ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন

মিরকাদিম থেকে সৈয়দ ইফতেখার আলম

দুই আ’লীগের চাপে বিএনপি-জেপি!

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
দুই আ’লীগের চাপে বিএনপি-জেপি! ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মিরকাদিম পৌর এলাকা (মুন্সীগঞ্জ) ঘুরে: পৌরসভার স্থানীয় নির্বাচনকে এখনও ব্যক্তিকেন্দ্রিকই মনে করেন অনেক ভোটার। বিশেষ করে মিরকাদিম পৌরবাসী।

মেয়র প্রার্থীদের প্রতীক দলীয় হলেও দলের চেয়ে ব্যক্তি বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের কাছে।

আসলে পরিস্থিতি এমনই এখানে। কোনো বিশেষ প্রতীক নয়, উন্নয়নের মার্কাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ।

তবে ‘লোকাল পলিটিক্সের’ নানা সমীকরণ আর গুঞ্জন বা অভিযোগের মচমচে রাজনীতির পরিবেশও এখানে নতুন করে তৈরি হচ্ছে নির্বাচনকে ঘিরে।

নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শহিদুল ইসলাম শাহীন। তিনি বর্তমান পৌর মেয়র। দায়িত্বে থাকাকালে মিরকাদিম পৌরসভাকে ‘এ’ গ্রেডে নিয়ে গেছেন। এলাকায় উন্নয়নের অনেক কাজ শুরু করেছেন তিনি- এমনটাই বলছেন স্থানীয়রা। তার জনপ্রিয়তাও ব্যাপক। তবে নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের পাত্র হয়েছেন।

আর আওয়ামী লীগেরও একপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শাহীন দলে যোগ দিয়ে ত্যাগী ও অভিজ্ঞ নেতা ব্যবসায়ী মনছুর আহামেদ কালামের স্থান নষ্ট করেছেন। তার জন্যই ৩০ ডিসেম্বরের (বুধবার) পৌর নির্বাচনে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) মহাসচিব কালাম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি।

শাহীন মনোনয়ন পাওয়ায় কালাম সমর্থক আওয়ামী একাংশের ভোট ভাগ হয়ে যাবে- বলছেন অনেক ভোটারই। তবে এতে কোনো প্রভাব পড়বে না জয়ে- মত শাহীন সমর্থকদের।

এছাড়া শহিদুল ইসলাম শাহীন মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার (মুন্সীগঞ্জ-৩) সংসদ সদস্য (এমপি) অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাশের খুব কাছের লোক। এমপির একটা ‘শুভ কামনা’ তিনি ভোটে কাজে লাগাবেন- সেটাও জানালেন স্থানীয় নেতারা।

তাকে নিয়ে নানা কথা, গুঞ্জন বিষয়ে শহিদুল ইসলাম শাহীন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি উন্নয়নে বিশ্বাসী। গতবারের মতো এবারও মেয়র হয়ে আমাকে উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে। সেজন্যই অামি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছি। আর আওয়ামী লীগে আমি আগে থেকেই ছিলাম। ২০০২ সালেই দলটির সদস্য হই। কিন্তু অানুষ্ঠানিকভাবে এলাম এবারই। সরকার আওয়ামী, আমিও সেই দলের। এতে পৌরবাসীর উন্নয়ন হবে নিশ্চিত’।

ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. সামছুর রহমান দলটির একজন সাধারণ সমর্থক। তাকে ‘অনুরোধ’ করে নির্বাচনে দাঁড় করানো হয়েছে বলে গুঞ্জন পৌরবাসীর মধ্যে। তবে বাস্তবতা হলো, তিনি না দাঁড়ালে এ পৌরসভায় জাতীয়তাবাদী দলের কোনো প্রার্থী হয়তো থাকতেন না। তার পক্ষে কাজ করা বিএনপি কর্মীদের অভিযোগ, প্রচার-প্রচারণায় তাদেরকে মাঠে নানাভাবে প্রতিরোধ করা হচ্ছে। দুই আওয়ামী লীগ (মনোনীত ও বিদ্রোহী) প্রার্থীর জন্য তারা ‘চাপে’ আছেন। শঙ্কা তাদের সুষ্ঠু ভোট নিয়েও।

সামছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার একটাই দাবি- ৩০ ডিসেম্বর (বুধবার) মানুষ যেন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন। কেন্দ্রে যেন কোনো হস্তক্ষেপ কেউ না করেন। জনতা ভোট দিতে আসতে পারলে, ভোটটা ব্যালটে ফেলতে পারলে আমি দ্বিগুণ ভোটে মেয়র নির্বাচিত হবো’।

তিনি আওয়ামী লীগের শাহীনকে নিজের প্রধানতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন। সামছুর রহমান জানালেন, নির্বাচিত হতে পারলে একটি এ গ্রেডের পৌরসভা বলতে যা বোঝায় ঠিক তেমন সেবা-পরিসেবার একটি এলাকা তিনি জনগণকে উপহার দেবেন।

