এনিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের পর পাইকারি বাজারে পণ্যের সরবরাহ কমায় বাড়তি দাম।
শনিবার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, মালিবাগ, খিলগাঁও, মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি বাজার ঘুরে এ চিত্র উঠে এসেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, এসব বাজারে পর্যাপ্ত সবজির সরবরাহ রয়েছে। মৌসুম না হলেও বাজারে রয়েছে শীতকালীন সবজি বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর, শসা, টমেটো, বেগুনসহ আরও বিভিন্ন সবজি। এরপরও সবজির দাম বেশ চড়া। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম। মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমলেও বেড়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম।
অন্যদিকে ইলিশের ভরা মৌসুম হলেও এখনও ইলিশের বাজার খানিকটা চড়া, তবে অন্য মাছের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বেড়েছে মিনিকেট চাল, নাজিরশাইল চাল ও খোলা ভোজ্যতেলের দাম। অপরিবর্তিত আছে ডিম ও ডালের দাম।
এসব বাজারে প্রতিকেজি পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঝিঙা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, উস্তা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ থেকে ৯০ টাকা, বেগুন ৫০ থেকে ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শসা ৮০ থেকে ১২০ টাকা, কচুর ছড়া ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, গাজর ৯০ থেকে ১২০ টাকা, বাঁধাকপি ও ফুলকপি প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচাকলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা হালি, লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ৯০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতি পিস ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
শান্তিনগর কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের আগে পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ থাকলেও এখন অনেকটা কম। সরবারহ কম থাকায় অনেক আড়ৎ বন্ধ আছে। তাই দাম কিছুটা বাড়তি। তার মতে, কয়েকদিন পর বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়তে পারে, তখন দাম কমবে।
তবে তার কথার সঙ্গে এতমত না লাইলী বেগম নামে এ বাজারের নিয়মিত এক ক্রেতা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখন শীত না হলেও শীতের সব সবজি পাওয়া যাচ্ছে, তাহলে দাম বেশি হবে কেন? আবার বাজারে কোনো সবজির ঘাটতি নেই। এখানে ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফা লাভের আশায় নিজেরাই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। সরকারিভাবে বাজার তদারকি করলে সবকিছুর দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে জানান তিনি।
বেশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মসলাজাতীয় পণ্য। এসব বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে ৫৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। একইভাবে কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২৫ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে রসুন। এসব বাজারে দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা, ভারত থেকে আমদানি করা রসুন ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া প্রতিকেজি আদার দাম বেড়েছে ১০ টাকা। দেশি আদা ২০০ থেকে ২১০ টাকা, আমদানি করা আদা (মোটা) ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এদিকে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরের কাঁচা মরিচ এখন ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এসব বাজারের মসলা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের পর নতুন করে বাজারে মালামাল না আসায় সংকট দেখা দিয়েছে। এতে মোকামে সব পণ্যের দাম চড়া হওয়ায় খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
বাজারে দাম কমেছে সব রকম মুরগির। এসব বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করতে দেখা গেছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা কেজি দরে, লেয়ার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, সোনালি মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাড়তি গরু ও খাসির বাজার। ঈদের আগে এসব বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি দরে, খাসির মাংস ৮০০ টাকা আর মহিষের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকা কেজি দরে।
খিলগাঁও বাজারের মাংস ব্যবসায়ী শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের আগে গরুর সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কম ছিলো। এখন গাবতলী বাজারের হাঁসিল খরচ বেড়েছে, গরুর আমদানির চেয়ে মাংসের চাহিদা বেশি হওয়ায় দাম বাড়তি।
অন্যদিকে বাজারে মিনিকেট চাল কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে খুচরা মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা কেজি দরে। কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে খোলা ভোজ্যতেল (সয়াবিন) বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা কেজি দরে। তবে বোতলজাত তেলের দাম আগের মতোই আছে। অপরিবর্তিত আছে ডিম ও ডালের বাজার।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৯
ইএআর/জেডএস