ঢাকা: বাংলার বহু লোকসংগীত সাধকের গান সাধক লালন সাঁইজির গান বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত লোকসংগীত শিল্পী ফরিদা পারভীন। তিনি এই বিষয়ে সাবধান হয়ে কোনটি সঠিক এবং কোনটি ভুল তা যাচাই এবং গবেষণার আহ্বান জানান।
সম্প্রতি 'বিশ্ব সংস্কৃতিতে বাংলাদেশের বাউল ও লোক দর্শন' শীর্ষক এক সেমিনারে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হলে তিনি এ কথা বলেন।
শিল্পী ফরিদা পারভীন বলেন, সঙ্গীত হচ্ছে গুরুমুখি শিক্ষা। সঠিক গুরু ধরে সঠিকভাবে শেখার যে বিষয়টা, এটি আমাদের প্রত্যেকের রক্ষা করা উচিত। আমি বাউল ফকিরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেই বলছি- অনেক গান লালন সাঁইজির বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে যে অভিযোগ রয়েছে, তা একশো দশ ভাগ সত্যি। এজন্য এটা নিয়ে আমাদের গবেষণা করে কোনটা সঠিক কোনটা ভুল তা নির্ধারণ করতে হবে।
ফরিদা পারভীন বলেন, লালন সাঁইজি মানবকল্যাণের জন্য তার বাণী বা কালামগুলো তিনশো বছর আগে মানুষের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এখন সমগ্র পৃথিবীতে লালন ফকিরের বাণী দ্বারা মেডিটেশন হচ্ছে। অতএব আমাদের এটা খাটো করে বা ছোট করে দেখার কোন অবকাশ নেই।
একুশে পদকপ্রাপ্ত এই লোকসংগীত শিল্পী বলেন, রবীন্দ্রনাথ যে বইটি নিয়ে গিয়েছিলেন লালনের গানের, মনির উদ্দিন শাহ'র কাছ থেকে সেটি ঠিক আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। উপেন্দ্র ভট্টাচার্যের 'বাংলার বাউল' বইতে যেগুলো আছে, সেটিও অথেনটিক বলে ধরে নেওয়া হয়। এগুলোকে আমরা রেফারেন্স হিসেবে নিতে পারি। এছাড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেক গান আছে যেগুলো লালন ফকিরের নয়, কিন্তু লালন ফকিরের নামে চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, দুদ্দু শাহ, পান্থ শাহ্দের আমলে এমনও হয়েছে যে- এমন অনেক মরমি কবি ছিলেন, যারা লালনের গান নিজেদের বলে চালিয়ে দিয়েছেন। এখন আমাদের বের করতে হবে, কোনটি লালনের সঠিক গান।
লালনের গানের উচ্চারণ, অবয়ব, তাল, লয় এবং গায়কী- এই বিষয়গুলো খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপনের প্রথম শর্ত হলো উচ্চারণ ঠিক রাখা। উচ্চারণ গানের প্রধানতম একটি অংশ। আমরা মজা উড়ানোর জন্য লালন ফকির নয়, লালনের বাণী দ্বারা আমরা প্রভাবিত হয়ে আমরা আত্মশুদ্ধি লাভ করবো বলেও এসময় মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০২২
এইচএমএস/এনএটি