ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

একান্ত সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী

ক্ষমতায় থেকে যারা বিনিয়োগ বন্ধ করে গেছে, তারা দেশে বিনিয়োগ চায় না

জাহিদুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০১০
ক্ষমতায় থেকে যারা বিনিয়োগ বন্ধ করে গেছে, তারা দেশে বিনিয়োগ চায় না

সাভার: দেশে বিনিয়োগ বন্ধ করার লক্ষ্যেই বিরোধী দল ভারতের সঙ্গে ঋণ চুক্তির বিরোধিতা করছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তিনি বলেন, ‘চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থেকে বিনিয়োগের সব পথ বন্ধ করে গেছে, তাই এখন তারা চায় না দেশে নতুন করে বিনিয়োগ  হোক।



সাভারে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) চেয়ারম্যান হিসেবে বোর্ড অব গভর্নরস-এর ৫৬তম সভায় যোগ দিতে গিয়ে রোববার সকালে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডির সাথে একান্তে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।
 
তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিতে প্রত্যক্ষ দুটি বিষয় রয়েছে, তা হচ্ছে যোগাযোগ ও বিদ্যুত। এ দুটি খাতই বর্তমান বিরোধীদল ক্ষমতায় থাকার সময় ধ্বংস করে গেছে। ’

ভারতের সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাস্তবায়ন প্রতিহত করতে বিরোধী দলের দেওয়া হুমকির প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কেবল বিরোধিতার জন্যে বিরোধিতা করছে বিরোধীদল। তারা আসলে কিছ্ই করতে পারবে না, কারণ এর বিরোধিতার পেছনে তো যুক্তি নেই। ’

‘ভূয়া কোনো যুক্তির ওপর কি কোনো আন্দোলন হতে পারে?’, প্রশ্ন করেন অর্থমন্ত্রী।

বিএনপি নেতা এম কে আনোয়ারের মন্তব্য ‘আশ্চর্য্যজনক’ উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মোহাম্মদ খোরশেদ আনোয়ার সাহেব (এম কে আনোয়ার) তো ইআরডি সচিব ছিলেন, অর্থসচিব ছিলেন, তখন তো উনিই সব ডিল করতেন। ওনার তো সবাই জানা আছে, আইডা (ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন), এডিবি (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক)’র কাছ থেকে কিভাবে অর্থ পাওয়া যায়, বিদেশ থেকে যে সহায়তা আসে সেটা কিরকম, কি শর্তে ঋণ আসে সেটিও তিনি খুব ভালো জানেন, তার মুখে এসব কথা মানায় না। ’

চুক্তিকে অস্বচ্ছ বলে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করার জন্য  বিএনপির দাবির প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটা অনলাইনে পাবলিক ডোমেইনে দেওয়া আছে, যে কেউ ইচ্ছা করলেই তা পড়তে পারেন। ’

বিরোধী দল বিষয়টি নিয়ে ধূম্রজাল তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

১৯৯১ সালের আগস্ট মাসে ভারতের সাথে এমন একটি চুক্তি সম্পাদিত হবার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তারা হয়তো বিষয়টি ভুলে গেছেন। সে সময় ঋণ আনা হয়েছিলো ৫ শতাংশ হারে। সে সময় খালেদা জিয়াই ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ’

ভারতে বেসরকারি ব্যাংকের সাথে অর্থচুক্তির ব্যাপারে বিরোধীদলের সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৪ সাল থেকে ’৯৯ পর্যন্ত অনেকগুলো চুক্তি হয়েছে, এর  কোনোটা সরকারের সাথে, কখনো রেলওয়ে কখনো বা পাওয়ার বোর্ড করেছে- এসব সমালোচনার কোনো অর্থ হয় না। ’

তিনি বলেন, ‘আসল ব্যাপার হলো টাকাটা কোত্থেকে আসছে কে দিচ্ছে, সবই সরকারের টাকা। ’

ঋণচুক্তির অধীনে কেনাকাটার স্বচ্ছতা সম্পর্কে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খানের মন্তব্যের জবাবে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘উনিও তো সচিব ছিলেন, হয়তো উনিও সব ভুলে গেছেন। ’

এক পর্যায়ে অর্থমন্ত্রী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনার কাছে হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিই- আমি দেখেছি ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের শেয়ার পাবার জন্যে অনেকেই পাগল হয়ে যান, বেহুশ হয়ে যান। ’

বিদ্যুৎ নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০১২ সালের মধ্যে দেশকে লোডশেডিং মুক্ত করার ব্যাপারে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ’

গ্যাসের সম্ভাব্য প্রাপ্তি ঘিরে ওই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিলো উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কুপ খনন করছি, তিনটি কুপের মধ্যে একটিতে ভালো গ্যাস পাওয়া যাবে। ’

পরে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্সের সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে শুরু হয় পরিচালনা পর্ষদের সভা। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন, মন্ত্রী পরিষদ সচিব এম আব্দুল আজিজ, সংস্থাপন সচিব ইকবাল মাহমুদ, অর্থ বিভাগের সচিব ডক্টর মোহাম্মদ তারেক, এফবিসিসিআই’র সভাপতি এ কে আজাদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শরিফ এনামূল কবির, ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শামিম চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময় ১৩২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।