বিশ্বকাপ জয়ের মিশনে এবার বড়সড় পরীক্ষা আর্জেন্টিনার সামনে। কোয়ার্টারের বাধা টপকাতে লিওনেল মেসিদের পাড়ি দিতে হবে নেদারল্যান্ডসের বাধা।
ডাচদের বিপক্ষে ম্যাচের তিন দিন আগে অনুশীলনে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়েছেন রদ্রিগো দে পল। চোটের কারণে গত দুইদিন অনুশীলনেও ঠিকঠাক আসেননি এ মিডফিল্ডার। শুধু এই ম্যাচই নয় চোটে বিশ্বকাপ থেকেও তার ছিটকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে শেষমেষ যদি ইনজুরির কারণে খেলা না হয় ডি পলের মধ্যমাঠ সাজাতে বড়সড় সমস্যায় পড়তে হতে পারে কোচ স্কালোনিকে।
২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালই ঘুরে-ফিরে আসছে সামনে। সেবার ব্রাজিল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলো নেদারল্যান্ডস এবং আর্জেন্টিনা। কিন্তু টাইব্রেকারে রোবেন-স্নেইডারদের হারিয়ে ফাইনালে উঠে যায় মেসির দল। সেই পারজয়ের ক্ষত এখনও তাজা।
এবার যখন আবারও কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে পেয়ে গেলো, তখন ডাচ কোচ লুইস ফন গালের হুমকি, আট বছর আগের প্রতিশোধ নিতে চান তিনি। সেবারও ডাচদের কোচ ছিলেন তিনি। এবারও কোচ। ফুটবলারদের চেয়ে ক্ষতটা বেশি বয়ে বেড়াচ্ছেন নেদারল্যান্ডস কোচই।
আজ দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হচ্ছে মেসিদের আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
বৃহস্পতিবার ম্যাচের আগের সংবাদ সম্মেলনে স্কালোনি বলেছেন, ‘বুধবার রুদ্ধদ্বার অনুশীলন করেছি আমরা। জানি না রদ্রিগোর সমস্যা সম্পর্কে বাইরে কী কী লেখা হয়েছে। তার একটা সমস্যা রয়েছে এটা ঠিকই। তবে বাড়াবাড়ি কিছু নয় বলেই মনে হয়েছে। সে বুধবার ভালোভাবেই অনুশীলন করেছে। কেউ কেউ ক্লান্তির কারণে অর্ধেক অনুশীলন করেছে। অনেকে সাবধানতা অবলম্বন করতে গিয়েও অনুশীলন করেনি। সংবাদমাধ্যমে যা বেরোয় সেটা অনেক সময় সত্যি হয় না। ’
নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে আলাদা করে মেসির কোনও ভূমিকা থাকছে? স্কালোনি বলেন, ‘লিও এমনিতেই বাকিদের চেয়ে আলাদা। মাঝে মাঝেই তার ভূমিকা বদলে যায়; কিন্তু এখনই সব বলে দিয়ে প্রতিপক্ষকে সতর্ক করে দিতে চাই না। আমরা যে সব ম্যাচ খেলেছি সেগুলো নিশ্চয়ই প্রতিপক্ষ দেখেছে। ’
নকআউটের ম্যাচ পেনাল্টিতে গড়াতে পারে। তার জন্য কি আলাদা করে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে? স্কালোনির উত্তর, ‘ছেলেরা প্রতিদিনই অনুশীলন করে। আশা করি ম্যাচেও ওদের কোনও সমস্যা হবে হবে না। ১২০ মিনিটের পর পেনাল্টি নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। আমরা ম্যাচটা নির্ধারিত সময়েই জেতার লক্ষ্য রাখছি। যদি টাইব্রেকারের চলে যায়, তখন ওটা নিয়ে ভাবব। ’
বিশ্বকাপে দু’বার আর্জেন্টিনার কাছে হারে নেদারল্যান্ডস। ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল এবং ১৯৭৮ বিশ্বকাপের ফাইনাল। মারিও ক্যাম্পেসদের কাছে সেবার ৩-১ গোলে ফাইনালে হেরেছিলো ডাচরা।
মূলত ২০১৪ সালের হারটাই বেশি পোড়াচ্ছে কোচ ফন গালকে। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে হারের যে তিক্ত স্বাদ পেতে হয়েছিল আমাদের, তা শুক্রবার মিটিয়ে দিতে চাই। আমার মতে, আর্জেন্টিনা বিশ্বের অন্যতম সেরা দল; কিন্তু শুক্রবার থেকেই আমাদের আসল বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে। আগের ম্যাচগুলোর কোনো গুরুত্ব ছিল না সেটা বলছি না। কিন্তু আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিল এমন দল যাদের সঙ্গে অতীতের কোনও দলেরই তুলনা চলে না। ’
যদিও মাঠ ঠাসা থাকবে আর্জেন্টিনার সমর্থকে। সে প্রসঙ্গে ফন গাল বলেন, ‘আমার ফুটবলাররা যথেষ্ট পেশাদার। ওরা জানে কিভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়। যদি গ্যালারিতে ৪০ হাজার আর্জেন্টাইন থাকে, তাহলে আমাদেরও হাজার হাজার সমর্থক থাকবে। ’
গত বছর কোপা আমেরিকা জেতার পর আর্জেন্টাইনরা বেজায় খুশি হয়েছিল। কারণ দীর্ঘ ২৮ বছর পর লিওনেল স্কালোনির আর্জেন্টিনা তাদের শিরোপা উপহার দেয়। তখনই আর্জেন্টিনায় একটি গাড়ি রং করে সাজানো হয়েছিল এবং নাম দেওয়া হয়েছিল ‘লা স্কালোনেটা’। বাসের সামনের দিকে দুজন লিওনেল—স্কালোনি ও মেসি, পেছনে খেলোয়াড়রা বসে। দুই লিওতে মিলে আলবিসেলেস্তেদের বড় আসরে শিরোপা খরা মিটেছে, সুবাদে তাদের নিয়ে আরেকটা বিশ্বকাপ শিরোপার স্বপ্নের আঁকিবুঁকি শুরু করে দেয় আর্জেন্টাইনরা। তাদের এমনই বিশ্বাস, ‘লা স্কালোনেটা’য় চড়ে কাতার জয় করবেন লিওনেল মেসি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২২
এআর