ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

৪০০ কোটি টাকা কোথায় পেলেন মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান!

সাইদ আরমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১২
৪০০ কোটি টাকা কোথায় পেলেন মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান!

ঢাকা: ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে মেঘনা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আশিকুর রহমান। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি আয় এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের যে বিবরণ দিয়েছেন এই বিপুল বিনিয়োগের সঙ্গে তার মিল নেই।

তাহলে এত টাকা তিনি কোথায় পেলেন! এরই মধ্যে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন।

মেঘনা ব্যাংকের প্রস্তাবিত চেয়ারম্যান আশিকুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনের সময় এইচ এন আশিকুর রহমান ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ছিলেন। তখন তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে তিনি তখন কোটি কোটি টাকার পাহাড় গড়ে তোলেন। দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সামরিক আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

সিটি করপোরেশন থেকে দুর্নীতির আশ্রয়ে অর্জিত টাকায় পরবর্তী সময়ে তিনি গড়ে তোলেন ব্যবসা-বাণিজ্য। রংপুরের মিঠাপুকুরে পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে তার বেশ কয়েক বিঘা জমি রয়েছে। এছাড়াও তিনি ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির একজন পরিচালক। ঢাকায় তার বেশ কয়েকটি বাড়ি রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এইচএন আশিকুর রহমান নির্বাচনের হলফনামায় নিজের এবং তার ওপর নির্ভরশীলদের আয়ের উৎস দেখিয়েছেন কৃষি। যেখান থেকে বার্ষিক আয় ৩৬ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে বছরে তার আয় ৬ লাখ টাকা। চাকরির বেতন এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। ভাতাদি একই পরিমাণ। তার কোন শেয়ার বিনিয়োগ, সঞ্চয় নেই। নেই ব্যাংক আমানত।

অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ব্যাংকে এক লাখ ৫২ হাজার টাকা রয়েছে বলে আশিকুর রহমান তার বিবরণীতে উল্লেখ্ করেছেন। তবে তার হিসাবের চেয়ে তার স্ত্রীর হিসেবে বেশি সম্পদ রয়েছে বলে তিনি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে ছিলেন। তার স্ত্রীর হিসেবে ২৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা রয়েছে।

তথ্যমতে, তার স্বর্ণ রয়েছে ৪০ তোলা। আর স্ত্রীর ১২৫ তোলা।

আশিকুর রহমান তার দায় হিসেবে দেখিয়েছেন বাড়ি নির্মাণ বাবদ ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে তার স্থাবর সম্পত্তির মূল্য কোটি টাকার ওপরে।

নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় তার সম্পদের যে বিবরন দিয়েছেন তার সঠিক মূল্য জানা যায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধি মোতাবেক ১৩ জন বোর্ড সদস্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে রাখা হলে প্রত্যেক সদস্যকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন বাবদ দিতে হবে ৩০ কোটি টাকা। যার আয়ের উৎস হতে হবে বৈধ।

তবে তার ঘোষিত সম্পদের মূল্য অবশ্যই এই পরিমাণ টাকা হবে কিনা সন্দেহ আছে। তাই আশিকুর রহমানের ব্যাংক প্রতিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।  

আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে ৬টি দেশিয় উদ্যোক্তাদের মালিকানায়। আর ৩টি প্রবাসী বাংলাদেশিদের মালিকানায়। দেশীয় উদ্যোক্তাদের মালিকানায় যে ৬টি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে চারটিই হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের সংসদ সদস্যদের মালিকানায়।

অনুমোদন পাওয়া ৬ ব্যাংকের মধ্যে মেঘনা ব্যাংকের প্রস্তাবিত চেয়ারম্যান রংপুর-৫ আসনের এমপি এইচ এন আশিকুর রহমান। তার সঙ্গে রয়েছেন ঢাকা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নসরুল হামিদ বিপু। আশিকুর রহমান আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জানা গেছে, শিগগিরই তিনি তার ব্যাংকের বিস্তারিত প্রস্তাবনা পরিশোধিত মূলধনসহ জমা দিতে যাচ্ছেন।  

এইচএন আশিকুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, মেঘনা ব্যাংকের জন্য এরই মধ্যে করপোরেট অফিস ভাড়া করা হয়ে গেছে। এছাড়া ঢাকাতে আরো তিনটি শাখা প্রাথমিক ভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে শুরু করে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের।    

তথ্য মতে, ঢাকা-১২ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের ব্যাংকের নাম মধুমতি ব্যাংক, চাদপূর-১ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন খান আলমগীর পেয়েছেন ফারমার্স ব্যাংকের অনুমোদন। তিনি সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিও।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১২
এসএআর/সম্পাদনা: আহমেদ রাজু, চিফ অব করেসপন্ডেন্টস ; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।