নীলফামারী থেকে: ইউরোপে রফতানি করা হচ্ছে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড এলাকায় তৈরি কফিন, খবরটি নিঃসন্দেহে অবিশ্বাস্য। ওয়েসিস কফিনস নামে একটি প্রতিষ্ঠান এসব কফিন তৈরি করছে।
অবাক করা ব্যাপার হলো নীলফামারীর স্থানীয় সংবাদকর্মীসহ অনেকেই জানেন না, তাদের এলাকার এরকম একটি বিষ্ময়কর খবর। কারণ, অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে এ কফিন তৈরি হচ্ছে। সেখানে সাধারণ মানুষের আনা-গোনা নেই বললেই চলে। তৈরির পর কফিনগুলো প্যাকেটজাত করে সরাসরি দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।
কফিন তৈরির খবর জানতে পেরে বাংলানিউজের এ প্রতিবেদক ইপিজেট এলাকার ওই কোম্পানিতে হাজির হন। হাতে ক্যামেরা দেখেই, প্লিজ কোনো ছবি তুলবেন না বলে বারণ করে দেন সেখানকার লিগ্যাল অ্যান্ড কমার্শিয়াল এক্সিকিউটিভ ওয়ালিউর রহমান।
ওয়েসিস কফিনসের ব্যবস্থাপক জেমস এ খান বাংলানিউজকে বলেন, আমার প্রচারে বিশ্বাসী নই, কর্মে বিশ্বাসী।
কতো দিন ধরে কোম্পানিটি কফিন তৈরি করছে, কতোজন মানুষ এখানে কাজ করছেন, এমন সব প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোনো কিছু জানাতে রাজি হননি।
তিনি বলেন, এ খবর মিডিয়ায় আসুক, এটা আমরা চাই না।
![](files/2014_May/21_May/Kofin01_679676653.jpg)
স্থানীয় কয়েকজন এবং ওয়েসিস কফিনসের ওয়েবসাইট www.oasiscoffins.com থেকে জানা যায়, ২০১০ সালে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে আসা ডেভিড হাউ নামে এক ব্যক্তি ওয়েসিস কফিনস নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। স্থানীয়ভাবে বাঁশ, বেতসহ আরো সহজলভ্য সব উপাদান দিয়ে তিনি কফিন তৈরি করে তা ইউরোপের বাজারে বিক্রি করেন। প্রথম অবস্থায় বেশ পুঁজির সংকট ছিল তার। এক সময় সংকট কাটাতে এগিয়ে আসে টিন্ডার ক্যাপিটল নামে একটি কোম্পানি। সঙ্গে যোগ দেয় পানাপুর নামে যুক্তরাজ্যের একটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান।
তাদের এ সংগ্রামে একপর্যায়ে সঙ্গী হন নীলফামারীর শত শত হতদরিদ্র নারী। সবার চেষ্টায় গড়ে ওঠে ওয়েসিস কফিনস। ২০১২ সালে ওয়েসিস কফিনসের জন্য একটি বড় সুসংবাদ আসে। সে বছর যুক্তরাজ্যের প্রথম সারির কফিন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান জে সি অ্যাটকিনসনের সঙ্গে চুক্তি হয় ওয়েসিস কফিনসের। এর মানে তারা ওয়েসিস কফিনস থেকে কফিন কিনবে।
ইপিজেড এলাকার আব্দুল জলিল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা তো জানতাম না, সেখানে কফিন তৈরি হয়। তবে আমাদের এলাকার অনেক হতদরিদ্র নারী ইপিজেডে চাকরি করেন। ফলে তারা এখন সচ্ছল জীবনযাপন করছেন। তাদের ছেলে-মেয়েরা এখন স্কুলেও যায়।
সেখানে কফিন তৈরি হয় সেটি জানার পর তিনি অবাক হয়ে বলেন, সেজন্যই বুঝি এ এলাকার বাঁশ ও বেতের দাম অনেক বেশি!
দীর্ঘক্ষণ কফিন কারখানার বাইরে অবস্থান করার পর কারখানায় কাজ শেষে বের হয়ে আসেন এক নারী কর্মী।
নাজমা বেগম ওই নারী প্রথমে কথা বলতে রাজি না হলেও পরে বলেন, আমাদের এলাকার অনেক নারী-পুরুষ কফিন কারখানায় কাজ করেন। আমরা এখন সবাই ভালো আছি।
কতোজন নারী-পুরুষ কাজ করছেন, জানতে চাইলে তিনি কিছু না বলেই চলে যান।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৭ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৪