ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন

ইসলামপুর থেকে এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান

বিদ্রোহী নিয়ে আ’লীগ আর ঘরের শত্রুর শঙ্কায় বিএনপি

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান ও গোলাম রাব্বানী নাদিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
বিদ্রোহী নিয়ে আ’লীগ আর ঘরের শত্রুর শঙ্কায় বিএনপি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জামালপুরের ইসলামপুর পৌরসভা থেকে ফিরে: স্বাধীনতার পর ইসলামপুর থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র একবার জিতেছে বিএনপির প্রার্থী। এছাড়া ১৭ বছরের ইতিহাসে পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে একবারও বিজয়মাল্য পড়তে পারেনি দলটির কোন প্রার্থীই।

বার বার এখান থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরাই।

এ সমীকরণ সামনে নিয়ে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল কাদের শেখ (নৌকা)। এখানে ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী সাজেদ মোশাররফ সেবক নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে দাঁড়িয়ে যাবার পরেও স্বস্তিতে নেই বিএনপির একক প্রার্থী রেজাউল করিম ঢালী (ধানের শীষ)।

তার দলের কেউ প্রকাশ্যে বিদ্রোহ না করলেও ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’ রয়েছে। সেই বিভীষণরা তলে তলে স্লোগান দিচ্ছেন ‘নৌকা জেতাও, ধান ঠেকাও’।

‘দলের ভেতর কে এই বিভীষণ?’ জানতে চাইলে পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের করিম ঢালীর মোড় এলাকার ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর কন্ট্রোল রুমে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মাছুম আলী বলেন, ‘দলের মনোনয়ন বঞ্চিত পৌর বিএনপি’র সভাপতি জয়নাল আবেদিন সরকারই বিভীষণ রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। ’

সোমবার (২১ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৭টার দিকে ওই দলীয় কার্যালয়ে মাছুমের সঙ্গে আলাপের সময়ে সেখানে ছিলেন উপজেলা বিএনপি’র সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি তামির উদ্দিন সিদ্দিকীসহ জনা বিশেক নেতা-কর্মী। তারাও মাথা নাড়িয়ে মাছুমের বক্তব্যকে সমর্থন করছিলেন। আবার এও বলছিলেন, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে। ’

১৪.৭১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ১১৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামপুর পৌরসভা। এ পৌরসভার মোট ভোটার ২৬ হাজার ৪২৫। ভোট কেন্দ্র ১২টি। পুরুষ ভোটার ১৩ হাজার ১৭ ও নারী ভোটার ১৩ হাজার ৪০৮।

২০১১ সালের ২৬ মে ‘গ’শ্রেণি থেকে ‘খ’ শ্রেণিতে উন্নীত হয় এ পৌরসভা। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এখান থেকে মেয়র হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল কাদের শেখ (নৌকা)।

ভোটযুদ্ধ ঘনিয়ে আসায় সাত সকাল থেকে গভীর রাত অবধি বিরামহীন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তাদের প্রচারণার উত্তাপে গরম হয়ে উঠেছে এখানকার ভোটের মাঠ। জমে উঠেছে তাদের নির্বাচনী ক্যাম্পগুলোও।

পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়ক ও পাড়া-মহল্লার অলি-গলির সড়কের রশিতে সাঁটানো হয়েছে প্রার্থীদের সাদা-কালো পোস্টার। গোটা এলাকাই যেন ঢাকা পড়েছে পোস্টারে। বিরামহীন মাইকিং চলছে শহরের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। মাইকিংয়ে প্রার্থীদের নানা উপমায় গুণকীর্তন করা হচ্ছে।

দফায় দফায় প্রচারণা মিছিল হচ্ছে। নির্বাচনী ক্যাম্পগুলোর সামনে সাউন্ড বক্সে বাজানো হচ্ছে নানা ধরনের গান। গানে গানেও ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা চলছে। দুই দলের কর্মী সমর্থক থেকে শুরু করে সাধারণ বাসিন্দাদের মাঝেও নির্বাচনী আলোচনা নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় উঠেছে।

৭ নং ওয়ার্ডের পৌরসভা মোড় এলাকার মাজুর চায়ের দোকান। এখানে বসেই নিজেদের প্রচারণার নানা কৌশল নিয়ে আলাপ করছিলেন স্থানীয় পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বাবু, হারুন ও স্বপনসহ কয়েকজন নেতা-কর্মী ও সমর্থক।

তাদের ভাষ্যে, দলের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী সেবক ও জাপার প্রার্থী ভোটারদের হিসাব-নিকাশে নেই। এখানে নৌকা ও ধানের শীষ সমানে সমান। ’ একই রকম কথা জানান স্থানীয় রেলগেট এলাকার বাসিন্দা তুষার প্রধান। বলেন, ‘মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র প্রার্থীর মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। ’

ওই এলাকার ফুলু মিয়ার চায়ের দোকানে ভোটের আলাপে তুফান তুলেছেন স্থানীয় ৪নং ওয়ার্ডের মন্ডলপাড়া এলাকার মো. রাজু খানসহ যুবক বয়সী কয়েক ভোটার। তাদের আলাপের সূত্র ধরে একই ওয়ার্ডের সুরুজ মিয়া নামের একজন হাঁক দিয়ে বলে উঠলেন, ‘কাদের মেয়র হইয়া কত কাম করলো এইডা তো বল না। কাদেরকে সহজে হারানো যাইতো না। ’

ফুলু মিয়ার চায়ের দোকান থেকে বেরিয়ে ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থী’র কন্ট্রোল রুমে গেলে তারাও মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র দুই প্রার্থীর মধ্যকার ভোটযুদ্ধের আভাস দেন। দলটির প্রবীণ নেতা তামির উদ্দিন সিদ্দিকী বলেন, ‘গতবার মামা (আব্দুল কাদের শেখ) মেয়র হইছে। এবার ভাগ্নে (রেজাউল করিম ঢালী) জিতবো। ’

এ সময় দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত এক প্রার্থী ও তার সমর্থকদের ‘নৌকা জেতাও, ধানের শীষ ঠেকাও’ স্লোগানের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন একজন। পাল্টা সিদ্দিকী বললেন, ‘আওয়ামী লীগেও তো শক্ত বিদ্রোহী আছে। হেইডাও তো দেখতে অইবো। ’

এরপর খানিক সময় নীরব থেকে তামির উদ্দিন দলীয় কর্মীদের জন্য ‘নির্বাচনী চা’ আনতে আরেক জনকে ডাকলেন। ধোঁয়া ওড়া চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল নির্ধারণে আলাপে মেতে উঠলেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
আরআই

** ‘ভোটের কতা কমু না’
** নির্বাচনী চা!
** ‘আসল খেলা ইলেকশনের আগের রাইতে’
** সুন্দর পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার অঙ্গীকার দুই মেয়রপ্রার্থীর
** নৌকা ঠেকাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে বিএনপি!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।