ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা, বিক্ষুব্ধ ইবি শিক্ষার্থীরা

ইবি করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২০
হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা, বিক্ষুব্ধ ইবি শিক্ষার্থীরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ইবি: আবাসিক হল বন্ধ রেখে অনার্স ও মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। গত ২২শে ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

 

প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত অমানবিক আখ্যায়িত করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গত ২২শে ডিসেম্বর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) নিন্দার ঝড় বইছে। শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের এ অমানবিক সিদ্ধান্ত থেকে বেরিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন। তারা হল খোলা রেখেই পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।  

পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকরাও সীমিত আকারে হল খোলা রেখে পরীক্ষা নেওয়ার আহবান জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।

এদিকে আবাসিক হল খুলে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রমৈত্রীসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন।  

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) থেকেই শাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে হল খোলার দাবি জানিয়েছেন। ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী সাংগঠনিকভাবে হল খোলার দাবিতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন।  

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় আবাসন সুবিধা পর্যাপ্ত নেই। তাছাড়া কেবল পরীক্ষাকালীন মেস বা বাসা ভাড়া পাওয়া সহজ হবে না। সবার পক্ষে কুষ্টিয়া বা ঝিনাইদহ শহর থেকে এসে পরীক্ষা দেওয়াও কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। অনেক ক্ষেত্রে সেখানেও থাকার জায়গার ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে না। কারণ মালিকপক্ষ অল্প কয়েকদিনের জন্য বাসা ভাড়া দিতে চান না।  

অন্যদিকে করোনার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর পারিবারিক ও ব্যক্তিগত উপার্জান কমে গেছে কিম্বা বন্ধ। ফলে মেস বা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা তাদের অর্থনৈতিক সমস্যাও সৃষ্টি করবে। এছাড়াও মেয়েদের জন্য বেশি জটিলতা সৃষ্টি হবে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তার ঘাটতিও সৃষ্টি হতে পারে।  

নেতারা আরও বলেন, ‘আবাসিক হলগুলো খুলে না দেওয়ার জন্য করোনা সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে। সেটা কয়েকজন এক সঙ্গে মেসে বা বাসায় একই রুমে থাকার ফলেও হতে পারে। বরং সেখানে আরও বেশি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। আশাকরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিভাবে হল খোলা যায় সেই গাইড লাইন তৈরি করে হল খোলার ব্যবস্থা করবে। ’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্র মৈত্রীর নেতারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলবে। আবাসিক সুবিধা ছাড়া পরীক্ষা গ্রহণ করলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হবে। এতে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের বিস্তার আরো ঘটবে। এছাড়াও প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রেখে অনলাইনে সম্পন্নকৃত কোর্স সমূহের রিভিউ পাঠদান না করে চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান করেছেন নেতারা।

এছাড়া ছাত্র মৈত্রীর নেতারা আবাসিক হলসমূহ খুলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে ০৯ (নয়) দফা প্রস্তাবনাও দিয়েছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবাসিক হল চালু রেখে পরীক্ষা গ্রহণ করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি যেমন কমবে, তেমনই শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হবে। আবাসিক হলসমূহ বন্ধ রেখে পরীক্ষা গ্রহণ করলে প্রাণঘাতি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কোনো শিক্ষার্থীর ক্ষতিসাধন হলে এর দায় কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এড়াতে পারে না বলেও উল্লেখ করেন তারা।

শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম সাংবাদিকদের বলেন, এ ব্যাপারে আমিও ব্যক্তিগতভাবে পজিটিভ। তবে একাডেমিক কাউন্সিলের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, একার পক্ষে এটা সম্ভব না। তবে আমরা সরকারের সবুজ সংকেতের দিকে চেয়ে আছি। ইউজিসির সঙ্গেও আমি এ ব্যাপারে কথা বলব।

গত ২২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৯ তম একাডেমিক কাউন্সিলে হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হলো, বিভাগ চাইলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) নিতে পারে, আবাসিক হল বন্ধ থাকবে, থাকবে পরিবহন সেবা,  কোনো শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হলে দায় নেবে না প্রশাসন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।