ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

নেইমারের পরিবর্তে নতুন কোনো আমারিলদো?

এম জে ফেরদৌস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪০ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১৪
নেইমারের পরিবর্তে নতুন কোনো আমারিলদো?

ঢাকা: বিশ্বকাপ চলাকালে ইনজুরির কবলে পড়ে দলের প্রধান তারকাকে হারানো ব্রাজিলের জন্য নতুন কিছু নয়। সাম্প্রতিক সময়ে তরুণ প্রজন্মের সবচেয়ে প্রতিভাবান খেলোয়াড় নেইমারকে অসময়ে হারানোর বেদনা ব্রাজিলকে বহন করতে হচ্ছে।

কিন্তু তাদের জন্য আশার বার্তা রয়েছে- ব্রাজিলের গৌরবময় ফুটবল ঐতিহ্যেই।

দলের মূল খেলোয়াড়ের ছিটকে পড়া সত্ত্বেও ব্রাজিল সফলভাবে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করতে পেরেছে- এই নমুনা বিরল নয় ফুটবল পাগল দেশটির ইতিহাসে।

১৯৬২ সাল, চিলিতে আয়োজিত বিশ্বকাপ। গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচেই দলের প্রধান খেলোয়াড় পেলে রাফ ট্যাকলের শিকার হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়েন। পেলের ইনজুরি সত্ত্বেও সেবার ব্রাজিল শিরোপা জেতে। পেলের জায়গায় খেলতে নেমে ২২ বছর বয়সী তরুণ আমারিলদো দুনিয়া জয় করেন।
ব্রাজিল কি এবারও পাবে নতুন এক আমারিদো? কে হবে এবারের আমারিলদো?

জীবন-মরণ ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে জোড়া গোল করে আমারিলদো ব্রাজিলকে জয় এনে দেন। ৫২ বছর আগের সেই স্মৃতির বর্ণনা দিতে গিয়ে ৭৫ বছর বয়সী আমারিলদো বলেন,আমি নার্ভাস ছিলাম না, পেলের পরিবর্তে খেলতে নামাকে আমি স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছিলাম। বরঞ্চ এটা আমাকে উজ্জীবিত করেছিলো। কারণ আমিও দুনিয়াকে দেখাতে চেয়েছিলাম আমি কী করতে পারি। অবশ্যই আমি চাইনি পেলে ইনজুরি আক্রান্ত হোক। কিন্তু আমার নিজেকে প্রমাণের প্রয়োজন ছিলো এবং আমি সেটা করতে পেরেছি স্পেনের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচে। ওই ম্যাচটা না জিতলে স্পেনকে বা আমাদের বিদায় নিতে হতো।

আমারিলদো আরও বলেন, আমি নার্ভাস বোধ করিনি। বরঞ্চ আমি হৃদয় উজাড় করে খেলার দায়িত্ববোধ করেছি।

পুসকাস, ফ্রান্সিসকো গেন্তো এবং আলফ্রেড ডি স্টেফানো সমন্বিত স্পেন দলকে পেলের অনুপস্থিতিতে ব্রাজিল হারাবে- এটা ছিলো কল্পনাতীত। দিদি, মারিও জাগালো, গারিঞ্চা ও নেইলটন সান্তোসের সঙ্গে মূল একাদশে তার নাম দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন। কিন্তু দর্শকদের অবাক করে দিয়ে ৬২ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় গারিঞ্চার সঙ্গে জুটি বেঁধে সমর্থকদের হৃদয় জয় করে নিলেন আমারিলদো।

পরে পেলে এক সময় আমারিলদো প্রসঙ্গে বলেন, আপাতদৃষ্টিতে আমারিলদো বিশ্বকাপরে জন্য প্রস্তুত ছিলো না, কিন্তু সে বোটাফোগোর হয়ে দারুণ খেলায় তাকে দলে ডাকা হয়েছিলো। বিশ্বকাপে খেলতে হলে আত্মবিশ্বাস থাকা খুব জরুরি, যা আমারিলদোর ছিলো বলেই সে সফল হয়েছে।    

স্পেনের বিপক্ষে জোড়া গোল করেই ক্ষান্ত হয়নি আমারিলদো। ওই বিশ্বকাপের ফাইনালে চেকপ্রজাতন্ত্রের বিপক্ষের ম্যাচে পিছিয়ে পড়া ব্রাজিলকে সমতায় ফেরান আমারিলদো। ৩-১ গোলের ব্যবধানে নিজেদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে ব্রাজিল।

নাটকীয়ভাবে ব্রাজিলিয়ানদের হৃদয় জয় করা সেই আমারিলদো চলতি বিশ্বকাপে নেইমারকে হারিয়ে বিপদে পড়া দলকে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি মনে করেন নেইমারের ইনজুরিতে ব্রাজিল দুর্বল হয়নি, ৬২ বিশ্বকাপের মতোই ব্রাজিলকে অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে নেইমারের ইনজুরি।

নেইমারের বদলি হিসেবে যিনি খেলবেন তাকে পরামর্শ দিয়ে আমারিলদো বলেন, একাদশে যেই আসুক, সে যেন নিজেকে নেইমারের বদলি খেলোয়াড় না ভাবে। তার ভাবা উচিত সে দলের দায়িত্ব নিতে এসেছে, এবং তার উপস্থিতি যেন সতীর্থদের পারফর্মেন্সের ব্যাঘাত না ঘটায়।

দলকে পরামর্শ দিয়ে আমারিলদো আরও বলেন, সত্যি বলতে গেলে, পরিবর্তনটা হয়তো দলের জন্য আরও ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে। কারণ এর ফলে দলের কৌশলে নতুন কিছু আসবে যা দলকে সমৃদ্ধই করবে। দলকে সুসংহত থাকতে হবে, পুরোটা সময় দলের ভেতরে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। বিশ্বকাপ জিততে হলে তাদের অবশ্যই অত্যন্ত সাহসী হতে হবে।

এখন দেখার বিষয় ব্রাজিল দল আবারও নতুন কোনো আমারিলদোর সাক্ষাৎ পায় কি-না। আর  আমারিলদোকো পেয়ে গেলে হয়তো এবারও লুইজ ফেরিপে স্কলারির শিষ্যরাই শেষ হাসি হাসবে!

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।