মহান স্বাধীনতা দিবসে বাংলানিউজের কাছে যুদ্ধে যাওয়ার ঘটনা এভাবেই বর্ণনা করলেন মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ চলচ্চিত্র পরিচালক মনতাজুর রহমান আকবর। ১৯৭১ সালে দেশ বাঁচানোর তাগিতে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি।
আকবর বলেন, ‘আমার বয়স তখন ১৬ বছর। নবম শ্রেণিতে পড়তাম। প্রাপ্ত বয়স্ক ছিলাম না; তবে মনের মধ্যে দেশকে বাঁচানোর প্রবল ইচ্ছা নিয়ে যুদ্ধে অংশ নিই। জীবনকে তখন তুচ্ছ মনে হয়েছিল। মাথার মধ্যে শুধু কাজ করতো-দেশ বাঁচাতে হবে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে, পরিবারকে বাঁচাতে হবে। ’
মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার কাজী নূরুজ্জামান’র অধীনে ৭ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধে করেন আকবর। বহু সম্মুখ যুদ্ধে অস্ত্র হাতে তিনি সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। বেশ কয়েকবার ফিরে এসেছেন মৃত্যুর মুখ থেকেও।
যুদ্ধকালীন একটি ঘটনা বর্ণনা করে ৫৮ চলচ্চিত্রের এই পরিচালক বলেন, ‘আমাদের ট্রুপের দায়িত্ব ছিল দিনাজপুরের সৈয়দপুরকে মুক্ত করার। সৈয়দপুর মুক্ত হবার পর আমরা পাহাড়পুরের যুদ্ধে অংশ নিই। তখন এ যুদ্ধে আমরা অনেক পাকিস্তানি হানাদার মারতে সক্ষম হই। পাশাপাশি আমাদের বহু মুক্তিযোদ্ধাও শহীদ হন। ফজলু নামে আমার এক বন্ধু ছিলেন। সেও যুদ্ধে শহীদ হয়। তবে ভাগ্যের জোরে আমরা অনেকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসি। ’
পরিবার ছেড়ে ৭ মাস ক্যাম্পে ক্যাম্পে রাত কেটেছে আকবরের। কিশোর বয়সে বাবা-মা’কে ছেড়ে থাকাটা তার জন্য ছিল অনেক কষ্টের। এই নির্মাতার ভাষ্যে, ‘রাতে ক্যাম্পে ঘুমাতে গেলে বাবা-মাকে অনেক মনে পড়ত। আমাদের সঙ্গে অনেকে এমন ছিলেন-যারা সদ্য বিয়ে করা বউ রেখে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। অনেকে মুখ চেপে কান্না করতেন। কারণ ক্যাম্পে শব্দ করে কান্না করা নিষেধ ছিল-যাতে অন্য যোদ্ধাদের মনোবল আবেগতাড়িত না হয়। সকল কষ্টকে পাশ কাটিয়ে আমরা যুদ্ধের দিকেই নিজেদের মন স্থির রেখেছি। ’
‘১৬ ডিসেম্বর দেশ যখন স্বাধীন হয় এরপর প্রায় ৭ থেকে ৮ দিন পর আমি বাড়ি ফিরি। কারণ আমরা যেখানে ছিলাম সেখান থেকে বাড়ি ফেরার কোনও যানবাহন ছিল না, তাই পুরো পথ হেঁটে যেতে হয়েছে। দেরিতে বাড়ি ফেরাতে অনেকে মনে ভেবেছিলেন আমি যুদ্ধে শহীদ হয়েছি। ’
মনতাজুর রহমান আকবর চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি বর্তমানে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সহ-সভাপতি পদের দায়িত্বে আছেন। প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তার হাত ধরে ডিপজল, পপি, কেয়া, রিয়া সেন, শাকিবা’সহ অনেক শিল্পীর চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৯
জেআইএম