ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

পবিত্র লাইলাতুল কদর

মাওলানা শাহ আবদুস সাত্তার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১০
পবিত্র লাইলাতুল কদর

লাইলাতুল কদর এমন একটি ফজিলতপূর্ণ ও মহিমান্বিত রাত, যে রাতের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্যের কথা বর্ণনা করে শেষ করা যায় না। আল্লাহর বান্দাদের জন্য লাইলাতুল কদর এক শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত।

আল্লাহতায়ালা এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কুরআন মজিদ কোনও সম্মানিত এক রাতে অবতীর্ণ করেছি। ’

লাইলাতুল কদর হাজার মাস থেকে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ। আর একটু ব্যাপক অর্থে বলা যায়, এ মহিমান্বিত রাতের ইবাদত-বন্দেগি অত্যন্ত পুণ্যময়, যার হিসাব একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই জানেন। সেই ফজিলতময় রাতে মহান আল্লাহ পাক ফেরেশতাদের রহমত, বরকত, নেয়ামত নিয়ে দুনিয়ায় অবতীর্ণ করান এবং রুহুল কুদ্দুস অর্থাৎ স্বয়ং ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) অবতরণ করেন। এ পুণ্যময় পবিত্র রাতে আল্লাহ পাকের রহমতের বারিধারা বান্দাদের ওপর বর্ষিত হতে থাকে। এ জন্যই রমজান মাস আমাদের উপঢৌকন দিয়েছে লাইলাতুল কদর। ফজিলতময় এ রাতে বর্ষিত হয় আল্লাহর অশেষ রহমত ও নেয়ামত।

আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় হাবিব মুহাম্মদ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে প্রিয় হাবিব, আপনি কি জানেন, এ রাতের মাহাত্ম্য ও মরতবা কত অপরিসীম। এরপর আল্লাহ স্বয়ং ঘোষণা করেন, ‘লাইলাতুল কদর, এই রাতটি হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। ’ লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আল্লাহর নবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অধিক সওয়াব, রহমত, বরকত, নেয়ামত পাওয়ার আশায় আল্লাহর উদ্দেশে ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আসকারে, তাসবিহ-তাহলিলে এ মহা ফজিলতময় লাইলাতুল কদর রাত অতিবাহিত করবে, মহান আল্লাহ তার পূর্বকৃত পাপরাশি মাফ করে দেবেন ও তার উত্তরোত্তর মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন। ’ আর একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, পবিত্র লাইলাতুল কদরে জেগে যে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে রত থাকবে আল্লাহ তাদের গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন। তাদের নিরাশ করবেন না। আল্লাহর নবী (সা.) আরও এরশাদ করেছেন, লাইলাতুল কদরের রাতে ইবাদতকারীর প্রতি দোজখের আগুন হারাম করে দেওয়া হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, গোটা রাতকে আল্লাহ পাক লাইলাতুল কদর দ্বারা মোহনীয় ও সৌন্দর্যমন্ডিত করেছেন। কেননা তোমরা এ রাতেই বেশি বেশি ইবাদত করো। মনে রেখো, এ রাতটি শ্রেষ্ঠতম, উত্তম। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের কবরকে আলোকিত করতে চাইলে লাইলাতুল কদরে জেগে ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়ে দাও।

এমন বহু হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে, মহিমান্বিত এই পবিত্র রাতে আল্লাহর ফেরেশতারা তাঁরই হুকুমে তাঁরই বান্দাদের জন্য যাবতীয় রহমত, বরকত, কল্যাণ ও মঙ্গলের বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং ইবাদত-বন্দেগিরত নেককার বান্দাদের জন্য বিশেষ রহমত, শান্তি কামনা করে দোয়া করেন।

এখন ল করতে হবে, লাইলাতুল কদরের রাতটি কোন দিন, কখন? এ সম্পর্কে হজরত রাসুলে করিম (সা.) লাইলাতুল কদরকে রমজানুল মোবারকের শেষ ১০ দিনের যে কোনো বেজোড় রাতে অনুসন্ধান করতে বলেছেন । আল্লাহর নবী (সা.)-এর এ নির্দেশ মোতাবেক ২৬ রমজানের দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৭তম রাতকেই বিশেষ করে কদরের রাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অবশ্য কয়েকজন সাহাবি স্বপ্নযোগে রমজানের শেষ সাত দিনের যে কোনো দিন খোঁজ করার কথা বলেছেন। কাজেই রমজানের শেষ ১০ দিনের কথা আল্লাহর নবী (সা.) এ জন্যই বলেছেন, যাতে আল্লাহর বান্দারা সম্ভাব্য দিনগুলোতে বেশি বেশি করে জিকির, তাসবিহ-তাহলিল, সালাত আদায় এবং রাতভর কায়মনে ইবাদতে রত থাকে। অতএব, আমরা বছরের মহান কল্যাণময় রাতে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত, সালাত, জিকির-আসকার, মাহফিলে মিলাদ, মোনাজাত, ফরিয়াদের মাধ্যমে ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করি এবং আমাদের জীবন সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ রহমানের রহম-করমে সৌভাগ্যময় করে তুলতে সমর্থ হই।

লেখক : সভাপতি, সিরাত মিশন বাংলাদেশ

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৪২০, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।