ঢাকা: পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের অনেকে তাদের বেতনের সিংহভাগ ভবিষ্য তহবিলে জমা দিচ্ছেন। এ অবস্থায় কিভাবে ওইসব কর্মচারীর সংসার চলে তা নিয়ে খোদ মন্ত্রণালয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি নিশ্চিতভাবে জানতে পেরেছে মন্ত্রণালয়ের একজন অফিস সহকারী তার বেতনের ৮৭ ভাগ টাকাই ভবিষ্য তহবিলে জমা করছেন। অথচ, সরকারি চাকুরি বিধি অনুযায়ী কোনো কর্মচারী তার মূল বেতনের অনূর্ধ ১০ শতাংশ এই খাতে জমা করতে পারবেন।
মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘নিয়ম নীতির কোনো তোয়াক্কা না করেই ভবিষ্যৎ তহবিলে এভাবে বেতনের টাকা জমা করে চলেছেন কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারী। ’
সরকারি চাকুরির কোষাগার বিধির-৬০৪ ধারা মেনে আগস্ট মাসে সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিল কর্তনের তফসিলে দেখা গেছে, আব্দুস সবুর নামে একজন অফিস সহকারী তার মাসিক বেতন পাঁচ হাজার ৭৬০ টাকার মধ্যে পাঁচ হাজার টাকাই ভবিষ্যৎ তহবিলে জমা করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আব্দুস সবুর দীর্ঘদিন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখায় কর্মরত ছিলেন।
একই শাখার অধীনে কর্মরত সাঁট মুদ্রাক্ষরিক মানিকচাঁদ সরকার বেতন পান ১১ হাজার ৬৪০ টাকা। তিনি ভবিষ্য তহবিলে জমা রাখেন ছয় হাজার টাকা। ওই শাখার অপর কর্মচারী মোহাম্মদ সফিকুল আলমের মাসিক বেতন ছয় হাজার ছয়শ’ ৪০টাকা। তিনি জমা রাখেন তিন হাজার টাকা। এমএলএসএস শাহাবুদ্দিনের সাড়ে ছয় হাজার টাকা বেতনের তিন হাজার টাকাই জমা রাখেন ভবিষ্যৎ তহবিলে।
এভাবে কেউ বেতনের ৫০ ভাগ কেউ ৬০ ভাগ টাকা ভবিষ্য তহবিলে কর্তন করছেন।
তবে একটি ভিন্ন চিত্রও পাওয়া গেছে। একজন সাট মুদ্রাক্ষরিক ভবিষ্য তহবিলে কর্তন করছেন মাত্র ৫০০টাকা। তার নামের বিপরীতে নোট রয়েছে ৫০০ টাকা বাড়াতে হবে।
অভিযুক্ত আবদুস সবুরের সম্পর্কে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কাঠ চুরি, নিলাম থেকে পাওয়া অর্থসহ বিভিন্ন খাতের সরকারি টাকা আত্মসাৎ ও অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও চূড়ান্ত শুনানি হয় প্রশাসন শাখায়। শুনানি শেষে এখান থেকেই শাস্তি ঘোষণা করা হয়। অভিযুক্তদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে উর্ধ্বতনদের কাছে ধর্ণা দিয়ে শাস্তি লাঘব ও মওকুফ করিয়ে নেওয়াই আবদুস সবুরের প্রধান কাজ।
এরই মধ্যে একাধিকবার সবুরের দুর্নীতি অনিয়মের ব্যাপারে বিভাগীয় অভিযোগ দায়ের করা হলেও একজন উপসচিবের বিশ্বস্ত লোক হওয়ায় তিনি বহাল তবিয়তে টিকে ওই শাখায় আছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, গত দু’মাস আগে তাকে পরিকল্পনা শাখায় বদলি করা হয়। তাতে কী! সেখানে থেকেই তিনি প্রশাসন শাখার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে প্রশাসন শাখার উপসচিব সাজেদুল কাইয়ুম দুলালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘একজন কর্মচারীর অন্য কোনো পারিবারিক আয় আছে কিনা সে ব্যাপারে আমি বলতে পারি না। অবৈধভাবে আয় করে কিনা তাও আমার জানা নেই। তবে সবুর আমার খুব কাছের লোক এ তথ্যটি ঠিক নয়। ’
‘বেতনের টাকার ১০ ভাগ ভবিষ্য তহবিলে রাখার নিয়ম। অথচ কর্মচারীরা বেতনের সিংহভাগ রাখছেন কিভাবে, কেনইবা রাখছেন?’ এ প্রশ্নের জবাবে এই উপসচিব জানান, বিষয়টি তিনি জানতেন না, এখন খতিয়ে দেখবেন।
সবুর প্রশাসন শাখায় ছিলেন না বলেও দাবি করেন সাজেদুল কাইয়ুম দুলাল।
তবে দাপ্তরিক নথিপত্রে সবুরের নাম রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সবুরের প্রথমে চাকরি হয় এমএলএসএস পদে। উপসচিব (প্রশাসন)-এর বিশ্বস্ত লোক হওয়ার সুবাদে তার দ্রুত পদোন্নতি হয় অফিস সহকারী হিসেবে।
এ বিষয়ে আবদুস সবুরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১০