দমনমূলক নীতি ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নানামুখী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষামূলক প্রতিরোধ গড়তে আওয়ামী লীগের গত আমলের শেষ ভাগে জামায়াত, এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা) ও ইসলামী ঐক্যজোটকে নিয়ে চার দলীয় ঐক্যজোট গড়ে বিএনপি। পরবর্তীতে ইসলামী ঐক্যজোট থেকে বেরিয়ে খেলাফত মজলিস এ জোটে থেকে গেলেও বেরিয়ে যান এরশাদ।
ঢাকা : অনিবন্ধিত ও নামসর্বস্ব দল নিয়ে ‘জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্ট’ গঠন করছেন বিরোধী দলের নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নতুন জোটের নাম মোটামুটি চূড়ান্ত হলেও আত্মপ্রকাশের দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি।
বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিএনপি (খালেদা জিয়া-মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর), জামায়াত (মকবুল আহমাদ-ডা. শফিকুর রহমান), ইসলামী ঐক্যজোট (ফজলুল হক আমিনী-আবদুল লতিফ নেজামী), বিজেপি (ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ-শামিম আল মামুন), খেলাফত মজলিশ (মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক-অধ্যাপক ড. আহমেদ আবদুল কাদের), এলডিপি (অলি আহমেদ বীর বিক্রম-অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক-আবদুল মালেক চৌধুরী), জাগপা (শফিউল আলম প্রধান-খন্দকার লুৎফর রহমান), এনপিপি (শেখ শওকত হোসেন নীলু-ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ), বাংলাদেশ ন্যাপ (জেবেল রহমান গানি-এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (শায়েখ আবদুল মবিন-মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস), এনডিপি (খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা-আলমগীর মজুমদার), বাংলাদেশ লেবার পার্টি-(ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান-হামদুল্লাহ আল মেহেদী), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (এএইচএম কামরুজ্জামান খান-আতিকুল ইসলাম), বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি (অ্যাডভোকেট আবদুল মবিন-এম এ রশিদ প্রধান) ও ন্যাপ ভাসানী (শেখ আনোয়ারুল হক-হাসরত খান ভাসানী)-এই ১৬ দলের সমন্বয়ে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রণ্ট গঠন করছেন খালেদা জিয়া।
এদের মধ্যে এনডিপি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি ও ন্যাপ ভাসানী-এ পাঁচটি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত নয়। এরা কখনো নির্বাচন করতে পারবে না।
অপরদিকে এলডিপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ ন্যাপ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ- এই ছয়টি রাজনৈতিক দল ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়।
এর মধ্যে এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল অলি আহমেদ একটি আসনে বিজয়ী হলেও বাকি পাঁচটি দলের একজন প্রার্থীও নির্বাচিত হতে পারেননি। দলের প্রধানরাও প্রতিপক্ষের সঙ্গে ন্যূনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। জাতীয় সংসদে এরা কখনো প্রতিনিধিত্বও করেনি।
এছাড়া জোটের পুরনো সদস্য জামায়াত ২টি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ১ আসন পেলেও খেলাফত মজলিশ ও ইসলামী ঐক্যজোট কোনো আসনে নির্বাচিত হতে পারেনি।
সূত্রমতে, মহাজোটকে টেক্কা দিতে অনিবন্ধিত ও নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল নিয়ে জোট সম্প্রসারণ করে আগামীতে কতটা সুফল ঘরে তুলতে পারবে বিএনপি তা নিয়ে দলের মধ্যেই নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের নেতারা এরই মধ্যে বলা শুরু করেছে, বিএনপির ঘাড়ে সওয়ার হয়ে জামায়াত যেমন বৈতরণী পার হয়ে যাচ্ছে ঠিক তেমনিভাবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন সম্প্রসারিত নতুন জোটের শরিক হয়ে সাইনবোর্ড সর্বস্ব রাজনৈতিক দলগুলোও লাইম লাইটে আসার চেষ্টা করছে। রাজপথের কঠিন সংগ্রামে বিএনপির পাশে থাকার মতো সাংগঠনিক কাঠামো এদের নেই। ’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ছোট বড় সব দলের কাছেই আমাদের প্রত্যাশা সমান। রাজপথের আন্দোলনে জনগণই আমাদের মূল শক্তি। জোটের শরিক দলগুলো জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করবে মাত্র। ’
প্রসঙ্গত, ক্ষমতাসীন মহাজোটকে মোকাবিলার জন্য গত বছর জুলাই থেকে জোট সম্প্রারণের উদ্যোগ নেন খালেদা জিয়া। পর্যায়ক্রমে বৈঠক করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার চেয়ারম্যান ডা. অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ বীর বিক্রম, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমের সঙ্গে।
এছাড়া, গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের মতো জাতীয় নেতাদের সম্প্রসারিত জোটে আসার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।
কিন্তু জামায়াত সম্পৃক্ততা ও দলীয় আদর্শের কারণে বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আ স ম আবদুর রব, ড. কামাল হোসেন অনাগ্রহ দেখান।
সূত্রমতে, এসব জাতীয় নেতার অনাগ্রহের কারণে পাইপ লাইনে থাকা নির্বাচন কমিশনে অনিবন্ধিত ও নামসর্বস্ব ১১টি রাজনৈতিক দল নিয়েই চার দলীয় জোট (মূলত পাঁচ দল) সম্প্রারণের উদ্যোগ নেন খালেদা জিয়া।
বাংলাদেশ সম: ১৪০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১২