মনছুর আহামেদ কালাম মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী। তার নামের সঙ্গে ‘বিদ্রোহী’ শব্দটি বেশ জোর গলায় আসছে। কারণ, তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক। এছাড়া তিনি মুন্সীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। কালাম নিজেও দাবি করছেন, যুগ যুগ ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেও ছোট্ট এ পৌরসভায় প্রার্থী হতে না পারায় এটি তার প্রতিবাদমূলক প্রার্থিতা।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে রুজি করে এলাকায় এসে তা খরচ করা আমার জনসেবার লক্ষ্য। আমি কোনো ঠিকাদার বা চাঁদাবাজ লোক নই। আমি মেয়র হলে সরকারি সব কাজ পাবেন সাধারণ বেকার মানুষ। ভোটে আমি প্রতিযোগিতা বুঝিয়ে দেবো’।

বিএনপির ভিত্তি নেই দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার শাহীনের সঙ্গে আমার মোবাইল মার্কার’।

৬২ বছর বয়সী মোহাম্মদ হোসেন রেনু। তিনি বাইসাইকেল প্রতীকে লড়ছেন। জাতীয় পার্টির (জেপি-আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) প্রার্থী রেনু মিরকাদিমের প্রথম পৌর মেয়র। অভিজ্ঞ মানুষ। তবে তার পক্ষে তেমন লোক বা কর্মী নেই। নিজেই একা বাড়ি-বাড়ি, দুয়ারে-দুয়ারে যাচ্ছেন- চাচ্ছেন ভোট, দোয়া। আর মাইক নিয়ে একা একাই বক্তব্য রাখছেন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে।

মিরকাদিমে মেয়র প্রার্থী আছেন আরও দু’জন। তবে সরেজমিনে দেখা পাওয়া যায়নি তাদের। স্বল্পমাত্রায় দৌড়ঝাঁপ তাদের- বলছেন ভোটাররা। ওই দু’জন হলেন, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আব্দুল গফুর মিয়া, তার প্রতীক হাতপাখা। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী জামান হোসেনের প্রতীক জগ।

জানা গেছে, গফুর মিয়া ইসলামী আন্দোলনের চাপে এক প্রকার ‘ঠেকায়’ পড়ে প্রার্থী হয়েছেন। জামান হোসেনের কাহিনীও একই রকম। এ নির্বাচন তাদের ‘নামকে পরিচিত’ করার ক্ষেত্র বলেও মন্তব্য করলেন বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভোটার।

মেয়র পদে আসলে লড়াই হবে ত্রিমুখী। যাতে রয়েছেন শাহীন, কালাম ও বিএনপির সামছুর- এমনটাই জানান সাধারণ ভোটাররা।

এখানে ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩১ জন আর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩টি ওয়ার্ডের প্রার্থী ১০ জন।

মিরকাদিম পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সাল কাদের বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা সজাগ আছি- যেন সবাই সমান সুযোগ পান’।
 
ভোটের দিন নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ওয়ার্ড ভিত্তিতে এক প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), এক প্লাটুন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), একজন ছাড়াও অতিরিক্ত চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (হাকিম), একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (হাকিম), পুলিশের মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স সম্পূর্ণ পৌর এলাকার দায়িত্বে থাকবে।

মিরকাদিমে ম্যাজিস্ট্রেট (হাকিম) হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ আনাম সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা কাজ করে যাচ্ছি’।

১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মিরকাদিম পৌরসভা। যার রয়েছে আধুনিক পৌরভবন। রিকাবি বাজারে কার্যালয়। পৌর এলাকার আয়তন ১০ দশমিক ৩২ বর্গকিলোমিটার। ওয়ার্ড ৯টি। মহল্লা ৩৩টি ও মৌজা ১৪টি। মোট ভোটার সংখ্যা ৩৩ হাজার ৫১৪ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৩৯৪ এবং নারী ভোটার ১৬ হাজার ১২০ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৭টি। শিক্ষার হার ৭০ দশমিক ৪৭ শতাংশের ওপরে।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর (বুধবার) দেশের ২৩৪ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হবে। এতে মেয়র পদে ৯২৩ জন এবং কাউন্সিলর পদে ১১ হাজার ১২২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রায় ৭২ লাখ ভোটার নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। দেশব্যাপী ভোটকেন্দ্র থাকছে তিন হাজারেরও বেশি।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
আইএ/এএসআর

** মেগাসিটি হবে মুন্সীগঞ্জ!

** ‘সবার আগে দোকান থেইকা টিভি সরাইসি’
** ‘পৌর ভবনে সুখ-দুখের আলাপকারী চাই’
** মেয়র ঢাকার, না এলাকার তা ‘ফ্যাক্টর’
** ‘মনোনয়ন’ ও ‘চেতনার’ আ’লীগ এবং ‘কোণঠাসা’ বিএনপির লড়াই
** ভোটের আগে ভাই ভাই, ভোটের পরে খবর নাই!
** লক্ষ্য-স্বপ্ন ‘এক’, দৃষ্টি ‘ছয়’
** ভোট দিতে যাবো দলবেঁধে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।