ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

`খান` ইজ নট অ্যা প্রবলেম

মাহমুদ মেনন<br>হেড অব নিউজ, বাংলানিউজ<br>নিউইয়র্ক থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১২
`খান` ইজ নট অ্যা প্রবলেম

নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে ইমিগ্রেশনে চূড়ান্ত ভাবে হেনস্তা হওয়ার সব প্রস্তুতি রেখে শেষ পর্যন্ত রিতিমতো হতাশ হতে হলো। পাসপোর্ট বা ভিসায় প্রথমেই সারনেম বা ফ্যামিলি নেম লেখার নিয়মের কারণে ‘খান’ শব্দটি আমার নামের একটি অনিবার্য অংশ।

বলা যায়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নামের কোন অংশটি প্রধান তার বিবেচনা সব দেশে সমান নয়। তবে আন্তর্জাতিক স্টাইলের সঙ্গে বাংলাদেশের স্টাইলে অমিল রয়েছে। তাই গোটা ভ্রমণে আমি অধিকাংশ সময়েই ‘খান’ এবং কখনো কখনো ‘মাহমুদ’ নামে সম্বোধিত হলাম। তাবত বিশ্বের যে গুটি কয়েক মানুষ আমাকে চেনেন ও ডাকেন তারা কেউ কখনোই এই দুটি নামে আমাকে ডাকেননি। আর সাধারণ লেখালেখিতে ‘খান’ শব্দটির ব্যবহার অনেক আগেই বাদ দিয়েছি।

এই খান নিয়ে ইমিগ্রেশনে খান-খান হতে হবে এমন একটি প্রস্তুতি নিয়েই ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করি। বিশেষ করে সর্বশেষ ২১ বছরের বাংলাদেশি তরুণ ছাত্র নাফিসের ঘটনায় ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশিদের যেকোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে সে কথা পরিচিতদের সবাই বলেছিলেন।

কিন্তু গোটা ভ্রমণে এই ইমিগ্রেশন আমাকে হতাশ করলো। কারণ কোথাও কোনো সমস্যায় পড়তে হলো না। ঢাকায় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা “পাসপোর্টে পেশা ‘ব্যবসা’ লেখা কেন?” এমন একটি বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করলেন। প্রশ্নটি অবশ্যই চোখে চশমা রেখে উপর দিয়ে তাকিয়ে করা। বললাম জি-না এটি ‘প্রাইভেট সার্ভিস’ এর আওতায় করা পাসপোর্ট। দ্রুত ইমিগ্রেশন ফর্মে ইউএস ভিসার নম্বরটি নিজ হাতে লিখে দিয়ে ‘এই নম্বরটি ফর্মে লিখতে হবে’ কথাগুলো বলতে বলতে কিউতে দাঁড়ানো পরের জনকে হাতের ইশারায় ডেকে নিলেন। এক মিনিটে ইমিগ্রেশন পার হলাম।

এরপর শাহজালাল বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের হাতে বোর্ডিং পাশের কাগজটি তুলে দিয়ে ১ নং টার্মিনাল দিয়ে ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে চেপে বসতে আর কোনো প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি।

আবুধাবিতে ট্রানজিট এক ঘণ্টার। সেখানে ইমিগ্রেশন তিন স্তরের। এর মধ্যে এক স্তরে পাসপোর্ট ভিসা দেখিয়ে পার হলাম। দ্বিতীয় স্তরে কোমরের বেল্টটি খুলতে হলো আর তৃতীয় স্তরে পায়ের জুতো খুলতে হলো। কাঁধে ঝোলানো কম্পিউটার ব্যাগ থেকে সেটি বের করে হাতে নিয়েই অনায়াসে পার হলাম তৃতীয় স্তরটিও। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার জিজ্ঞাসা, কেন যাচ্ছো ইউএসএ? বললাম পেশাগত কাজে। নথিপত্রে চোখ বুলাতে বুলাতে বললেন ‘ও ইউ আর অ্যা জার্নালিস্ট!’ বলে সহাস্যে পাসপোর্টসহ কাগজগুলো এগিয়ে দিলেন। বোর্ডিং লাইনের গেটে দাঁড়ানো আরেক কর্মকর্তা “মি. খান আপ ঢাকা সে আয়া?” বলে নিজেই প্রশ্ন করে নিজেই উত্তর দিলেন। পরে ইংরেজিতে বললেন, ``দ্রুত যাও বোর্ডিংয়ের সময় হয়ে গেছে। দ্রত এগিয়ে যেতে বিমানে ওঠার ঠিক আগে দেখতে পেলাম কৃষ্ণাঙ্গ এক দশাসই বপুওয়ালা দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু হতাশ করে দিয়ে তিনিও ‘ওয়েলকাম টু নিউইয়র্ক’ বলে হাতের ইশারায় ফ্লাইট দেখিয়ে দিলেন।

