রানা প্লাজা ধসের পর পোশাকশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনপ্রিয় ওয়াশিংটন পোস্টে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। রাজনৈতিক সহিংসতা ও ধসের ঘটনায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হলো- বলে মন্তব্য করা হয়।
ঢাকা: রানা প্লাজা ধসে পড়ার আগেই বাংলাদেশের ১৯ বিলিয়ন (এক হাজার ৯০০ কোটি) ডলারের তৈরি পোশাকশিল্প চাপের মুখে পড়ে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে।
ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে বিএনপি-জামায়াতের ৩৩ দিনের হরতাল, বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক সহিংসতায় বাংলাদেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
পশ্চিমা দেশের বিভিন্ন খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের পোশাক সরবরাহকারী কারখানাগুলো উৎপাদন স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছিল। তবে সড়ক, সমুদ্রবন্দরসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় এবং শুল্ক অফিসসহ সরকারি দপ্তরগুলো বন্ধ থাকায় কাঁচামাল আমদানি ও সঠিক সময়ে পণ্যের জাহাজিকরণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
এরই মধ্যে পশ্চিমা ক্রেতাদের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটতে শুরু করেছে। গত সোমবার (২২ এপ্রিল) বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, গত জানুয়ারি থেকে অস্থিরতার কারণে তারা ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের অর্ডার (কার্যাদেশ) হারিয়েছে এবং বিদ্যমান ৫০ কোটি ডলারের অর্ডার প্রতিবেশী ভারতে চলে যাচ্ছে।
তৈরি পোশাক খাতের অনেক ব্যবসায়ী মনে করেন, আগামীতে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা এবং রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ঘটনায় ওয়াল-মার্টের মতো ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ, প্রথম অবস্থান চীনের।
মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক বলেন, “ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। আমাদের ওপর এখন ক্রেতাদের চাপ আসবে। ” এইচঅ্যান্ডএম, জারা, ওয়াল-মার্ট এসপ্রিটের জন্য পোশাক সরবরাহ করে মোহাম্মদী গ্রুপ।
বাংলাদেশের ৩৬ লাখ শ্রমিকের কথা বিবেচনায় নিয়েই হয়ত পশ্চিমা ক্রেতারা রাতারাতি বাংলাদেশকে ছুড়ে ফেলবে না। তিনি বলেন, “তবে আমরা ব্যাপক ইমেজ সংকটে পড়ব। ”
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক পণ্যের সরবরাহ বিলম্ব হওয়ায় পশ্চিমা ক্রেতারা প্রস্তুতকারকদের মূল্য পরিশোধে ৫ থেকে ২৫ শতাংশ কেটে নিচ্ছে। রুবানা হক বলেন, “ক্রেতারা বড়জোর দুই সপ্তাহ বিলম্ব মানতে পারে। এরপর তারা অর্ডার বাতিল করে বা পণ্যের মূল্য কম দেয়। ”
রানা প্লাজা ধসের অনধিক পাঁচ মাস আগে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১১০ জন (বাংলানিউজের হিসাবে ১১৪ জন) নিহত হয়। তাজরীন ফ্যাশনস ওয়াল-মার্টের পোশাক তৈরি করত। এই দুটি ঘটনায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের ব্যবস্থাপনা ও মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এমনকি এসব বিপর্যয়ের আগে রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে এই শিল্প ব্যাহত হচ্ছে। এই সহিংসতা সহসাই কমবে বলেও মনে হচ্ছে না।
ঢাকা-ভিত্তিক বুটিক কনসালট্যান্সি প্রতিষ্ঠান এশিয়ান টাইগার্স ক্যাপিটাল পার্টনার্স-এর ম্যানেজিং অংশীদার ইফতি ইসলাম জানান, দেশ ক্রমেই নৈরাজ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এতে করে যে কোনো সময় জরুরি অবস্থা জারি বা সামরিক হস্তপেক্ষ হতে পারে।
এই সবই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য ধূসর প্রেক্ষাপট রচনা করলো, দুটি বড় ধরনের বিপর্যয়ের পর এ শিল্প ক্রেতাদের আস্থা ফেরানোর সংগ্রাম করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৩
আরআর
বাংলানিউজ স্পেশাল
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন
ভবন ধসের পর অন্ধকারে বাংলাদেশের অর্থনীতি
নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
![ভবন ধসের পর অন্ধকারে বাংলাদেশের অর্থনীতি](public/uploads/2013/04/27/washington-post-savar20130427042029.jpg)
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।