ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

রামেক হাসপাতালের হিমঘরে এন্ড্রু কিশোরের মরদেহ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১০ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২০
রামেক হাসপাতালের হিমঘরে এন্ড্রু কিশোরের মরদেহ

রাজশাহী: বাংলাদেশের প্লেব্যাক সম্রাট কিংবদন্তি সংগীত শিল্পী এন্ড্রু কিশোরের মরদেহ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের হিমঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। 

সোমবার (৬ জুলাই) রাত ৯টা ৪০ মিনিটে মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় থাকা বড় বোনের বাসা থেকে এন্ড্রু কিশোরের মরদেহে একটি স্ট্রেচারে করে বের করা হয়। এরপর অ্যাম্বুলেন্সে করে তার মরদেহ হিমঘরে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ সময় তার অসংখ্য ভক্ত অনুরাগী ও শুভাকাঙ্ক্ষী শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েন। সবাই শেষবারের মতো একনজর তাকে দেখতে ভিড় করেন।

প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের বন্ধু রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. দীপকেন্দ্র নাথ দাস বাংলানিউজকে জানান, এন্ড্রু কিশোরের বাবার নাম ক্ষিতিশ চন্দ্র বাড়ই। মায়ের নাম মিনু বাড়ই। এন্ড্রু কিশোর সংসার জীবনে স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু এবং সজ্ঞা (২৬) নামে এক মেয়ে ও সপ্তক (২৪) নামে এক ছেলে সন্তান রেখে গেছেন। তারা দুজনই বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে পড়াশোনা করছেন।  

>>এন্ড্রু কিশোরকে এক নজর দেখতে বাড়ির সামনে ভক্তদের ভিড়

সজ্ঞার পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে। তারা দেশের পথে রয়েছেন। মূলত সন্তানেরা ফিরলেই এন্ড্রু কিশোরের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দিনক্ষণ ঠিক করা হবে। একই সঙ্গে তাকে সমাহিত করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে রাজশাহীতেই তাকে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
 
পরিবর্তন হলে তা পরে গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই পর্যন্ত তার বন্ধু এন্ড্রু কিশোরের মরদেহ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরেই রাখা হবে। রাতেই তার মরদেহ সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন কেবল সন্তানদের জন্য অপেক্ষা করা হবে। তার সন্তানরা যেদিন আসবেন সেদিন এন্ড্রু কিশোরের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

তবে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে তার মায়ের পাশেই সমাহিত করা হবে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মারা যাওয়ার আগে তিনি বলে যান তাকে যেন মায়ের পাশেই সমাহিত করা হয়। আর তার শেষ এই ইচ্ছে পূরণ হচ্ছে।  

এন্ড্রু কিশোরের বোনের স্বামী ডা. প্যাট্টিক বিপুল বিশ্বাস জানান, এখন তার মরদেহ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা থাকবে। মৃত্যুর আগে এন্ড্রু কিশোর নিজেই বলে গেছেন তাকে যেন মায়ের পাশেই সমাহিত করা হয়। সেই ইচ্ছাই মায়ের পাশেই তাকে সমাহিত করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কখন সমাহিত করা হবে এটা ঠিক করা হয়নি।

এদিকে এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শোকে মুহ্যমান হয়ে যায় বিভাগীয় শহর রাজশাহী। এরপর প্রিয় শিল্পীকে একনজর দেখতে রাজশাহীর মহিষবাথান এলাকায় থাকা বড় বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাড়ির সামনে ভিড় করেন ভক্তরা। মরণঘাতী ক্যান্সারের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে এই বাড়িতেই জীবনের শেষ দিনগুলো কাটিয়েছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই সঙ্গীত তারকা।  

বড় বোন ও বোনের স্বামী দু’জনই স্বনামধন্য চিকিৎসক। বাড়িটির একটি অংশেই রয়েছে ক্লিনিক। গত সেপ্টম্বরে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর প্রায় নয়মাস সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নেন তিনি। গত ১১ জুন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেশে ফিরেন। এরপর ঢাকার মিরপুরের বাড়িতে সপ্তাহ খানেক থাকার পর গত ২০ জুন তিনি রাজশাহী আসেন। সেখানে চিকিৎসা চলছিল এন্ড্রু কিশোরের। তাই এখন ওই বাড়িটি ঘিরেই সবার কৌতুল। এতদিন কিভাবে ছিলেন, কেমন ছিলেন, কি খেয়েছেন, কি বলে গেছেন- একে অপরে কথোপকথনের মাধ্যমে এই সব প্রশ্নই আজ জানার চেষ্টা করছেন সবাই।  

১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন এন্ড্রু কিশোর। সেখানেই কেটেছে তার শৈশব ও কৈশোর। এন্ড্রু কিশোর প্রাথমিকভাবে সংগীতের পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর খ্যাতনামা ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। একসময় গানের নেশায় রাজধানীতে ছুটে যান।  

মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, আধুনিক গান, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পী হন। ১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ সিনেমায় ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয়।

সেই শুরুর পর থেকে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এন্ড্রু কিশোরের খুব জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘পদ্মপাতার পানি’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘আমি চিরকাল প্রেমের কাঙাল’প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

এন্ড্রু কিশোর ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য দেশ-বিদেশের আরও অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন উপমহাদেশের খ্যাতনামা এই শিল্পী।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২০
এসএস/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।