ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

কংক্রিটের রাস্তা বেশি টেকসই- ব্যয়সায়শ্রী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১৩
কংক্রিটের রাস্তা বেশি টেকসই- ব্যয়সায়শ্রী

দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও পিচে তৈরি হওয়ায় প্রায়ই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে নাইজেরিয়ার এক লাখ ৯৫ হাজার ৪০০ কিলোমিটার সড়কপথের একটা বড় অংশ। এর পেছনে বড় কারণ হলো- এসব রাস্তা বানানো হয়েছে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে।

এই প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞ নির্মাণ প্রকৌশলীরা ভাবতে শুরু করলেন, রাস্তা সংস্কার ও নির্মাণে ফলপ্রসূ সমাধান কী হতে পারে? অনেক চিন্তাভাবনা ও গবেষণা শেষে তাঁরা আবিষ্কার করলেন, কংক্রিটের অর্থাৎ সিমেন্ট দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হলে এটি টেকসই ও ব্যয়সায়শ্রী হবে। এরপর দ্য সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচার অ্যাসোসিয়েশন অব নাইজেরিয়া (সিএমএএন) এবং বিজনেস ডে নামের সংবাদপত্রের তত্ত্বাবধানে এসব রাস্তা ও ফুটপাত তৈরি শুরু হয় সিমেন্ট দিয়ে।

নাইজেরিয়ার রাস্তাঘাটের করুণ অবস্থা ও রেলওয়ের নাজুক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে এক সেমিনারে জাতির কাছে `দুঃখ` প্রকাশ করেন দ্য সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচার অ্যাসোসিয়েশন অব নাইজেরিয়ার চেয়ারম্যান প্রকৌশলী জোসেফ মাকোজু। তিনি জানান, তাঁর পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে, দেশের সব রাস্তা নির্মাণেই আগে ব্যবহার করা হয়েছিল পিচ বা বিটুমিন ও পাথরের টুকরো।

এর কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, ওই সময়গুলোতে দেশে সিমেন্ট ছিল দুর্লভ ও ব্যয়বহুল। কিন্তু দিন দিন স্থানীয় সিমেন্ট কম্পানিগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৩ সালে যেখানে বছরে মাত্র ২৮ টন সিমেন্ট উৎপাদন হতো, সেখানে বার্ষিক উৎপাদন দাঁড়িয়েছে তিন হাজার টনে। বর্তমানে সিমেন্টে স্বয়ংসম্পূর্ণ নাইজেরিয়া।

মাকোজু বলেন, আগে রাস্তার ঢালাইকাজ করার সময় দেখা হতো সহজে ও ন্যূনতম খরচে কোন কোন উপাদান পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে রাস্তা নির্মাতাদের এ ধরনের মনোভাব বদল হয়েছে। তিনি আরো বলেন, `বর্তমানে সব কাজই আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সঙ্গে তুলনা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির মতো উন্নত দেশগুলোর অন্তত ৪০ শতাংশ রাস্তাই সিমেন্টে তৈরি। অথচ ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর মাত্র ২ শতাংশ এবং নাইজেরিয়ার ০.১ শতাংশ রাস্তা সিমেন্টে তৈরি। `

সিএমএএনের প্রধান এবং সংবাদপত্র বিজনেস ডের প্রকাশক ফ্রাংক আইগবোগান বলেছেন, রাস্তা নির্মাণে সিমেন্টের ব্যবহার বাড়িয়ে স্থানীয় সিমেন্ট নির্মাতাদেরও উৎসাহিত করা যায়। রাস্তা নির্মাণে আসলে কোন উপাদান ব্যবহার করা হবে, এসব উপাদান কতটা সহজলভ্য এবং এর ফলে কী ধরনের ফল পাওয়া যাবে- এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া দরকার।

ক্রমবর্ধমান অবকাঠামো উন্নয়নে সিমেন্টের চাহিদা পূরণে নাইজেরিয়ার সিমেন্ট কম্পানিগুলো প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন লাফার্জ ডাব্লিউপিসিও সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জো হাডসন।

উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশের তুলনায় নাইজেরিয়ায় সিমেন্টের ব্যবহার এখনো তুলনামূলক কম। তবে আশার কথা হলো, সিমেন্টের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে বৈদ্যুতিক খুঁটি, রাস্তা, জলাধার, ঘরবাড়ি ও অন্যান্য অবকাঠানো নির্মাণে বেড়েই চলেছে সিমেন্টের চাহিদা।

এরইমধ্যে এই খাতে ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন নাইজেরিয়ান মুদ্রা বিনোয়োগ করা হয়েছে উল্লেখ করে হাডসন বলেন, আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে আফ্রিকার অন্যান্য দেশে সিমেন্ট রপ্তানি করবে নাইজেরিয়া। সিমেন্ট উৎপাদনকারী হিসেবে মিসরের পরই স্থান করে নেবে তাঁর দেশ। নিজেদের তৈরি কাঁচামালেই হবে মজবুত নির্মাণ। যেসব রাস্তা দিয়ে যানবাহন কম চলাচল করে সিএমএএন ইতিমধ্যে সেসব রাস্তা সিমেন্টে তৈরি শুরু করেছে।
লাগোস-শাগামু-ওরে-বেনিন-আসাবা, অনিতশা-ইনুগু, লাগোস-ইবাদান, ইলোরিন-আবুজা-কাদুনা-কানো, ইনুগু-আবা-পোর্ট হারকোর্ট ইত্যাদি রাস্তার টেকসই সংস্কার প্রয়োজন।

সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা জানান, সিমেন্টে তৈরি রাস্তা অত্যধিক মজবুত হয়ে থাকে। সঠিকভাবে এসব রাস্তা তৈরির সুফলগুলো তাঁরা ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে : নির্মাণে কম খরচ, দীর্ঘমেয়াদে টেকসই, দ্বিতীয় মেয়াদে ঢালাইযোগ্য, বেশি ওজনেও সহজে টলবে না।

এ ছাড়া নরম মাটিতেও এসব সিমেন্টের শক্তি বজায় থাকে। এমনকি তেল ও গ্রিজ-জাতীয় তরল পদার্থের সংস্পর্শেও এর গুণাগুণ নষ্ট হয় না। এ সিমেন্টের নেতিবাচক দিকগুলো হলো- এটি তৈরি প্রক্রিয়ায় সময় লাগে বেশি (১৪ দিন) এবং কংক্রিটের রাস্তা তৈরিতে এর পেছনে খরচ যায় বেড়ে।

ওই সেমিনারে আমেরিকান কংক্রিট পেভমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের টেকনিক্যাল সার্ভিস অ্যান্ড প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্টের পরিচালক রবার্ট রোডেন বলেন, সব জায়গায়ই কংক্রিটের ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। সিমেন্টকে মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী জীবনের প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।

ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যাট দ্য আফ্রিকান ফিন্যান্স করপোরেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আমাদু ওয়াদ্দা, যিনি রাস্তার উন্নয়নকাজের ব্যয় নিয়ে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। তিনি বলেছেন, নাইজেরিয়ার রাস্তা নির্মাণে বেসরকারি খাতের বড় ধরনের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। তবে এর বাস্তবায়নের জন্য নতুন নীতিমালা তৈরি করতে হবে। সূত্র: ভ্যানগার্ড (অনলাইন)/কালেরকণ্ঠ

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১২
এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।