ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

শাশুড়ি দেবর ননদদের প্রতি শাওন

কী এমন ঘটল যে আমি তাদের পাশে অনুপস্থিত?

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১২
কী এমন ঘটল যে আমি তাদের পাশে অনুপস্থিত?

অনেক না-বলা-কথার-ঝাঁপি খুলে দিয়েছেন প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তাকে ঘিরে আলোচনা-সমালোচনা আর বিতর্কের বিষয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন এই প্রথম।



জানিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদের মেজ ভাই লেখক ও অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাকে কখনোই গ্রহণ করতে পারেননি। শাশুড়ি তার সুখে-দুখে সবসময় পাশে থাকলেও হুমায়ূন মারা যাওয়ার পর হঠাৎ করে দূরে চলে গেছেন। দাবি করেছেন, আগের পক্ষের মেয়েদের সঙ্গে দূরত্ব থাকলেও ছেলে নুহাশের সঙ্গে কোনো দূরত্ব ছিল না। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কী এমন ঘটল যে আমি তাদের পাশে অনুপস্থিত?

তিনি আরও দাবি করেছেন, বিত্ত-বৈভব কিংবা খ্যাতির জন্য নয়, নিঃসঙ্গ হুমায়ূন আহমেদের পাশে দাঁড়ানোর তাগিদেই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া। আর এ ক্ষেত্রে হুমায়ূনের আহ্বানই ছিল প্রবল।

সোমবার দিবাগত রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের তৃতীয় মাত্রায় অতিথি হয়ে এসে তিনি প্রকাশ করেছেন অনেক অজানা কথা, ক্ষোভ আর অভিমান।

তিনি দাবি করেছেন হুমায়ূন আহমেদের দাফন-বিড়ম্বনায় কখনোই কোর্টে যাওয়ার কথা বলেননি। শীলা আহমেদের সঙ্গে অভিনয় করলেও তার‍া ক্লাশমেট ছিলেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি। পাঠকদের জন্য ওই টক শোর কথোপকথনের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হলো।

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর পুরোপুরি পাল্টে যাওয়া বর্তমান জীবন সম্পর্কে জ‍ানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখন আমি ভালো নেই। ভালো থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনার কারণে হুমায়ূনের সঙ্গে বৈবাহিক জীবনে ভালো থাকার কথা ছিল না, তারপরও ভালো ছিলাম। কারণ ভালো থাকার জন্য আমার সঙ্গে চমৎকার মনের খুব শক্ত মানসিকতার একজন মানুষ ছিলেন। ”

ছেলে নিনিত ও নিশ‍াদের বিষয়ে বলেন, “যতটুকু ভালো থাকা সম্ভব ওরা ততটুকু ভালো আছে। ছোটটি এখনও কিছু বোঝে না। সেলফোন হাতে নিয়ে সে এখন বাবার সঙ্গে কথা বলে। বাবার ছবি দেখে, চুমু খায়। বড়টা বাবার মতোই। সবার সঙ্গে ওর মনের কথা শেয়ার করে না। ”

হুমায়ূন আহমেদের প্রথম পক্ষের চার সন্তানের কথা জানতে চাইলে তিনি অল্প কথায় বলেন, “আসলে ভালো থাকার কথা না। ওদের বাবা নেই, নিশ্চয় মনে খুব কষ্ট থাকার কথা। ”

হুমায়ূন আহমেদ নেই কিন্তু সামনে পড়ে আছে অনেক সময়। জীবনের এই লম্বা সময়টায় নিজের পরিচয় সম্পর্কে বলেন, “স্থপতি, সংগীতশিল্পী বা অভিনেত্রী নয়, আমি হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী— এ পরিচয়টা আমার সব সময় থাকবে। এ পরিচয় আমার হৃদয়ের খুব কাছের একটি পরিচয়, আমার খুব অহঙ্কারের একটি পরিচয়। আমি হুমায়ূন আহমেদের পাশে যেভাবে ছিলাম, যেভাবে আছি, সেভাবেই থাকব বাকিটা জীবন। ”

