ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন

জামালপুর থেকে এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান

‘আসল খেলা ইলেকশনের আগের রাইতে’

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
‘আসল খেলা ইলেকশনের আগের রাইতে’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জামালপুর সদর পৌরসভা থেকে: আর মাত্র ৯ দিন বাদেই পৌরসভার নির্বাচন। এ নির্বাচনে জামালপুরে মেয়র পদে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের মধ্যেই হবে মূল ভোটযুদ্ধ।

স্থানীয় ভোটাররা সেটাই মনে করছেন।

শীতের জবুথবু ভাব উপেক্ষা করে প্রার্থীরা ভোটের মাঠ দখলে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি চষে বেড়াচ্ছেন পাড়া-মহল্লার অলিগলি। নানা প্রতিশ্রুতির বুলিও আওড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। ধূমায়িত চায়ের কাপে উঠেছে ভোটের গল্পের ঝড়। পৌরসভার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বইছে ভোটের গরম হাওয়া।

রোববার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা নাগাদ পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের গেটপার স্টেশন রোড, ৯নং ওয়ার্ডের ছনকান্দা ছয় রাস্তার মোড়, ১০ নং ওয়ার্ডের বগাবাড়ি, তমালতলা, নয়াপাড়া ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাগেরহাটাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন পরিস্থিতির কথাই জানা যায়।

জামালপুর সদর পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা ও ধানের শীষের বাইরে লাঙল প্রতীকেও প্রার্থী রয়েছেন। তার নাম হাফিজুর রহমান বাদশা। তিনি মুক্তিযোদ্ধা। তবে তাকে নিয়ে ভোটারদের মাথাব্যাথা নেই খুব একটা। তাদের হিসাব-নিকাশের পুরোটা জুড়ে রয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মির্জা সাখাওয়াতুল আলম মনি ও ধানের শীষের প্রার্থী শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন। মনি সাবেক আর মামুন বর্তমান মেয়র।

এ পৌরসভার বিভিন্ন চায়ের দোকান, বাসস্ট্যান্ড, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড ও পাবলিক প্লেসে ভোটের আলোচনায় মজেছেন ভোটাররা। নির্বাচনের হালহকিকত জানতে পরিচয় দিতেই তারা স্বপ্রণোদিত হয়েই ভিড় করছেন। কথা বলতে এগিয়ে আসছেন।

১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জামালপুর সদর পৌরসভার আয়তন ৫৩ বর্গ কিলোমিটার। ১২টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ১৪৬ বছরের প্রাচীন এ পৌরসভা প্রথম দিকে ছিল তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভা। ১৯৯৩ সালে এ পৌরসভা প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়।

এখানে মোট ভোটার ৯৬ হাজার ৩৫৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৬ হাজার ৯১৩ জন। নারী ভোটার ৪৯ হাজার ৪৪৪ জন। ভোট কেন্দ্র ৪২টি।

জামালপুরের বুক চিড়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। এ নদের ভাঙন আর বন্যার কারণে এক সময় জামালপুর ছিল অভাবী জনপদ। কিন্তু সময়ের ঘূর্ণায়মাণ স্রোতে এ অবস্থার পরিবর্তন হয়। বর্তমানে জামালপুর সমৃদ্ধ এক এলাকা।

স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এ পৌরসভা নির্বাচনে মূল লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর মধ্যে। দু’দলের দু’মেয়র প্রার্থী মির্জা সাখাওয়াতুল আলম মনি ও শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন ভোট রাজনীতিতে অভিজ্ঞ। দু’বার করে তারা এখান থেকে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন।

পৌর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পৌরসভার বিভিন্ন সড়ক, পাড়া-মহল্লার অলিগলি ছেয়ে গেছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাদা-কালো পোস্টারে। শীতের কুয়াশা থেকে পোস্টার রক্ষা করতে মোড়ানো হয়েছে পলিথিন।

স্থানীয় পৌর বাসিন্দাদের অভিযোগ, গোটা পৌর এলাকা যেন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। জলাবদ্ধতা, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, যানজট, মরণব্যাধি মাদকের সর্বনাশা ছোবলসহ নানা সমস্যায় ভারাক্রান্ত এখানকার বাসিন্দারা।

