জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় দুটি লেকটি শুকিয়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সিন্ডিকেটের অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করবে এ কমিটি।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল খায়ের বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।
পানি সেচে মাছ ধরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন ও সুইমিং পুল সংলগ্ন লেক দুটি শুকিয়ে যায়। এর মধ্যে মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন লেকে নিয়মিত পাখির আনাগোনা ছিল। লেকের পাশে অতিথি পাখি ও তাদের বাসস্থান রক্ষায় সাইনবোর্ড লাগানো থাকলেও পানি না থাকায় এ বছর লেকটিতে পাখি বসতে পারছে না।
একই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় লেকটিরও। সুইমিং পুল সংলগ্ন এ লেকটিতে ইজারাদার পানি সেচে মাছ ধারার পর যথা সময়ে বাঁধ না দেওয়ায় শুকিয়ে গেছে। শুকনো এ লেকদুটিতে এখন চরছে গরু, ছাগল।
লেক দুটির পানি পাশের এলাকাগুলোতে চলে যাওয়ার পর গত ৬ ডিসেম্বর থেকে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে প্রশাসন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, লেক দুটি শুকিয়ে যাওয়ায় প্রকৃতির অসংখ্য পোকামাকড় ও ছোট ছোট প্রাণী মারা গেছে। ফলে ধ্বংস হয়ে গেছে সেখানকার জীববৈচিত্র্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শিগগিরই এ লেক দুটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
আধিপত্য, বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষক সমাজ ব্যানারে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ উদ্যানের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের লেক দুটি বর্তমানে মৃতপ্রায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় লেকটি এখন গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
দক্ষিণ পাশের জামসিং গ্রামের দিকে লেকটির পাড় ভাঙা ও পানি সেচে মৎস্য শিকার করায় এটি শুকিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংবেদনশীল হওয়ার কথা থাকলেও প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতি প্রশাসনের কোনো নজর নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিসরেই লোভের বলি হচ্ছে পরিবেশ ও প্রকৃতি। ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
তারা বলেন, কিসের বিনিময়ে দুটি লেক ধ্বংস করা হয়েছে? এর সঙ্গে দায়ী ব্যক্তি কারা? তাদের শাস্তি নিশ্চিত করবে কে? আমরা বুঝতে পারি, বিশ্ববিদ্যালয়ে অবক্ষয়ের বহিঃপ্রকাশ এটি।
আমরা লক্ষ্য করেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের সবচেয়ে বড় এ লেকটি উদ্ভিদ উদ্যান সংলগ্ন এলাকায় একটা নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবে কাজ করতো। কিন্তু লেকটিকে শুকিয়ে ফেলায় বর্তমানে অত্র এলাকায় নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
এই অবস্থায় আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই লেকগুলির মৃত্যুর জন্য দায়ী।
শিক্ষরা বলেন, প্রশাসনকেই লেক দুটির সংস্কার সাধন করে পানি ভরার মাধ্যমে একে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে এবং জীববৈচিত্র্যের উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ইজারাদারেরা লেকে বীজ মৎস্য ধ্বংস করতে বিষ প্রয়োগ করেন, যা জীববৈচিত্র্য রক্ষার সম্পূর্ণ বিরোধী। লেক ইজারা দেওয়া সম্পূর্ণরূপে বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি অবিলম্বে পরিবেশ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। বাণিজ্যিকরণের হাত থেকে বাঁচাতে হবে পরিবেশ প্রতিবেশকে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন নাসিম আখতার হোসাইন, আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী, রায়হান রাইন, মানস চৌধুরী, স্বাধীন সেন, পারভীন জলী, এ টি এম আতিকুর রহমান, মোহা. মুজিবুর রহমান, কে এম মহিউদ্দিন, সৈয়দ নিজার আলম, রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা, মো. আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল খায়ের বাংলানিউজকে বলেন, লেকের পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিন্ডিকেটের অনুমোদন পেলেই কমিটি কাজ শুরু করবে।
তিনি আরও বলেন, লেকটি সংস্কারের জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। টাকা পেলেই লেকটি সংস্কার করা হবে। লেকটি অতিথি পাখি বসার জন্য গড়ে তোলা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উদ্যানতত্ত্ববিদ মো. নুরুল আমিন বলেন, ভেঙে যাওয়া বাঁধটি নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামীতে বৃষ্টি হলে আবার লেকটি ভরাট হবে। পানির চাপে বাঁধ ভেঙে গেছে।
কিন্তু বাঁধ কেটে পানি সেচে মাছ ধরা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৪