টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ভাইস-চ্যান্সেলর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন নেতারা।
বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম মজনু ও সাধারণ সম্পাদক ড. ইকবাল বাহার বিদ্যুৎ অভিযোগপত্রটি জমা দেন। লিখিত ওই অভিযোগে রেজিস্ট্রার ড. মোহা. তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৫টি অভিযোগ আনা হয়।
অভিযোগে জানা যায়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গত ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী পরিষদ নির্বাচন। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রেজিস্ট্রার ড. মোহা. তৌহিদুল ইসলামকে নিয়ে কর্মকর্তাদের মাঝে প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার, বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি ও সরকারি সম্পদ ব্যক্তিগত কাজে অপব্যবহারসহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ এবং তার অনিয়ম, অসদাচরণ ও স্বেচ্ছাচারিতার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মকর্তাদের মাঝে তার প্রতি আস্থাহীনতা, বিশ্বাসভঙ্গতা এবং অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
অভিযোগগুলো হলো- গত ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে মাভাবিপ্রবি’র পক্ষ থেকে কোনো প্রকার নোটিশ না দেওয়া বা কর্মসূচি না নেওয়া। এ ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছে সংগঠনের নেতারা। তাদের মতে তার এহেন ঘটনা উদ্দেশ্য প্রণোদিত, ঔদ্ধত্ব্যপূর্ণ এবং অবমাননাকর। তার অতীত কার্যাবলী থেকেও আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি ও তার কার্যক্রম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পরিপন্থী।
এছাড়াও অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে তিনি ও তার পছন্দমত প্যানেলের প্রচার কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ও চালক ব্যবহার। অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনী প্রচার ও ভোট চাওয়ার কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল টেলিফোন ব্যবহার। কর্মকর্তাদের প্রমোশন/আপগ্রেডেশন/পছন্দমত জায়গায় বদলির প্রলোভন দেখিয়ে ভোট প্রার্থনা। কর্মকর্তাদের লোকজন দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ব্যক্তিগত নথির জটিলতা বের করে বিপদে ফেলার হুমকি। ভোট কারচুপি ও ক্ষমতা অপব্যবহার করে ফলাফল নিজ প্যানেলের পক্ষে নেওয়ার দম্ভোক্তি।
বিগত ৫ বছর অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর ও কোষাধ্যক্ষ না থাকায় পিপিআর সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে শুধুমাত্র ক্ষমতা ও আর্থিক সুবিধার জন্য টেক কমিটির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহন। যা পিপিআর অনুযায়ী ফৌজদারী অপরাধ (কপি সংযুক্ত)। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরএফকিউ পদ্ধতিতে ক্রয়ের জন্য কোনো কমিটি কখনো আলাদাভাবে গঠিত না থাকলেও তিনি নিজেকে সভাপতি করে টেক কমিটি পুনর্গঠন করেন (কপি সংযুক্ত)। ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে গ্রুপিং ও কোন্দল সৃষ্টির লক্ষ্যে কতিপয় পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে তার অফিসে সারাক্ষণ পরিবেষ্টিত থাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অফিসসমূহ ও বিভিন্ন কমিটিতে তার পছন্দের ও আজ্ঞাবাহী ব্যক্তিদের পদায়ন ও বদলি করে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা। কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার আচরণ ও সম্বোধন অত্যন্ত আপত্তিকর, অসম্মানজনক ও চাকরিবিধি পরিপন্থী। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি কর্মকর্তাদের প্রতি হয়রানি অব্যাহত রেখেছেন। ভাইস-চ্যান্সেলর স্যারকে অবহিত না করে তথ্য গোপন করে কর্মকর্তাদের আপগ্রেডেশন বোর্ড শুরুর পূর্বে বাস্তবায়িত বিদ্যমান স্কেলে আপগ্রেডেশন প্রদানে জটিলতা তৈরি করে ভাইস-চ্যান্সেলরকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করার অপচেষ্টা। বর্তমান সময়েও বিভিন্নভাবে প্রশাসনে অস্থিরতা সৃষ্টি ও নিজস্ব বলয় তৈরির অপচেষ্টা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পেনশন সংবিধিতে পূর্বতন কর্মস্থলে প্রাপ্ত বেতনের ১০ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে অতীত চাকরি গণনা করার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর) মহোদয়ের নিকট তথ্য গোপন করে ১০ শতাংশ অর্থ জমা না দিয়েই রেজিস্ট্রার মহোদয় তার অতীত চাকরি গণনার বিষয়টি অনুমোদন করে নেন বলে জানা যায়। যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেনশন সংবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কর্মকর্তাদের প্রতি নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তারা। রেজিস্ট্রার ড. মোহা. তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু ও গতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ড. মোহা. তৌহিদুল ইসলামের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একটি চিঠি নিয়ে এসেছিলেন। তবে জরুরি মিটিংয়ে আমি ঢাকায় চলে এসেছি। কি বিষয় আর কার বিরুদ্ধে চিঠিটি দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে আমি স্পষ্ট নই। এর বেশি কিছু বলতে পারবো না। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২২
আরএ