ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

১৩ কেজি স্বর্ণপাচার

স্ক্যানিং অপারেটর রেখা পারভীনকে খুঁজছে পুলিশ

জাহাঙ্গীর সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১২
স্ক্যানিং অপারেটর রেখা পারভীনকে খুঁজছে পুলিশ

ঢাকা: শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাড়ে ১৩ কেজি স্বর্ণ আটকের ঘটনায় সিভিল এভিয়েশনের লাগেজ স্ক্যানিং অপারেটর রেখা পারভীনকে  খুঁজছে গোয়েন্দা পুলিশ।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, তাদের কাছে তথ্য রয়েছে এই রেখা পারভীনই স্বর্ণ চোরাচালানের মূল সহযোগী।



বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার পরপরই চার দিনের ছুটি নেন রেখা। কিন্তু ছুটি শেষ হলেও কাজে আর যোগ দেননি । গ্রেফতার হবার ভয়ে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলেই ধারণা করছে গোয়েন্দা পুলিশ।

গত ১০ সেপ্টেম্বর স্বর্ণ পাচারের বড় এই চালানটি ধরা পড়ার পর এর সঙ্গে জড়িত  অভিযোগে চালানটির বাহক মনোয়ারুল হক, পাচারকারী দেব কুমার দাশ ওরফে দেবু, সিভিল এভিয়েশনের সিনিয়র নিরাপত্তাকর্মী আবুল কালাম এবং গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই-এর ফিল্ড অফিসার আব্দুল আজিজ শাহকে গ্রেফতার করেছে। আজিজ শাহ বিমানবন্দর থেকে স্বর্ণের চালানটি বাইরে বহন করার দায়িত্বে ছিলেন।

সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া ৪জনই স্বর্ণ পাচারের কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ১০ সেপ্টেম্বর দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুবাই থেকে আসা একটি ফ্লাইটের টয়লেটে বিশেষ কায়দায় পলিথিন মোড়ানো একটি প্যাকেটে ১১৭টি সোনার বার উদ্ধার করেন বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের এএসপি মিনহাজ। যার আনুমানিক মূল্যে ৭ কোটি ২ লাখ টাকা। এসময় মনোয়ারুল হক নামে এক যাত্রীকে আটক করা হয়।

এঘটনায় ওই দিনই বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে এপিবিএন কর্তৃপক্ষ।

মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে। পরে গোয়েন্দা পুলিশ ১১ সেপ্টেম্বর মনোয়ারকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করের।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রিমান্ডে মনোয়ারুল স্বর্ণের আমদানিকারক হিসেবে চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের স্বর্ণ ব্যাবসায়ী দেব কুমার দাশের কথা উল্লেখ করেন। তার নির্দেশনাতেই দুবাই থেকে চালানটি আনা হয় বলেও জানান মনোয়ার।

মনোয়ারের বরাত দিয়ে সূত্রটি আরও জানায়, চালানটি আনার জন্য তাকে হুন্ডির মাধ্যমে দুবাইয়ে টাকা পাঠান দেব কুমার। সেই টাকায় দুবাইয়ে স্বর্ণ কিনে একদিন  পরই  তা নিয়ে আসেন ঢাকায়। এজন্য তাকে ফ্লাইটের রিটার্ন টিকেট ছাড়াও পারিশ্রমিক হিসেবে ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা।

দেবকুমারের জন্য এভাবে প্রায়শই চালান আনতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান মনোয়ার।

জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে নিয়মিত এই চোরাচালানে তাকে  সহযোগিতা করে আসছেন বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশনের লাগেজ স্ক্যান অপারেটর রেখা পারভীন।  

