ঢাকা, সোমবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ জুন ২০২৪, ০৯ জিলহজ ১৪৪৫

ফিচার

ঝরনার পানিতে বাঁচে জীবন

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৬
ঝরনার পানিতে বাঁচে জীবন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ির দীঘিনালার জোড়া ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা বিউটি চাকমা। পানির জন্য প্রতিদিন সকালে দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয় তাকে।

শুধু বিউটি চাকমা নয় এভাবে প্রতিদিন পানি সংগ্রহ করতে হয় এলাকার ৭০টি পরিবারকে।

 

এই পরিবারগুলোর খাওয়া থেকে শুরু করে সংসারের নিত্যদিনের কাজের জন্য ছড়া ঝরনার পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। বৃষ্টি হলে ছড়া ঝরনার পানির গতিধারা কিছুটা বাড়লেও শুষ্ক মৌসুমে পানির ধারা একদম কমে যায়। যদিও এমন পানি সমস্যা তিন পার্বত্য জেলার সব দুর্গম এলাকায়ই রয়েছে।

 

দীঘিনালা-বাঘাইহাট সড়ক থেকে এক কিলোমিটার ভেতরে রিজার্ভ ছড়ায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ি নারীদের কেউ ছড়া থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন, কেউ বা হাঁড়ি-পাতিল পরিষ্কার করছেন, আবার কেউ অপেক্ষা করছেন গোসল করার জন্য। পাহাড়ের গায়ে গেথে দেওয়া বাঁশের কঞ্চি দিয়ে অল্প অল্প পানি আসছে।

পানি সংগ্রহ করতে আসা চিত্ত রাণী ত্রিপুরা বলেন, আমাদের তো আর টিউবওয়েল নাই যে ওখান থেকে পানি নেবো। আমরা এখান থেকে (ছড়া) প্রতিদিন পানি সংগ্রহ করি। এই পানি দিয়ে রান্নাবান্নাসহ সব কাজ করি।

অর্চনা চাকমা ও রক্তিম চাকমা জানান, বর্ষায় ছড়া, ঝরনা থেকে পানি পেতে যতটা না কষ্ট, তার চেয়ে বেশি কষ্ট শুষ্ক মৌসুমে পানি পাওয়া। তখন ছড়া, ঝরনার পানি কমে গিয়ে পানির সংকট চরম আকার ধারণ করে। এদিকে ওই এলাকার দু’টি আনসার ক্যাম্পের সদস্যদেরও পানির জন্য ছড়ার ওপর নির্ভর করতে হয়।

আনসার সদস্য মো. ইব্রাহিম বলেন, আমারা ১৫/১৬ জন আনসার সদস্য এখানে থাকি। আমরা সবাই এই ঝরনা থেকেই পানি সংগ্রহ করি। এই ঝরনায়ই গোসল করতে হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজও চলে ঝরনার পানিতে।

রিজার্ভ ছড়া এলাকার বৃদ্ধ শান্তি মনি চাকমা, কৃষ্ণমনি চাকমা জানান, রিজার্ভ ছড়া এলাকায় ৭০টি পরিবারের বসবাস। আনসার ক্যাম্প রয়েছে দু’টি। দোকান আছে পাঁচটি। এই এলাকার সবার পানির একমাত্র উৎস ছোট এই ঝরনাটি। বর্ষা মৌসুমে পানির গতি কিছুটা বাড়লেও শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ একদম কমে যায়। তখন দুভোর্গের শেষ থাকে না। তারা ঝরনাটি সংস্কার করে পানি সংরক্ষণ করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি শাখার সভাপতি আবু তাহের মুহাম্মদ বলেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ভবিষ্যতে পানির সংকট তৈরি হবে। এখন থেকে পানির প্রাকৃতির উৎসগুলো ব্যবহারে সচেতন হওয়া উচিৎ।

দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ড. শহীদ হোসেন চৌধুরী বলেন, দুর্গম পাহাড়ের তলদেশে পাথর আর পানির লেয়ার না থাকায় নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব নয়। তাই ছড়া, ঝরনার ওপর প্রত্যন্ত এলাকার জনগণকে নির্ভর করতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৬
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।