ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

মালয়েশিয়ায় পাসপোর্ট লোপাট

নিরপেক্ষ তদন্ত চাইছেন সূচনা

ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৪
নিরপেক্ষ তদন্ত চাইছেন সূচনা

ঢাকা: মালয়েশিয়ায় পাসপোর্ট কেলেঙ্কারির ঘটনাকে নিজের বিরুদ্ধে ‘একটি সংঘবদ্ধ চক্রের ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিযুক্ত কর্মকর্তা সূচনা রানী হালদার। এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তও দাবি করেছেন তিনি।



ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন না দাবি করে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ দিন ধরেই মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনে এ ধরনের কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে আসছে। একটি সিন্ডিকেট অবৈধ প্রবাসীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পাসপোর্ট সরবারহ করে থাকে। বিষয়টি সেখানে গিয়েই তিনি জেনেছেন।

 কিছুদিন আগে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচশ পাসপোর্ট খোয়া যায়।

কুয়ালালামপুরের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, অবৈধ অভিবাসীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব পাসপোর্ট বিক্রি করেছে হাইকমিশনের একটি অসাধু চক্র। ছুটিতে ঢাকায় অবস্থানরত সূচনা রাণী হালদারসহ হাইকমিশনে কর্মরত কয়েকজনকে এজন্য সন্দেহ করা হয়।
এবিষয়ে সূচনা আরো বলেন, তাকে মালয়েশিয়ায় নিয়োগ দেওয়ার সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল মালয়েশিয়া হাইকমিশনের সার্বিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট করতে। আর এ কারণেই ওই সংঘবদ্ধ চক্রটির ষড়যন্ত্রের কবলে পড়েন তিনি।
তার দাবি হাইকমিশনের কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার যোগসাজসে সেখানে অবৈধ বাংলাদেশিদের একটি মজবুত সিন্ডিকেট এ ধরনের কাজ করে আসছে।

এদিকে কর্তৃপক্ষ ছুটি না বাড়ালেও তিনি বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি দাঁতের চিকিৎসা করাতে দেশে এসেছি। আমার চিকিৎসা চলছে।

এদিকে পাসপোর্ট হারানোর বিষয়টি প্রাথমিক তদন্তের জন্য হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা এয়ার কমোডর এম আবুল বাশারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব (রাজনৈতিক) সূচনা রানী হালদার গত ৫ জানুয়ারি ১০ দিনের নৈমিত্তিক ছুটিতে ঢাকায় আসেন। ১৫ জানুয়ারি তার কর্মস্থলে ফেরার কথা থাকলেও তিনি এখনো ঢাকায় অবস্থান করছেন।
 
জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক আল্লামা সি্দ্দিকী বলেন, সূচনা রানী হালদারের ছুটি শেষ হয়েছে গত ১৫ জানুয়ারি। তিনি ছুটি বাড়ানোর আবেদন করলেও সেটি গ্রহণ করা হয় নি। তাকে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে কুয়ালালামপুরে ফিরে তদন্ত কাজে সহায়তা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি তা করেন নি।

সিদ্দিকী মনে করেন, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে সেটি মোকাবেলা করাটাই উত্তম।

তিনি বলেন, শিগগিরই কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি তদন্ত কমিটি মালয়েশিয়ায় যাবে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এ বিষয়ে আর কিছুই বলার নেই।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভল্টরুমে সূচনা রানী হালদার কাজ করতেন। এ কক্ষটিই ছিল হাইকমিশনের পাসপোর্ট সংরক্ষণ কক্ষ।

সূচনার দাবি পাসপোর্ট রাখার আলমারিটি ভাঙ্গা ছিল। তিনি সেকথা কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েছেন।

মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ২১ আগস্ট গেনেড হামলায় আহত এই সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী সূচনা হালদার রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১২ সালের জুনে তিন বছরের জন্য মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ পান। ২০১৩ সালের অক্টোবরে তিনি কুয়ালালামপুরে দ্বিতীয় সচিব (রাজনৈতিক) পদে যোগ দেন। এর আগে তাকে মরিশাসে বাংলাদেশ মিশনে বদলি করা হলেও তিনি সেখানে যান নি।

এদিকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কুয়ালালামপুর থেকে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে, সূচনা রানী হালদার ছুটিতে যাওয়ার পর হাইকমিশনে সত্যায়নের জন্য সন্দেহজনক পাসপোর্ট আসা বেড়ে যায়। এভাবেই অভিযোগের তীর তার দিকে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।