এসেছি। পছন্দ হলে কিনবো।
তবে শুধু সুজ্জিত দোকান নয়। ফুটপাতও জমে উঠেছে আগের মত। সাধারণত নিউমার্কেটে কেনাকাটা শুরু হয় পহেলা বৈশাখ থেকে। তবে এবার রোজার মাস আর চৈত্র সেলের মধ্যদিয়ে আগের ছন্দে ফিরেছে কলকাতার নিউমার্কেট। এক কথায় বলা যায়, রোজার মাসে প্রাণ ফিরেছে কলকাতার নিউমার্কেটে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২২
ভিএস/আরএ