ঢাকা: ডুব মেরেছেন ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ। টিভি টকশোতে আগের মতো আর দেখা যাচ্ছে না তাকে।
বেশ ক’দিন আগে চ্যানেল আইয়ের তৃতীয় মাত্রায় গণজাগরণ মঞ্চ ও ব্লগারদের উদ্দেশ্যে কটূক্তি করেন পার্থ। আর এরপর থেকেই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা।
যদিও আন্দালিভ পার্থ বাংলানিউজকে বলেছিলেন, শুধু সমালোচনাই নয়, তাকে নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে। তার মন্তব্যের জন্য তাকে স্যালুটও নাকি দিয়েছেন কেউ কেউ।
কিন্তু ফেসবুক, টুইটার আর ব্লগে আন্দালিভের রাজনৈতিক চরিত্রের সমালোচনার পাশাপাশি অনেকে তার বার অ্যাট ল ডিগ্রি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
ব্লগারদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের বিষয়ে ব্লগার ও সাংবাদিক আরিফ জেবতিক বাংলানিউজকে বলেন, “ব্লগে বিভিন্ন সময়ে লেখালেখি হয়েছে যে, পার্থ আসলে লন্ডনে বার এট ল শেষ করতে পারেন নি বলেই সরাসরি বাংলাদেশের কোন কোর্টে প্র্যাকটিস করতে পারেন না। উনি নামের আগে ব্যারিস্টার লিখে মিথ্যাচার করেছেন। ”
জেবতিক বলেন, “ব্লগের এসব লেখালেখির কারণে ঢালাওভাবে বাংলা ব্লগের ব্লগারদের উপর তার ক্ষোভ থাকতে পারে, নইলে যেখানে হাইকোর্টের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কোনো গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আগে তাকে মিডিয়ার সামনে হাজির না করানোর, সেখানে সরকার যে এই কাজটি করেছে-সেটার বিরুদ্ধেই বরং একজন আইনজীবী ও আইনপ্রণেতা হিসেবে তার বক্তব্য থাকার কথা ছিল। আইনের লোক হয়ে বেআইনি বিষয়কে সমর্থন করাটা দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু তাই বলে বাংলা ব্লগের কেউ এমন অরুচিকর দাবি করছেন না যে, বেআইনি বিষয় সমর্থন করার জন্য পার্থের উচিত হবে হাইকোর্টের সামনের ফুটপাতে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। কথাবার্তায় আমাদের সবারই সংযত হওয়া উচিত। ”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইমায়েদ আহসান তামিম বাংলানিউজকে বলেন, “আন্দালিভ তরুণদের নেতা হিসেবে নিজেকে দাবি করেন, আবার ব্লগিং সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ান। হয় তার মানসিক সমস্যা আছে, নইলে তিনি বিরাট মুর্খ। ”
ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে সিডাটিভ হিপনোটিক্স নামে একজন লিখেছেন, সব নষ্টদের অধিকারে গেছে। সব....মাহি গেছে, পার্থ গেছে, কোকো তো কবেই গেছে ....তারেক যে নষ্টের কোন পর্যায়ে গেছে তা কেউ জানে না ....তবে সব নষ্টদের অধিকারে চলে গেছে।
গত ১৮ এপ্রিল রাতে চ্যানেল আইতে প্রচারিত তৃতীয়মাত্রায় পার্থ অত্যন্ত বাজে মন্তব্য করেছেন গ্রেপ্তার হওয়া চার ব্লগারকে নিয়ে।
অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে তিনি মন্তব্য করেছেন, “অনেকেই বলছেন, ওদেরকে যেভাবে ধরা হচ্ছে, যেভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে, তাতে মনে হয়েছে ওরা জঙ্গি, জঙ্গি.... ওদের তো কান ধরে বসিয়ে রাখা উচিৎ ছিল, নাকে খত দেওয়ার দরকার ছিল। তারা কী এক্সপেক্ট করেছিল, তাদেরকে রজনীগন্ধার স্টিক দেওয়া হবে?”
এ সময় তৃতীয়মাত্রার অপর অতিথি বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম- সব ব্লগার কিন্তু খারাপ নয় বলে কথা বলতে চাইলেও তাকে থামিয়ে দেন আন্দালিভ।
এর আগে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া গণজাগরণ মঞ্চকে নাস্তিকের মঞ্চ বলে অভিহিত করেন। আন্দালিভ পার্থ সেই একই পথে হাঁটলেন।
আন্দালিভ বলেন, “বিরোধী দলীয় নেত্রী বলেছেন, এটা নাস্তিকের মঞ্চ। তার মানে যারা এটা লিড দিচ্ছেন, তাদের মাইন্ড সেট ইসলামের প্রতি হীন। নয়তো কীভাবে একজন মুসলমান হয়ে দাঁড়িয়ে বলে- এই চারটা ছেলে আমাদের গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তারা নিয়মিত ব্লগ লিখতো, তাদের কেন অ্যারেস্ট করা হচ্ছে, আমরা এটার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যেখানে বলা হচ্ছে, তারা নবী করিমকে (স:) নিয়ে বাজে কথা বলেছে। ”
পার্থ বলেন, “তার মানে আমার বিরোধী দলীয় নেত্রী যে বলেছে, এটা নাস্তিকের মঞ্চ, শি ইজ রাইট। ”
আন্দালিভ রহমান পার্থর এ ভিডিও চিত্র সোশ্যাল মিডিয়ার প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সমালোচনার ঝড় ওঠে।
হেফাজতে ইসলামের দাবির মুখেই তিন ব্লগার পারভেজ, বিপ্লব ও শুভকে গত ১ এপ্রিল রাতে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এর দু’দিন পরেই গোয়েন্দা অফিসে ডেকে নেওয়া হয় দুই ব্লগারসহ আরেক ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনকে। অপর দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হলেও আসিফকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
প্রথমে তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পারভেজ, বিপ্লব ও শুভকে ১০ দিন ও আসিফকে দু’দফা ৪ দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। তবে ধর্মীয় উস্কানির অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হলেও আটক রাখার প্রায় দুই সপ্তাহ পর গত ১৭ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৩
জেএ/জেডএম