ঢাকা:নিহত গার্মেন্ট শ্রমিকনেতা আমিনুল ইসলামের মেয়ে সায়মা আক্তার আঁখি বলেছেন, এই গুম ও হত্যার বিচার না হলে আমার বাবার মতো আরও অনেকের বাবা গুম হতে পারে। এভাবে কেন আমার বাবাকে হত্যা করা হলো? তার তো কোনো অপরাধ ছিলো না।
আঁখি বলেন, আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই। বাবাকে কয়েকবার পুলিশের লোক অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল। পরে তাকে গুম করা হয়। আমরা পরে তার লাশ পাই। আমরা এখন এতিম। আমাদের কী দোষ ছিলো?
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে `কমিটি ফর জাস্টিস ফর আমিনুল ইসলাম` গঠন অনুষ্ঠানে আমিনুলের মেয়ে তার বাবাকে নিয়ে এসব মর্মস্পর্শী কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা জোয়ানা সেংকি, ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) এর প্রধান কারিগরি উপদেষ্টা রব ওয়েস, সুইডেন দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি লুডোভিক বন্টেল ও দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
বাংলানিউজকে সায়মা আক্তার আঁখি বলেন, ``হিলারি ক্লিনটন আসার পর আমার বাবা আমিনুল ইসলামকে নিয়ে সব মিডিয়া হইচই করেছে। এখন আর সেরকম কিছু লিখে না। প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীরা বিষয়টি তদন্ত করার কথা বলেছিলেন হিলারির কাছে। কিন্ত এখনো আমরা বিচার পাইনি। কেউ আমাদের সহায়তা করেনি। ``
আমিনুলের মেয়ে বলেন, ``আমার বাবার জন্য এর আগেও নানা জায়গায় আলোচনা হয়েছে। আমার বাবা সাধারণ শ্রমিক ছিলেন। তিনি কোনো দলের রাজনীতি করতেন না। তিনি শ্রমিকদের জন্য কাজ করেছেন, নিজের জন্য করেননি। তাহলে তাকে কেন গুম করা হয়েছে, কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে?``
আলোচনাসভায় আমিনুলের স্ত্রী হুসনে আরা বেগম ফাহিমাসহ ৩ সন্তান অংশ নেন। আমিনুলের মেয়ে সায়মা আক্তার আঁখি, ছেলে আব্দুল কাইয়ুম রাকিব ও আব্দুল হাই সাকিব উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ৪ই এপ্রিল ঢাকার সাভার থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর টাঙ্গাইল থেকে আমিনুলের লাশ উদ্ধার করা হয়। ৫ এপ্রিল বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয় আমিনুলের মৃতদেহ। পরে পত্রিকায় ছবি দেখে পরিবারের সদস্যরা তাকে চিহ্নিত করেন। এরপর কবর থেকে লাশ তুলে পুনরায় তাকে দাফন করা হয়। ৪১ বছর বয়সী আমিনুলের মৃতদেহে চরম নির্যাতন ও মারধরের চিহ্ন দেখা গেছে বলে পরিবার দাবি করে।
কমিটি ফর জাস্টিস: আমেরিকান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল লেবার সলিডারিটির সিনিয়র আইন কাউন্সিলর, একেএম নাসিম এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার কমিটির কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশ ফেডারেশন অফ ওয়ার্কার্স সলিডারিটির সাধারণ সম্পাদক, রুহুল আমীন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আক্তার, আমিনুলের কন্যা সায়মা আক্তার আঁখি, আমেরিকান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল লেবার সলিডারিটি প্রোগ্রাম অফিসার রোখসানা ইয়াসমিন আরজু।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়াকার্র্স সলিডারিটি (বিসিডব্লিউএস), বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশন (বিজিআইডব্লিউএস) ও আমেরিকান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল লেবার সলিডারিটি সেন্টার যৌথভাবে এই কমিটি গঠনের উদ্যোক্তা।
কমিটি পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তাগণকে সম্ভাব্য সহযোগিতা প্রদান করে হত্যাকারীদেরকে খুঁজে বের করার এবং হত্যাকারীদেরকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করার জন্য সম্ভাব্য সব সহযোগিতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
অনুষ্ঠানে `কমিটি ফর জাস্টিস ফর আমিনুল ইসলাম` এর কার্যক্রমে ট্রেড ইউনিয়ন ও মানবাধিকার সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করে।
সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার, আমেরিকান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল লেবার সলিডারিটির সিনিয়র আইন কাউন্সিলর একেএম নাসিম, বাংলাদেশ ফেডারেশন অফ ওয়ার্কার্স সলিডারিটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন, বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আক্তার, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার, বাংলাদেশ পোশাকশিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম, গামের্ন্ট শ্রমিক শিল্প রক্ষা জাতীয় কমিটির সমন্বয়ক গোলাম কাদির, জাতীয় গামের্ন্ট শ্রমিক জোটের সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন, গণতান্ত্রিক গামের্ন্ট শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি আলমগীর রনি।
এছাড়াও শ্রমিক নেতা বজলুল হুদা নিজাম, মরিয়ম, আবুল হোসাইন, মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, মাইনুদ্দিন মণ্ডল, নাজমা আক্তার, তাহমিনা রহমান, শফিউল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আলোচনাসভায় বক্তারা অবিলম্বে আমিনুল হত্যাকাণ্ড তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। কর্মসূচি থেকে আমিনুলের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, গামের্ন্টস শ্রমিকদের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, শ্রমিকনেতা আমিনুল ইসলাম হত্যার তদন্ত করতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছে। আমিনুল ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির একজন সংগঠক এবং বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সাভার ও আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি।
- আমিনুল হত্যাকারীদের গ্রেফতার তাগিদ দিলেন মজিনা
- গামের্ন্টস শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যার বিচার দাবি
- আমিনুল হত্যাকাণ্ড বিদেশিরা ভালোভাবে নেননি : একে আজাদ
- যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পোশাক হুমকিতে পড়তে পারে: মজিনা
- আমিনুল ইস্যুতে ন্যায় বিচার চায় বিজিএমইএ
বাংলাদেশ সময় ১১৪০ ঘন্টা, ০৯ জুন, ২০১২
এমআইআর/একে
সম্পাদনা:জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর
[email protected]