পরের জার্নিটি ছিল টানা ১৪ ঘণ্টার। নিউইয়র্কে পৌঁছে এগিয়ে যাচ্ছি ইমিগ্রেশনের দিকে। একজন কর্মকর্তা সহাস্যে জানতে চাইলেন, মার্কিন মুলুকে আমি ভিজিটর কিনা। বলতেই যে লাইনে দাঁড়াতে বললেন সেটি দীর্ঘ। প্রায় দুই ঘণ্টা কেচোর গতিতে এগুলো সে লাইন। অতঃপর ফের সেই একই ‘চশমেশ’ ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা। চশমা চোখে উপর দিয়ে কথা বলেন। ফিঙ্গার প্রিন্ট নিলেন। পাসপোর্ট, ভিসার কপি স্ক্যান করলেন। ক্যামেরায় তাকানো ছবি নিলেন। এরই ফাঁকে জেনে নিলেন কেনই বা তাদের দেশে আমার যাওয়া। নির্বাচন কাভার করতে চাই শুনেই ‘কে জিতবে বলে তোমার ধারণা?’ প্রশ্ন ছুড়ে কৌতুহলি দৃষ্টি ফেললেন। বললাম গণতন্ত্রে তো এটা বলা মুশকিল। তবে আমার ধারণা তোমরা ওবামাকে দ্বিতীয় দফায় পাচ্ছো। কর্মকর্তাটি হাসি মুখে ছড়িযে রেখে যা বললেন সেটি অন্য প্রসঙ্গ। “দেখো মাহমুদ, আমি তোমার বন্ধু, তোমার নামের সঙ্গে আমাদের কাছে থাকা একটি তালিকার অনেকেরই মিল রয়েছে আমরা একটু যাচাই করে দেখতে চাই। আমার সঙ্গে চলো। ”

বলে নিয়ে গেলেন একটি কক্ষে। সেখানে চারিদিকে উঁচু টেবিলে জনাচারেক ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা। একপাশে একটি ছোট কক্ষ। মাঝখানে সারি সারি চেয়ার। জনা বিশেক লোক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে অপেক্ষায়। আমিও তাদের দলভুক্ত হলাম। তিন মিনিটের মধ্যে ডাক পড়লো ছোট কক্ষটিতে। কৃষ্ণাঙ্গ নারী ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা। জানতে চাইলেন কেন এসেছি, কতদিন থাকবো, কী করবো। উত্তর দিতেই বললেন, শুধু কি নির্বাচনের রিপোর্ট করবে? বললাম আরও কিছু কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। অন্য প্রশ্নের উত্তরে জানালাম বাংলানিউজ একটি অনলাইন নিউজপোর্টাল। দ্রুত একটি নোটবুকে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম কথাটি লিখে রাখলেন। বললেন আমি তোমার রিপোর্ট পড়বো। ওয়েলকাম টু ইউএসএ।

এখানেই শেষ ইমিগ্রেশন। জুজুর ভয় সবই বৃথা গেলো। মনে হলো ‘খান ইজ নট অ্যা প্রবলেম’।
menno

 

মাহমুদ মেনন
হেড অব নিউজ

 

 

 

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১২
আরআর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected] 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।