ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

ভোটের হাওয়া

ফেনী-৩ আসনের সমীকরণ নানা রকম

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩
ফেনী-৩ আসনের সমীকরণ নানা রকম

ফেনী: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরগরম ফেনী-৩ আসনের রাজনীতির মাঠ। এক সময়ের বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনে নির্বাচনের সমীকরণ নানা রকম।

ইতোমধ্যেই নির্বাচনী আমেজে মাঠে নেমেছে সরকার দলের নেতারা। জয়ের আশা করছে জাতীয় পার্টিও। আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে নীরব প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনও।

সমুদ্র ও নদীস্নাত ফেনী-৩ আসনটি সোনাগাজী ও দাগনভুঞা নিয়ে গঠিত। ভোটের কয়েকমাস বাকি থাকলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এখানে রাজনীতির মাঠ বেশ সরগরম। সবাইকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি ভোটারদের দোয়া চেয়ে রং-বেরংয়ের ব্যানার ফেষ্টুন ছাপিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

জোটগত সমীকরণে ২০১৮’র জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলেও এবার কী হবে তার হিসেব হচ্ছে নানা দিক থেকে। ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দাবী করে আগামী নির্বাচন জয়ে জাতীয় পার্টি আশাবাদী হলেও এবার মাঠ ছাড়তে রাজি নারাজ আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যেই নির্বাচনী আমেজে মাঠে নেমেছে দলটির হাফ ডজন নেতা।

এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন হুমায়ুন, সাবেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও সৌদি আরবের জেদ্দা আওয়ামী লীগ নেতা রহিম উল্লাহ, যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) সভাপতি আবুল বাশার, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মঞ্জুরুল আলম শাহীন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন।

এছাড়াও রয়েছেন কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও এনবিআর গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট এম শাহজাহান সাজু।

প্রার্থী হতে চান জেলা যুবলীগ সভাপতি ও দাগনভূঞা উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন ও সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, সোনাগাজীর পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন প্রমুখও।

আসনটিতে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী হাফ ডজনের বেশি নেতা। সবাই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে চষে বেড়াচ্ছেন মাঠ। দোয়া চাচ্ছেন ভোটারদের, সক্রিয় করছেন নিজেদের নেতাকর্মী ও ভক্ত-অনুরাগীদেরও।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় দলের সোনাগাজী উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আসনটিতে আওয়ামী লীগের অবস্থান আগের যেকোনো সময় থেকে শক্তপোক্ত। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর নেতৃত্বে এটা এখন আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি। এদিকে দলের অন্য প্রার্থীরাও বলছেন প্রার্থী যাকেই দেওয়া হোক এ আসনে নৌকার প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়ী হবেন।

জোটগত সমীকরণে ২০১৮’র জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলে তখন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। বিগত ৫ বছরে ব্যাপক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে এবারও সংসদ সদস্য হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী জাতীয় পার্টির এ নেতা। তিনি বলেন, উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। জনপদের অনেক বড় বড় প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হয়েছে। আরও অনেকগুলো বাস্তবায়ন হবে। উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে ভোটারসহ সর্বসাধারণের ফের সমর্থন প্রয়োজন।

দলের জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হেসেন বলেন, জাতীয় পার্টি এ আসনসহ পুরো ফেনীতে আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। আগে কোনো কর্মসূচিতে হাতে গোনা ২০ জন এলে এখন সেখান জেনারেল মাসুদ চৌধুরীর ডাকে হাজার হাজার নেতাকর্মীর সমাগম ঘটে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সে কারণেই জয়ের বিষয়ে আমরা আশাবাদী।

রাজনীতি ও ভোটের মাঠে অন্যরা সক্রিয় হলেও এক সময়ের ঘাঁটিতে কোনো হেলদোল নেই বিএনপির। জেলার সাবেক দুই সভাপতি মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দার ও মোশাররফ হোসেনের মৃত্যুর বহু বছর পরও অতীতের দলীয় বিভাজনের জের টানতে হচ্ছে সবাইকে। ফলে আসনটিতে অনেক স্থানীয় নেতাকর্মীই কিছুটা নিষ্ক্রিয় অথবা রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়েছেন। তবে নেতারা জানিয়েছেন আন্দোলনের প্রশ্নে কোনো বিরোধ নেই। এক দফার আন্দোলনে তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ।

এ প্রসঙ্গে কথা হলে সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, বিএনপির একটাই লক্ষ্য এক দফা। আওয়ামী লীগের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেই তারা ভোটে আসবেন। তিনি বলেন, এই আসনটি বিএনপির ঘাঁটি অবাধ, নিরপেক্ষ ভোট হলে এখানে বিএনপির প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়ী হবে।

তবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোট হলে সেক্ষেত্রে নির্বাচনী প্রার্থী হিসেবে কয়েকজনের নাম সামনে আসছে। তারা হলেন- দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) নাসির উদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহানা আক্তার শানু, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল লতিফ জনি, আমেরিকান প্রবাসী বিএনপি নেতা সোলায়মান ভূইয়া ও দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আকবর হোসেন, ওয়ান ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সাঈদ হোসেন চৌধুরী। এদের মধ্যে আকবর হোসেন বিএনপি থেকে ও সাঈদ হোসেন চৌধুরী স্বতন্ত্রভাবে গত একটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।

ফেনী-৩ আসনর নির্বাচনকে ঘিরে তলে তলে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বর্তমান জামায়াত নেতা ডা. ফখরুদ্দীন মানিককে এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে রেখে মাঠ গোছাতেও শুরু করেছে তারা।  

পিছিয়ে নেই চোরমোনাই পীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনও। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক ভূঞাঁ বলেন, মাওলানা নুরুল করিম ও হাফেজ হিজবুল্লাহ- এ দুজনের একজনকে প্রার্থী হিসেবে চিন্তা করছেন তারা। নির্বাচনকে ঘিরে মাঠের রাজনীতিকে আরও বেগবান করার কথাও জানিয়েছেন এ নেতা।

আগামী নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা চললেও অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট চান নবীন-প্রবীণ সাধারণ ভোটাররা। জেলার সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসন। এখানে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৯৬ জন। এর মধ্যে নতুন ভোটার সংখ্যা বেড়েছে ৭৯ হাজার ৬৪২ জন।

সাধারণ ভোটাররা বলছেন সংঘাত-রক্তপাতহীন একটি নির্বাচন চান তারা। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হলে তারা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায়। আবু রায়হান নামের নতুন এক ভোটার বলেন, প্রথম ভোটার হয়েছি, কেন্দ্রে গিয়ে নিজের পছন্দমত ভোটটা দিতে চাই। একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোটের আয়োজন করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩
এসএইচডি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।