পৌর শহরের স্টেশন রোড এলাকা থেকে নয়াপাড়া এলাকায় অটোরিকশা চেপে যাবার সময়েই চালক চাঁন শেখের কাছে জানতে চাওয়া হয় কেমন প্রার্থীকে ভোট দেবেন?  মৃদু হেসে তিনি বললেন, ‘অহনও কোনো চিন্তা করি নাই। দু’একদিন আগে মতলব বইদলা যায়। বর্ষা মৌসুমে রাস্তাঘাট পানিতে ডুইব্যা যায়। এই অবস্থা থেইক্যা বাঁচবার চাই। যে বাঁচাইবো বুঝমো, তারেই ভোট দিমু। ’

প্রার্থীরা খরচাপাতি কেমন করছেন, নির্বাচনী অর্থকড়ি পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে মাথা নাড়িয়ে না করেন চাঁন। ভরাট কণ্ঠে তিন বলেন, ‘টেহা লইয়া মাথা বেচুম না। দু’একজনের সঙ্গে বুইজ্জা তারপর ভোট দিমু। ’

স্থানীয় তমালতলা এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ফাঁকা। তৃতীয় তলার এ কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলাতেই ‘পালকী’ নামের একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আব্দুস শহীদ। নিজের পরিচয় দিলেন একটি বিমা কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী হিসেনে।

নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পছন্দের প্রার্থীই তো নাই। দু’প্রার্থী দু’বার করে মেয়র হয়েছেন। সেই হিসেবে উন্নয়ন কই? ৬ মাসে একবারও শহরের ড্রেনগুলো পরিষ্কার হয় না। ইকবালপুর, নয়াপাড়া, মিয়া পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা বর্ষা মৌসুমে পানিতে ডুবে থাকে। ’

‘এ খালের দুর্গন্ধে টেকা যায় না। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ। উন্নয়নের ধারা কেমন, নিজের চোখেই দেখে যান’- আঙুল দিয়ে সামনের বংশাল খাল দেখিয়ে আব্দুস শহীদ এ কথা যোগ করেন।

এ খালের সঙ্গে লাগা একটি মুদির দোকানে বসে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন স্যুট-বুট পরা আব্দুল জলিল। সঙ্গে আছেন আরও বেশ কয়েকজন। পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়স হবে জলিলের। শিক্ষিত এ ভোটার নির্বাচনী আলাপ তুলতেই বেশ আগ্রহ নিয়েই উঠে দাঁড়ালেন। পয়েন্ট আকারে বলতে থাকলেন, ‘সরকারি দলের প্রার্থী মেয়র হলে নাগরিক সুবিধা বাড়বে। কিন্তু বিএনপি’র প্রার্থীর ক্ষেত্রে এটা বাস্তবায়ন করা কঠিন। ’

গ্রামীণ পরিমণ্ডলে এ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ছনকান্দা ছয়রাস্তা মোড় এলাকা। ময়মনসিংহ থেকে মাইক্রোবাস করে জামালপুর সদর পৌরসভার এ এলাকা অতিক্রম করার সময়েই চোখ আটকে গেলো বেশ কয়েকটি চায়ের দোকানে ছোট-বড় জটলায়।

ধোঁয়া উড়া চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে নির্বাচনী বিচার বিশ্লেষণ করছেন গোলাম মোস্তফাসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। গাড়ি থামিয়ে আড্ডায় যোগ দিতেই কানে আসলো নৌকা আর ধানের শীষের লড়াইয়ের খবর। উচ্চ স্বরে মোস্তফা বলছেন, ‘নৌকা আর ধানের শীষের কনটেস্ট চলতাছে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই অইবো। ’

পাশের একজন বললেন, ‘মাঠ উঠতাছে-নামতাছে। প্রথম দিকে নৌকার প্রার্থী একটু পিছাইয়্যা থাকলেও অহন খেলা জমছে। ’ তার কথায় মাথা নাড়িয়ে ‘হ... হ...’ বলে সায় দিলেন কেউ কেউ। আবার ভিন্নমতও পোষণ করলেন অনেকে।

এতোক্ষণ নীরব ছিলেন চায়ের দোকানি ইউসুফ। এবার হাঁক দিয়ে বললেন, ‘দূর ভাই, আসল খেলা ইলেকশনের আগের রাইতে। ’ 

** সুন্দর পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার অঙ্গীকার দুই মেয়রপ্রার্থীর

বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।