ঢাকা, সোমবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন

কুলিয়ারচর থেকে মাহবুব আলম

আ’লীগ-বিএনপি নয়, লড়াই ‘ইছা-পচার’

মাহবুব আলম ও টিটু দাস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
আ’লীগ-বিএনপি নয়, লড়াই ‘ইছা-পচার’ ছবি: শাকিল/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুলিয়ারচর থেকে: প্রথমবারের মতো দেশে দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পৌরনির্বাচন। এতে কুলিয়ারচরে নৌকা আর ধানের শীষ নয়, ভোট হবে ‘ইছা ও পচা’ পরিবারের মধ্যে।


 
এই দু’পরিবারই ঘুরে-ফিরে বিগত সময়ে ‘শাসন’ করছে কুলিয়ারচর। তাই এবারও আওয়ামী লীগ, বিএনপি নয় ব্যক্তি ইছা-পচাকেই মুখ্য মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা।

বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) কুরিয়ারচর সরেজমিনে ঘুরে এমনটাই জানা গেলো। কুলিয়ারচর বাজারের লঞ্চঘাটের একটি পিঠার দোকানে বসে কথা হয় ব্যবসায়ী শেখ মো. শোয়াইবের সঙ্গে। এখানেই তার জন্ম। বললেন, আমাদের পৌরসভায় নির্বাচন মানে ‘ইছা ও পচা’ দুই পরিবারের লড়াই। এখানে দল বিষয় নয়, দুই পরিবারই প্রধান।

‘পচা পরিবারের সময়েও উন্নয়ন হয়েছে, বর্তমান সরকারের মানে ইছা পরিবারের সময়েও উন্নয়ন হয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগেই নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করেছেন তারা। তবে হাল আমলে পচার সুনামের পাল্লাটা ভারি’।

এবার কুলিয়ারচরে পৌর মেয়র প্রার্থী আছেন দু’জন, এরমধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী হলেন- আবুল হাসান কাজল; তিনি ইছা পরিবারের সদস্য। অন্যদিকে, পচা পরিবারের সদস্য বিএনপির মনোনীত শাফি উদ্দিন।

ইছা পরিবারের কর্তা মুছা মিয়া। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল হাসান কাজল ‘ইছা’ পরিবারের এবং বিএনপির প্রার্থী শাফি উদ্দিন হচ্ছেন ‘পচা’ পরিবারের। মুছা মিয়া কুলিয়ারচরে প্রথম কোল্ড স্টোরেজ করে দেশ তথা বিদেশ চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রফতানি শুরু করেন। এক পর্যায়ে দেশে তিনি মাছ রফতানি করে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ীতে পরিণত হন। তাই স্থানীয় লোকজন তাকে ‘ইছা’ পরিবার অথাৎ চিংড়ি পরিবার বলে ডাকে।

মুছা মিয়ার ছেলে উমতিয়াজ বিন মুছা বতমানে কুলিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবুল হাসান কাজল মুছার মিয়ার ছোট ভাই, আর ইমতিয়াজের চাচা।

অন্যদিকে, স্থানীয়দের ভাষায় পচা পরিবারের খ্যাতি এসেছে ‘আলমের ১নং পচা সাবান থেকে’। আলম গ্রুপের অন্যতম পণ্য পচা সাবান থেকেই শরীফুল আলমের পরিবারের আগে তকমা লেগেছে ‘পচা’। স্থানীয়রাও সেই পচা নামেই তাকে ডাকেন কিংবা চেনেন।

পৌরশহরের দাসপাড়া রোডে সন্ধ্যার পর কথা হয় স্থানীয় বরখারচর গ্রামের বাসিন্দা মো. মিলনের সঙ্গে। তিনি বললেন, বর্তমান মেয়র ইছা পরিবারের, আবুল হাসান কাজল। আর পচা পরিবারের প্রার্থী শাফি উদ্দিন বিএনপির। দুইজনের স্থানীয় নাম-ডাক যেমন আছে দলীয় প্রভাবও। শেষটা কার হয় সেটাই দেখার বিষয়।

জানা যায়, ‘গ’ অর্থাৎ তৃতীয় শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু হয় কুলিয়ারচর পৌরসভার। ওই সময় ৯ মাস আবুল হাসান কাজল পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে নির্বাচন হলে প্রথম পৌর মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।

দ্বিতীয় নির্বাচনে পচা পরিবার বা শরীফুল আলমের আস্থাভাজন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল মিল্লাত মেয়র হন। তবে সর্বশেষ ২০১১ সালের নির্বাচনে ফের মেয়র হন কাজল। মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় ভোটার আবু তালেব বাংলানিউজকে বলেন, প্রচারণা দু’জনেই সমান চালাইতেছে। মুখে মুখে নৌকার কথাও হুনতাছি। তবে মনে অইতাছি জয় ধানের শীষেরই হবে। এইবার নতুন লোকরে চেয়ারম্যান (মেয়র) হরতাম চাই’।

তার সঙ্গে যোগ করে স্থানীয় আবুল কাশেম (৫০) বলেন, হেইবার তো হেইলা (আবুল হাসান) হইছুনই, এইবার নতুন বেডারে দিয়া দেহি। আর জনগণও নতুন বেডার কথাই কইতাছে’।

এদিকে স্থানীয় লোকজন বলেছেন, কুলিয়ারচরে এ পর্যন্ত নির্বাচনকে ঘিরে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভবিষ্যতে এই শান্তিপূর্ণ অবস্থানই বজায় থাকবে। আর শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল মিল্লাত বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি জয় পাবে। জনগণের কাছ থেকে সে সাড়াই পাওয়া যাচ্ছে।

কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, পৌরসভায় মোট ২১ হাজার ৪১৪ জন ভোটার রয়েছেন।

এর মধ্যে, পুরুষ ১০ হাজার ৮৮৭ এবং ১০ হাজার ৫২৭ জন নারী ভোটার রয়েছেন। এ পৌরসভার মোট ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১০টি। এবারের পৌর নির্বাচনে কুলিয়ারচরে ৩৫ জন কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী আসনে ১২ জন অংশ নিচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৯ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
এমএ/আইএ

** ‘হারা বছর হবর নাই, এবার বুইজ্জা হুইন্না ভুট দিয়াম’
**  ডিজিটাল নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীরা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।