কবে কোথায় হুমায়ূন আহমেদের ক্যান্সার ধরা পড়লো তা জানতে চাইলে শাওন জানান, হুমায়ূন আহমেদ ডাক্তারের কাছে যেতে ভয় পেতেন। ২০১১ সালে মায়ের নি রিপ্লেসমেন্ট করাতে সিঙ্গ‍াপুরে গিয়ে ওর চেকআপ করাতে গিয়েই কোলোন ক্যান্সারের বিষয়টি ধরা পড়ে।

তিনি জানান, হুমায়ূন আহমেদ অসুস্থ অবস্থায় বলেছিলেন, “আমি মারা গেলে আমাকে নিয়ে অনেক টানাটানি হবে। প্লিজ আমাকে নিয়ে টানাটানি করতে দিও না। নুহাশ পল্লীতে নিয়ে শুইয়ে রেখ। ”

এ প্রসঙ্গ টেনে শাওন বলেন, “আমাকে উনি যে কথাটি বলে গেছেন, আমার দায়িত্ব উনার সেই কথাটা রাখা। উনি নুহাশপল্লীকে কত ভালোবাসতেন এটা আমি জানি, আমি উনার সঙ্গে মিশেছি, তার পরিবারের প্রত্যেকটি লোক জানেন। হুমায়ূন নুহাশপল্লীকে কতটা ভালোবাসতেন, আমি নিশ্চিত আমার চেয়ে একটু বেশি হলেও জানেন ওনার মা। ওনার শেষ কথাটি যদি আমি রাখতে না পারতাম, আমি সারা জীবন ওনার কাছে ছোট হয়ে থাকতাম। ”

হুমায়ূন আহমেদের দাফন নিয়ে জটিলতার পর কোর্টে যাওয়ার হুমকি প্রসঙ্গ উঠলে তিনি জানান, বিষয়টি তিনি জানতেন না এবং এমন কথা তিনি মনের ভুলেও বলেননি।

এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ ঢাকায় আনা, বিমানের বিজনেস ক্লাসের টিকিট চাওয়াসহ বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয় নিয়ে তিনি নিজের যুক্তি তুলে ধরেন। আর এসব বিষয় মিডিয়ায় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তার দাফন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে তার আগের পরিবারকে ইঙ্গিত করে শ‍াওন বলেছিলেন, ‘তখন সবাই কোথায় ছিল? তার এ কথ‍া মিডিয়ায় ঝড় তোলে। এ প্রসঙ্গে শাওন বলেন, “আমি বলেছি। কারণ হুমায়ূন আহমেদের কষ্টটা আমি দেখেছি। এটার একটা কারণও ছিল। বাচ্চারা তার বাবার ওপর অভিমান করবেই। কিন্তু তাদের বাবার কষ্টটা আমি দেখেছি। সেই কারণেই তখন বলেছিলাম, এতদিন কোথায় ছিল। ”

হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে বয়সের পার্থক্য ও সামাজিক অবস্থান ও মূল্যবোধের দিক থেকে সম্পর্কের বিষয়ে তিনি জানান, বিষয়টি কতটা অভিপ্রেত আর কতটা অনভিপ্রেত তা নিয়ে তিনি চিন্তা করেননি। নিঃসঙ্গ হুমায়ূন তাকে পাশে চেয়েছিলেন বলেই ...

