স্টার সিনেপ্লেক্সে ২৩ ডিসেম্বর শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে একুশে টেলিভিশন প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘অন্ধ নিরাঙ্গম’। চলচ্চিত্রটির কাহিনী, চিত্রনাট্য, শিল্প নির্দেশনা ও পরিচালনা করেছেন হাসিবুর রেজা কল্লোল।
আজকের সময়ে পৌছে বাউল সম্রাট ফকির লালনের দর্শন-চেতনার বিবর্তনকে তুলে ধরা হয়েছে ‘অন্ধ নিরাঙ্গম’ ছবিতে। পৃথিবী জুড়ে আজ লালন সম্রাটের গানের সুপরিচিতি।
তার স্মরনোৎসব পালন করা হয় প্রতিবছর ১৭ অক্টোবর। এরকমই এক স্মরনোৎসবে যোগ দিতে বাংলাদেশ আসেন কয়েকজন বিদেশী পর্যটক। রেলগাড়িতে উঠে এদেশের অপার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে তারা চলতে থাকেন। গন্তব্য কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায় লালন ফকিরের আখড়াবাড়ি। সঙ্গে থাকা গাইডকে প্রশ্ন করে তারা জেনে নেন, কে ছিলেন লালন! কয়েক স্টেশন পরে তাদের সহযাত্রী হন দুজন পোশাকধারী বাউল। তাদের গন্তব্যও আখড়াবাড়ি। বাউল দুজন গান ধরেন । রেল পথ শেষ হয়ে স্থানীয়ভাবে নির্মিত যান নসিমনে চড়েন সবাই একসাথে।
স্মরনোৎসবে তারা পৌঁছান ছেউড়িয়ায়। লালন ভক্তদের পদচারণায় মুখর আখড়াবাড়ির সীমানা ছেড়ে পদ্মা নদীর চরে হাঁটতে হাঁটতে বাউল শফি মন্ডলের কাছে একজন বিদেশী পর্যটক জানতে চান, এখন লালন কে আমরা কোথায় খুজে পাবো? বাউল শফি মন্ডলের সঙ্গে থাকা শিশু বাউল শিল্পী মুন্নার গান শুনে সবাই মুগ্ধ, জানতে চায়, শিশুটি কে? কি তার জন্ম পরিচয়? এভাবেই শুরু হয় অন্ধ নিরাঙ্গমের কাহিনী।
ঘটনার ধারাবাহিকতায় নিভৃতচারী একজন মাতাজীকে তুলে ধরা হয়। যিনি জীবনযাপন করেন লালন ফকিরের শুদ্ধ অনুসারী হিসাবে, শমসের সাইয়ের সাধন সঙ্গিনী তিনি। জীবনের নানা বাঁকে মাতাজী মেনে চলেন বাউল পথ। তাদের উপর অত্যাচার, বিভিন্ন সময়ের সাধু সঙ্গ ঘুরে ফিরে আসে তার কল্পনায়। তার নিভৃত আখড়াবাড়িতে দুজন ভক্ত আসে, যারা প্রকৃতপক্ষে সংসারী মন-বাসনায় বাউল প্রকৃতির। একসময় উন্মোচিত হয় তাদের আসল চেহারা। বাউল নিয়মে সন্তান উৎপাদন অর্থ, আত্মার ক্ষয়। যা খিলাফত প্রাপ্ত বাউলের জন্য চরম পাপ। অন্ধ নিরাঙ্গম, যার অর্থ গুরুর শিক্ষা যাদের উপরে কোনো প্রভাব ফেলে না। আখড়াবাড়ির পবিত্রতা লঙ্ঘণ আর বাউল নির্দেশনার খেলাপ করার অপরাধে ভক্ত দুজনের খিলাফতের কাপড় কেড়ে নিয়ে তাদের আখড়া থেকে বের করে দেন মাতাজী। ভক্ত দুজন চলে যায়, মাতাজীর মনে অপরাধ বোধ জাগে। তিনি হয়তো পারতেন ভক্ত দুজন কে সঠিক পথে পরিচালিত করতে। পারেননি, এ ব্যর্থতা তারই। এ ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে ক্রমেই তিনি এগিয়ে যান মৃত্যুর দিকে। দেহ ত্যাগ করেন মাতাজী । একই সময়ে মাতাজীর ঘরে আসেন, আখড়া থেকে বিতাড়িত সেই দুই ভক্ত। তাদের সঙ্গে নবজাতক সন্তান, যে সন্তানের জন্ম বাউল আদেশ অমান্যের কারণে । মাতাজীর পায়ের কাছে শিশু সন্তানকে সমর্পণ করে তারা চলে যায়। এই শিশু ভক্তের মাঝেই বেঁচে থাকেন লালন, তার দর্শন আর তত্ব নিয়ে।
‘অন্ধ নিরাঙ্গম’ ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, রোকেয়া প্রাচী, সঞ্জীব আহমেদ, রিতু এ. সাত্তার, ফখরুজ্জামান চৌধুরী, আমিনুর রহমান বাচ্চু, শিহাব পারভেজ, ইমদাদ ফকির, লাভলী ফকিরানী, মিডারি কারটিস,মাগালি লাভিরাত্তি,মাইকেল কোহ্ল, দিয়ারমাইদ স্পাইরো, জোসায়া মেকনামাভা, ইজমাইলা নেজুঙ্গম, তিমথি ম্যাককেইন, আনুশেহ্ আনাদিল, শফি মন্ডল, মুন্না,তৌফিক তফি, ডলি সহ আরো অনেকে।
বাংলাদেশ সময় ১৭২৫, ডিসেম্বর ২২, ২০১১