মনোয়ারের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ বাংলানিউজকে জানায়, রেখা পারভীন বিমানবন্দরের প্রবেশপথ থেকে বিমানে ওঠা পর্যন্ত প্রত্যেক স্তরে লোক দিয়ে দিয়ে সহযোগিতা করে স্বর্ণের চালানগুলো পার করে দেন। আর স্বর্ণ নিয়ে আসার পর বিমানবন্দরের বোর্ডিং ব্রিজের টয়লেট থেকে সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তাকর্মী আবুল কালাম ও গোয়েন্দা সংন্থা এনএসআই এর ফিল্ড অফিসার আব্দুল আজিজ শাহ মিলে চালানগুলো বিমানবন্দরের বাইরে আসকোনা হাজি ক্যাম্প এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যান। পরে স্বর্ণের চালান সুবিধা মতো নিয়ে যান দেব কুমার। নিজের কৃতকর্মের কথা স্বীকার করে মনোয়ারুল ১৮ সেপ্টেস্বর আদালতে ১৬৪ধারায় জবানবন্দি দেন।
airport-Gold-bg
তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ উত্তরা এলাকা থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর দেব কুমার দাশকে গ্রেফতার করে। ২০ সেপ্টেম্বর আদালত তার ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। ডিবি জিজ্ঞাসাবাদে দেব কুমার সোনা চোরাচালানের কথা স্বীকার করেন এবং তার সাথে রেখা পারভীনসহ নিরাপত্তাকর্মী কালাম ও এনএসআই এর ফিল্ড অফিসার আব্দুল আজিজ শাহের সম্পৃক্ততার কথা বলেন। গত ২ অক্টোবর আদালতে এই স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেন দেব কুমার।  

এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর ডিবি পুলিশ  বিমানবন্দরের গোল চত্বর থেকে সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তাকর্মী আবুল কালামকে গ্রেফতার করে। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকেও রিমান্ডে নেওয়া হয়।

গোয়েন্দা সূত্র জানায় আবুল কালামও রিমান্ডে জানান, রেখা ও আজিজ তাকে দিয়ে স্বর্ণ পাচারের কাজ করিয়ে বিনিময়ে রেখা প্রতি চালানে মোটা অংকের টাকা দিতেন। ২৯ সেপ্টেম্বর কালাম  আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

এদিকে, স্বর্ণপাচারের  গোয়েন্দা সংন্থা এনএসআই সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ায় ওই সংস্থার কর্তৃপক্ষ ফিল্ড অফিসার আব্দুল আজিজ শাহ কে চাকরী থেকে বরখাস্ত করে ২৫ সেপ্টেম্বর ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। ডিবি হেফাজতে  আব্দুল আজিজ শাহ  বিমানবন্দরের বোর্ডিং ব্রিজ থেকে স্বর্ণ পাচারের কথা স্বীকার করেন এবং ২৭ সেপ্টেম্বর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোল্লাহ নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, এ মামলায় ঘটনার মূল হোতা  সিভিল এভিয়েশনের লাগেজ স্ক্যান অপারেটর রেখা পারভীনকে খুঁজছে পুলিশ, গত কয়েক দিনে কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়েও তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

তবে ২/৪ দিনের মধ্যে গ্রেফতারের সম্ভাবনা রয়েছে বলে ডিসি-ডিবি দাবি করে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সিভিল এভিয়েশনের সামান্য লাগেজ স্ক্যান অপারেটর রেখা পারভীন বিমানবন্দরে চাকরি করে অবৈধ সোনা চোরাচালানে সিন্ডিকেটকে সহযোগিতা করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।   লাগেজ স্ক্যান অপারেটর হয়েও উত্তরায় সাড়ে ৩ কোটি টাকায় দুটি ফ্ল্যাট, গাজীপুরে ১২ কাঠার জমি ছাড়াও নিজে চড়ে বেড়ান  কালো একটি অ্যালিয়ন গাড়িতে।   একছেলে এক মেয়ের মা রেখা পারভীন থাকেন উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর রোডের একটি আলিশান ফ্ল্যাটে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ঘটনার দিন থেকে রেখা চার দিনের ছুটি নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে তাকে গ্রেফতারের জন্য হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে ডিবি পুলিশ।

এবিষয়ে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোল্লাহ নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, স্বর্ণের চালানটি আটকের ঘটনায় ডিবি পুলিশ সর্বাধুনিক প্রযুক্তি-সুবিধা ব্যবহার করে এ ঘটনার সাথে জড়িত রেখা পারভীনকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।

রেখা পারভীনকে গ্রেফতার করা গেলে সোনা পাচারে জড়িত বড় একটি সিন্ডিকেটের সন্ধান পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী মোল্লাহ নজরুল।

বাংলাদেশ সময়১১৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১২
জেএস/এমএমকে; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।