কিন্তু হুমায়ূনের নিঃসঙ্গ হওয়ার পেছনে তিনি দায়ী নন বলে দাবি করেন। তবে কে দায়ী, সে প্রশ্নের উত্তর তিনি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, “আমি এখনো বলছি, আমি সত্যি জানি না ঠিক কি কারণে হুমায়ূন আহমেদের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছিল। ”

হুমায়ূন আহমেদের পাশে দাঁড়ানোর আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা কোথায় ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এই কনফিডেন্সের উৎস একজনই। একজন হুমায়ূন আহমেদ। যিনি চাইলে অনেক কিছু করতে পারেন। কিন্তু করতে পারতেন না। আমি এরকম ফিল করেছি। তিনি আমাকে এ রকমটা ফিল করিয়েছেন, তার পথচলার একজন সঙ্গী দরকার। ”

বিত্ত-বৈভব আর খাতির অংশীদার হতেই আপনি তার সঙ্গী হয়েছিলেন কি-না, এ প্রশ্নের উত্তরে শাওন জানান, জাতীয় পুরস্কার পাওয়া একজন শিশুশিল্পী হিসেবে তিনি নিজেই অনেকদূর যেতে পারতেন।

আর বিত্তের প্রসঙ্গে বলেন, “আমার মা একজন সংসদ সদস্য। আমার বাবা একজন ইঞ্জিনিয়ার, শিল্পপতি। হুমায়ূন আহমেদ নিজেই বলতেন, শাওনের বাবা চাইলে দশটা হুমায়ূন আহমেদ কিনতে পারেন। ”

তিনি জানান, ছেলে নুহাশের সঙ্গে ওর বাবার কোনো দূরত্ব ছিল না। নুহাশ তার বাবার মধ্যে সব সময় দেখা হতো। ঈদের নামাজ একসঙ্গে পড়তো। ইউরোপ ট্যুরে নুহাশ তাদের সঙ্গেই ছিল।

মেয়েদের সঙ্গে দ‍ূরত্ব কমিয়ে আনতে তার চেয়ে হুমায়ূন আহমেদেরই চেষ্টা বেশি ছিল, তবে এ বিষয়ে তিনি হুমায়ূনকে প্রভাবিত করেছেন বলে দাবি করেন।

হুমায়ূন আহমেদের পরিবার তার মা-ভাই বোনদের কাছে সাবেক স্ত্রী গুলতেকিনের গ্রহণযোগ্যতা আর তার গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে শাওন দুঃখ প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিয়ে তারও প্রশ্ন আছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ প্রশ্ন আমি শাশুড়ি, ননদ আর দেবরদের কাছে করতে চাই। ”

তবে হুমায়ূনের ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল সম্পর্কে তিনি বলেন, “ওনার কাছে আমি অনেক আগে থেকেই অনভিপ্রেত ছিলাম। আমার বিয়ে হয়েছে ৮ বছর। উনাকে আমি আমার বাসায় আসতে কখনোই দেখিনি। তাই উনাকে আমি এই প্রশ্ন করব না। ”

শাশুড়ি প্রসঙ্গে বলেন, “আমার শাশুড়ি তো আমার সঙ্গে অনেক দিন ছিলেন। আমাদের বাসা দখিন হাওয়ায় থেকেছেন। ঈদে আমরা একসঙ্গে দখিন হাওয়ায় থেকেছি। আমার বাচ্চা হওয়ার সময়, হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে, বাচ্চাদের জন্মদিনে, বাচ্চাদের আকিকায়, আমার জন্মদিনে শাশুড়ির জন্মদিনে এগুলো সব আমার বাসায় হয়েছে। আমার শাশুড়ির জন্মদিনে রাত ১২টা ১ মিনিটে আমরা আমার বাসায় কেক কেটেছি। আমার শাশুড়ির সঙ্গে কাটানো আমার চমৎকার কিছু মুহূর্তের ছবি আছে। এগুলো তো আসলে প্রমাণ দেওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়। কী আর বলব। ১৯ জুলাইয়ের আগের রাতেও যার সঙ্গে প্রতিদিন দুই বেলা কথা হতো এর মধ্যে কী এমন ঘটল যে আমি তার পাশে অনুপস্থিত? তারপরও আমি তার স্ত্রী হিসেবেই বাঁচতে চাই।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১২
এজে; সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।