তারেক রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতাকর্মীরা দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। কঠিন সব মুখ ও মুহূর্তের মুখোমুখি হয়েছেন বিএনপি ও দলটির নেতাকর্মীরা।
কারো কারো নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের দেওয়া ৪৫০ মামলা! তবু জাতীয়তাবাদী আদর্শ থেকে একচুলও বিচ্যুত হননি দলের নিবেদিত প্রাণের কেউ।
কেউ সত্য ও সুন্দর বিনির্মাণের লক্ষ্যে নিশ্চিত গন্তব্য ঠিক করার পরও শত উপায়ে বিপদ প্রচ্ছন্ন হবে, এটি অযৌক্তিক নয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে দলে তারুণ্যের দারুণ সম্মিলন ঘটিয়েছেন। সবার মতো তিনিও জানেন, তরুণ মানে আগামী দিন।
বর্তমানে তরুণ প্রাণের অধিকারী তারেক রহমানও আছেন দলটির নেতৃত্বে। পরিণত চিন্তায় তিনি আজ প্রাজ্ঞ, ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে তিনি বিজ্ঞ, রাষ্ট্র পরিচালনায় এই মুহূর্তে সবচেয়ে অভিজ্ঞও। প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতি হওয়া কারো কারো স্বপ্ন হলেও তারেক রহমানের কাছে সেটি হবে অতিবাস্তব দায়িত্ব। যখন কাজকে কেউ দায়িত্ব মনে করে, তখন কাজটি পরিপূর্ণ স্বচ্ছ, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন হয়।
তা ছাড়া ব্যক্তি তারেক রহমান মানুষের জন্যই রাজনীতি করছেন। যখনই যেখানে বিপদ, তখনই তিনি সেখানে দলীয় বিশ্বস্ত নেতা পাঠিয়ে সমাধানের আপ্রাণ চেষ্টা করে চলছেন। শুধু তা-ই নয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে এরই মধ্যে সাড়ে চার হাজার কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কারও করেছেন।
০২.
বাংলাদেশে আগামী দিনের রাষ্ট্র পরিচালনা কোনো প্রধানমন্ত্রীর জন্যই সহজ হবে না—এ কথা ধ্রুব সত্য। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলার মানুষের জান ও জবানের ভীতি কমে গেছে।
যে জাতি মরতে জানে, তাদের মারা যায় না। এখন সবাই তথ্য-প্রযুক্তিতে সক্রিয়, এআই প্রযুক্তি মানুষের বিকল্প হয়ে সামনে এসেছে, গণতন্ত্রের সুরক্ষা ও সঠিক লাইনে নেতৃত্ব, বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা, সমাজতন্ত্র ও ইসলাম অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুতায়ন করাও পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হবে।
আইন-শৃঙ্খলার বাস্তবায়ন, মব জাস্টিস নিয়ন্ত্রণ, সাম্য, ন্যায়বিচারের সমাজ ও আইনের ভিত্তি তৈরি, পারস্পরিক সুসম্পর্কের ভিত্তি ও মানবিক সমাজ গঠন, অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক শত্রুর হাত থেকে ক্ষমতা ও গণতন্ত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দৃঢ়তার সঙ্গে কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ। বৈশ্বিক সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনীতি কেমন হবে, তা নিয়েও সূক্ষ্ম পরিকল্পনার বাস্তবায়ন জরুরি হবে। একটি ধ্বংসপ্রায় রাষ্ট্রকে সফলতার শীর্ষে নিতে কেমন পরিকল্পনা হবে, তার নীতি নির্ধারণও জরুরি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তারেক রহমান দেশবাসীকে সব ধরনের উগ্রতা পরিহারের পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি বিএনপিকর্মীদের বলেন, ‘প্রতিশোধ নেওয়া কোনো রাজনীতিবিদদের কাজ নয়। ’ অথচ ওয়ান-ইলেভেন থেকে গণ-অভ্যুত্থান এই সময়ে তারেক রহমান নানাভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছেন, দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছেন, অসংখ্য সাজানো মামলার আসামি হয়েছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচার হয়েছে, সাজা দেওয়া হয়েছে, বহু আবেদন করেও পাসপোর্ট পাননি, অরাজনৈতিক ব্যক্তি হওয়ার পর স্ত্রী জোবাইদা রহমান একের পর এক মিথ্যা মামলার আসামি হয়েছেন! একমাত্র মৃত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে নিয়েও নোংরামি ও মিথ্যাচার করা হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, সেই তিনিই ৫ আগস্টের পর দলীয় কর্মীদের খুশি করতে কিংবা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য দেননি। বিষোদগারও করেননি।
অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে তারেক রহমান মানুষের সহমর্মিতা আদায়ে তাঁর ওপর নির্যাতনের সব ফিরিস্তি বারবার জাতির সামনে তুলে ধরার কথা। অথচ এ বিষয়ে সম্পূর্ণরূপে চুপ। দল, দেশ ও জাতীয় স্বার্থে কথা বললেও নিজের ও পরিবারের ওপর করা অত্যাচার নিয়ে একবারের জন্যও আওয়াজ তোলেননি, বরং পরিপূর্ণ ও পরিণত রাজনীতিবিদ হিসেবে জাতির সামনে হাজির হয়েছেন। নিজেকে তৈরি করেছেন ভিন্ন ভাবমূর্তিতে। এই সময়ে জাতির বৃহৎ স্বার্থে তারেক রহমানও নিজেকে ভেঙেছেন, গড়েছেন এবং অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে শাণিত করেছেন।
রাষ্ট্রের কিছু বিষয়ে যেকোনো ক্রাইসিস মোমেন্টে সব নাগরিককেই এক ছাতার নিচে দাঁড়াতে হবে। এর মধ্যে প্রধান হলো দেশের সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি এবং বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকা। নির্বাচিত সরকারপ্রধানকে এই বিষয়গুলো নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।
সম্প্রতি রাষ্ট্র সংস্কার প্রশ্নে অনেকগুলো পর্যবেক্ষণ অন্তবর্তী সরকারের ঐকমত্য কমিশন সামনে নিয়ে এলেও সংস্কার আসলে অধরাই রয়ে যাচ্ছে, যদিও তারেক রহমানের ভাষায় এসব সংস্কারের ৯৯ শতাংশ বিএনপি আড়াই বছর আগেই জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে। এর মানে ক্ষমতার বাইরে থাকার পরও রাষ্ট্রভাবনা তারেক রহমানকে তাড়িত করেছে। তাই বলা যেতে পারে, বিএনপির প্রণীত সংস্কার, জনগণের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে তারেক রহমান যদি জাতির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের চাওয়াটা বাস্তবে রূপ নেওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। অর্থাৎ তারেক রহমানই হবেন ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী।
লেখক : কবি ও কথাসাহিত্যিক