ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

সরকার জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়নি, নিজে থেকে বেড়েছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২২
সরকার জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়নি, নিজে থেকে বেড়েছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ঢাকা: বিশ্ব পরিস্থিতির বর্ণনা করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশের বাজারে সরকার কোনো কিছুর দাম বাড়ায়নি, নিজে থেকে বেড়ে গেছে।  

বুধবার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের মাল্টিপারপাস ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান ও শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

 

মন্ত্রী বলেন, বিএনপির সময়ে মধ্যে-মধ্যে বিদ্যুৎ আসত। ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তারা উৎপাদন করেছে। এখন তো ২৪ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে৷ পেট্রোলের দাম বেড়ে গেছে, ডিজেলের দাম বেড়েছে। এখন একটু লোডিশেডিং হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে পেট্রোলের দাম ৩ গুণ হয়ে গেছে। ডিজেলের দাম হয়ে গেছে ৩ গুণ। ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য, রাশিয়ান তেল সবাই কিনতে পারে না। তেলের দাম বেড়ে গেলে সব কিছুর দাম বাড়ে। সরকার কোনো কিছুর দাম বাড়ায়নি, নিজের থেকে দাম বেড়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, সারের দাম ৩ গুণ হয়েছে। তেলের দাম ৩ গুণ হয়েছে। আমরা তো বিষয়গুলো দেখছি। ইউকের মতো দেশে তারা একবেলা খাবার খাচ্ছে, ব্যয় বাঁচানোর জন্য। কাজেই, আমরা আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে।

বিদ্যুৎ ও দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ে বিএনপি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছে দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন,  সিলেটে বন্যা হলো, সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল, কোনো কিছুতেই বিএনপিকে আমরা দেখিনি। জিয়ার আমল থেকে এখন পর্যন্ত আমরা দেখেছি কিভাবে তারা লুটপাট করেছে, ক্ষমতার রাজনীতি করেছে।

জাহিদ মালেক বলেন, আজকে আমি আনন্দিত, আমরা আরেকটি ভবন উদ্বোধন করতে পেরেছি। প্রতিনিয়ত আমরা চেষ্টা করছি এই হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার। তার জন্য যা-যা লাগে ডাক্তার, নার্স, যন্ত্রপাতি আমরা ব্যবস্থা করছি। ভবিষ্যতেও করব।

তিনি বলেন, আমরা জানি ১৯৭৫ সালের এক রাতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের ১৮ জন শহীদ হয়েছেন। কিছু বিপৎগামী লোক সেদিন জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করে। এ ধরনের জঘণ্য অপরাধ পৃথিবীর কোথাও ঘটে নি, বাংলাদেশে ঘটেছে। জাতির জনকের ক্ষেত্রে তো আরও বিরল। এই হত্যার মধ্যে রয়েছে শেখ রাসেল, অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন তিনি জাতির জনকের। অবুঝ শিশু, তাকে হত্যা করার কি কারণ আমরা বুঝতে পারি না।  

তিনি আরও বলেন, এই ইনিস্টিটিউটটি শেখ রাসেলের নামে করা হয়েছ, আমি মনে করি এটি অত্যন্ত ভালো হয়েছে। হাসপাতাল নিয়ে লোকে প্রশংসা করে। আমরা চাই চিকিৎসার মান আরও বাড়ুক। এখান পর্যন্ত প্রায় ৫০০টি অপারেশন করা হয়েছে। অনেক ধরনের জটিল অপারেশন হয়েছে। আমি আশা করব, আপনাদের কাজ আরও বাড়াবেন। বিশেষায়িত চিকিৎসা আছে বলেই লোকে বিদেশে যায়, এটা অস্বীকার করার উপায় নাই। এর জন্য দোষারোপ করা যাবে না। দেশে চিকিৎসা নেই বলেই, তারা বিদেশে যাচ্ছে। আজকে বিশেষায়িত চিকিৎসা হচ্ছে গ্যাস্ট্রোলিভার, চক্ষু হাসপাতাল, বার্ন এন্ড প্লাস্টিক ইন্সটিটিউটে লোকজন আসছে৷ এখন দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে।

৮টি বিভাগে বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণাধীন জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ওখানে হাসপাতালগুলো চালু হলে লোকজন বাড়ি থেকে চিকিৎসা নিতে পারবে। ঢাকায় আসা লাগবে না। ৬টি নতুন মেডিকেল কলেজ তৈরি হয়ে গেছে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনেক উন্নতি হয়েছে, আরও হবে। সরকারি ওষুধ কারখানার একটা বড় প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জমি অধিগ্রহণ চলছে। ৫০ বছরের পুরোনো কারখানা দিয়ে কাজ হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, যে ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম, অর্থাৎ শেখ রাসেলের নাম জড়িত, কাজেই এখানে নিষ্ঠা, একাগ্রতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা যদি আমাদের মৃত্যুর কথা মনে রাখি, আমরা আমাদের কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান হব। আমরা মনে করি, আমাদের প্রচেষ্টা আমাদের সেবার মানকে আরও উন্নত করবে৷ যেখানে যে গ্যাপটুকু আছে, সেটা পূরণ করার অনুরোধ জানাই।  

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের সচিব সভাপতি ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২২, বেশি নয়, মাত্র ১৩ বছর। এই সময়ে কমিউনিটি মেডিকেল থেকে শুরু করে টারশিয়ারি হাসপাতাল পর্যন্ত চিকিৎসা সেবায় ব্যাপক উন্নতি করেছে।  

শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, শেখ রাসেলের মতো নিষ্পাপ শিশুকেও ঘাতকরা হত্যা করে। সেই শিশু সন্তান শেখ রাসেল আমাদেরই সমবয়সী। তার আচরণ যদি বিশ্লেষণ করেন, বুঝবেন সে আমাদের জন্য সম্পদ হতে পারত। আজকে যাদের টাকা-পয়সা আছে, তার অল্প কিছু হলেই বিদেশে চলে যান। যারা কথায়-কথায় চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যায়, তাদের বোঝান বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. সিরাজুল ইসলাম শিশির বলেন, আমরা প্রফেশনালি ডাক্তার। আমাদের সার্ভিসের মাধ্যমে শেখ রাসেলের নাম যেন ছড়িয়ে পড়ে সেরকম সার্ভিস দেবো।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. এম ইকবাল আর্সলান বলেন, শেখ রাসেল হাসপাতাল একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। আজকে যে মাল্টিপারপাস ভবন স্থাপিত হলো, এখানে ব্যবস্থাপনা যত বেশি স্মার্ট হবে, আমরা আমাদের কঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।


বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক মাহমুদ হাসান বলেন, জাতির জনক সারা বাংলাদেশের মানুষের ঐকান্তিক মঙ্গলের জন্য সারা জীবন কাজ করে গেছেন। তার স্বপ্ন পূরণে কন্যা শেখ হাসিনা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমরা যখন গ্যাস্ট্রোলজির হাসপাতালের চিকিৎসার প্রস্তাবনা নিয়ে যাই, তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, যে এই হাসপাতালটি যেন ব্যাতিক্রম হয় এবং সাধারণ মানুষ সু-চিকিৎসা নিতে পারে। আজকে এই ভবনের উদ্বোধন এই হাসপাতালের জন্য একটা মাইলফলক।  

এর আগে মন্ত্রী শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলজি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের নির্মিতব্য ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। এ সময় শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম কিবরিয়াসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২২
এমকে/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।