ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

অধিকাংশ কওমী শিক্ষার্থীর পড়ালেখা শেষ হয় না

সাব্বির আহমদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১২
অধিকাংশ কওমী শিক্ষার্থীর পড়ালেখা শেষ হয় না

সিলেট: সিলেট বিভাগে ৪শ’ ৪০টি কওমী মাদ্রাসায় বর্তমানে ১ লাখ ৭৫ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। এছাড়া ৩৩ মাদ্রাসায় (তাকমীল) এমএ ও ৩৫টি মাদ্রাসায় হিফজ বিভাগ রয়েছে।

তবে এ বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত মাদ্রাসায় তাদের পড়ালেখা শেষ করতে পারেন না।
 
এসব শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই ঝরে পড়ে অথবা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষিত হতে পরে আলীয়া মাদ্রাসা বা স্কুল-কলেজে ভর্তি হতে হয়। যুগ যুগ ধরে এ শিক্ষা পদ্ধতির সংস্কার ও আধুনিকায়ন না হওয়ার ফলে এসব শিক্ষার্থীরা সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের তুলনায় দিনদিন পিছিয়ে পড়ছেন।

কওমী মাদ্রসা সমূহের শিক্ষাবোর্ড আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম-বাংলাদেশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। উল্লেখ্য, সিলেট সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে এ বোর্ডের উদ্যোগে বর্তমানে ৩দিনব্যাপী দস্তারবন্দী মহাসম্মেলন চলছে। এ সম্মেলনে ১৯৮৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত উত্তীর্ণ আলেম এবং হাফেজদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে পাগড়ি তুলে দেবে আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম-বাংলাদেশ।

এ বোর্ডের অধীনে ১৯৮৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৫ হাজার ৩শ’ ১৪ জন মাওলানা এবং ৬ হাজার ৫শ’ ৬৭ জন কুরআনে হাফেজ হয়েছেন। বোর্ড সূত্র জানায়, গত প্রায় ৩০ বছরে এই বোর্ড থেকে দু’বিভাগে পাশ করা এই ১১ হাজার ৮শ’ ৮১ জন শিক্ষার্থীর মাথায় মর্যাদার পাগড়ি তুলে দিতেই আয়োজন করা হয়েছে ৩০ সালা দস্তারবন্দী এ মহাসম্মেলনের।

বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া ৩দিনব্যাপী দস্তারবন্দী মহাসম্মেলনে ভারত, পাকিস্তান, সৌদীআরবসহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ইসলামী চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছেন।

আয়োজক সূত্রে আরো জানা গেছে, আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন মাদ্রাসাগুলো থেকে পাশ করাদের মধ্য থেকে প্রায় ৫ হাজার মাওলানা ও হাফেজ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে তাদের নাম রেজিস্ট্রেশন করেছেন।

সূত্র জানায়, উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা হোসাইন আহমদ মদনী (রহ:) উদ্যোগে সিলেটের ১১টি কওমী মাদ্রাসা নিয়ে ১৯৪১ সালের ১৬ মার্চ আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম বা কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়।

শুরুতে বোর্ডের অধিভূক্ত ১১ মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল কয়েকশ’। কালের ধারাবাহিকতায় ৭২ বছরে বর্তমানে বোর্ডের অধিভূক্ত মাদ্রাসার সংখ্যা হচ্ছে ৪শ’ ৪০টি। এর মধ্যে ৩৩টি মাদ্রাসায়ে তাকমীল (এমএ), ১৪ টিতে ফজিলত (বিএ), ৫৪টিতে সানাইয়্যাহ (এইচএসসি), ১শ’ ৪৬টিতে মুতাওয়াসসিতা (এসএসসি) ও ১শ’ ৫৮টি মাদ্রাসায় এবতেদায়ী (৫ম শ্রেণী) ক্লাস রয়েছে। কেবল মাত্র ৩৫টি মাদ্রাসায় রয়েছে হিফজ বিভাগ। কওমী মাদ্রাসায় প্রথমে ইংরেজি বিভাগ না থাকলেও বর্তমানে ইংরেজিসহ বিভিন্ন বিষয় পাঠদান করা হচ্ছে। সময়ের পরিবর্তনে কওমী মাদ্রাসার পাঠ্যসূচিতেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এই বোর্ডের পাঠ্যসূচিতে আরো সংস্কার করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বোর্ড থেকে উত্তীর্ণ লেখক ও ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা শাহ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘অনেকের কর্মসংস্থান কওমী মাদ্রাসায় হয়ে থাকে। একটি অংশ আলীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে যায় এবং উচ্চতর শিক্ষার জন্য বর্হিবিশ্বেও যায়। তাদের অনেকের শিক্ষা কওমী মাদ্রাসায় শেষ হয় না। অনেকেই হাটহাজারী, দেওবন্দ, ভারতের লৌক্ষতে যায়। পাকিস্তানেও আগে ছাত্ররা যেত এখন আর যায় না। ’

কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইসলামী শরীয়তের জ্ঞানটাকেই এখানে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এখন অনেক সংস্কার হচ্ছে। বাংলা, সমাজবিজ্ঞান, গণিত এসব বিষয় অন্তর্ভূক্ত আছে সেকেন্ডারি লেভেল পর্যন্ত। অনেক মাদ্রাসায় এখন কম্পিউটার শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এমনকি কওমী মাদ্রাসার অনেক ছেলে ইংরেজি সাহিত্য নিয়েও লেখাপড়া করছে। ’

বাংলাদেশ সময় : ১৫১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।