ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

জোট সম্প্রসারণ-২

খালেদার কালক্ষেপণে হতাশ সমমনারা

আসাদ জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১২
খালেদার কালক্ষেপণে হতাশ সমমনারা

দমনমূলক নীতি ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নানামুখী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষামূলক প্রতিরোধ গড়তে আওয়ামী লীগের গত আমলের শেষ ভাগে জামায়াত, এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা) ও ইসলামী ঐক্যজোটকে নিয়ে চার দলীয় ঐক্যজোট গড়ে বিএনপি। পরবর্তীতে ইসলামী ঐক্যজোট থেকে বেরিয়ে খেলাফত মজলিস এ জোটে থেকে গেলেও বেরিয়ে যান এরশাদ।

তবে এরশাদের সঙ্গ ছেড়ে নাজিউর রহমান মঞ্জু বিজেপি নাম নিয়ে থেকে যান চার দলীয় জোটে। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ‘নির্বাচনী জোট’ হিসেবে এ জোট আরো প্রাণ পায়। ওই নির্বাচনে জিতে বিএনপির গঠন করা সরকারেও এ জোটেরই আবহ বজায় থাকে। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ জোট অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। সম্প্রতি এ জোট আরো সম্প্রসারণের কথা শোনা যাচ্ছে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। কবে কিভাবে এ জোট আরো সম্প্রসারণ হবে, কোন কোন দল জোটে আসবে, চার দলীয় ঐক্য জোট নামটি থাকবে নাকি পাল্টাবে, বিএনপির কাছে কার প্রত্যাশা কি রকম- এসব নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী এ সিরিজ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট আসাদ জামান।


ঢাকা: চারদলীয় জোট সম্প্রসারণে জোটনেতা খালেদা জিয়ার কালক্ষেপণে যারপরনাই হতাশ সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতারা। গত বছর জুলাই থেকে শুরু হওয়া জোট সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া সাড়ে সাত মাসেও শেষ না হওয়ায় আগ্রহেও বেশ ভাটা পড়েছে তাদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত বছর ১০ অক্টোবর সিলেট অভিমুখে রোডমার্চের আগেই জোট সম্প্রসারণের কাজ চূড়ান্ত করার কথা বলেছিলেন খালেদা জিয়া।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে জোটে যেতে আগ্রহী লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপি (অলি আহমেদ বীর বিক্রম, অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক, আব্দুল মালেক চৌধুরী), জাগপা (শফিউল আলম প্রধান, খন্দকার লুৎফর রহমান), এনপিপি (শেখ শওকত হোসেন নীলু, ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ), বাংলাদেশ ন্যাপ (জেবেল রহমান গানি, এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (শায়েখ আব্দুল মবিন, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস), এনডিপি (খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, আলমগীর মজুমদার), বাংলাদেশ লেবার পার্টি (ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, হামদুল্লাহ আল মেহেদী), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (এএইচএম কামরুজ্জামান খান, আতিকুল ইসলাম), বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি (অ্যাডভোকেট আব্দুল মবিন, এম এ রশিদ প্রধান) ও ন্যাপ ভাসানী (শেখ আনোয়ারুল হক, হাসরত খান ভাসানী)-এই ১১ দলের নেতারা সিলেট অভিমুখে রোডমার্চ সফল করতে কোমর কষে মাঠে নামেন।

কিন্তু সিলেট রোডমার্চের কয়েকদিন আগে জানানো হয়, চারদলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা জেলে থাকায় এই মুহূর্তে জোট সম্প্রারণের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না খালেদা জিয়া। তবে চট্টগ্রাম রোডমার্চের আগেই জোট সম্প্রসারণের কাজ চূড়ান্ত করা হবে।

কিন্তু ৮ ও ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চের আগে জোট সম্প্রসারণের বিষয়ে সমমনা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আর কোনো বৈঠকই করেননি বিএনপি চেয়ারপারসন। তবে চারদলীয় জোটের পক্ষ থেকে সমমনা দলগুলোকে আশ্বাস দেওয়া হয় পলোগ্রাউন্ড থেকে ঘোষিত কর্মসূচি পালনের আগেই জোট সম্প্রসারণের কাজ চূড়ান্ত করা হবে। বিশেষ করে ২৯ জানুয়ারি গণমিছিলের আগেই আসবে চূড়ান্ত ঘোষণা।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২২ জানুয়ারি খালেদা জিয়া চারদলীয় জোট ও সমমনা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠক শেষে বিএনপির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, ১২ মার্চের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে জোট সম্প্রসারণের কাজ।

সূত্রমতে, ওই দিনের বৈঠকেই নতুন জোটের জন্য ঘোষণাপত্র তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়  বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। কিন্তু সে ঘোষণাপত্র তৈরির কাজ আপাতত স্থগিত রয়েছে। ১২ মার্চের কর্মসূচি সফল করতেই ব্যস্ত রয়েছেন বিএনপির এ দুই নেতা। ’

সূত্র আরও জানায়, জোট সম্প্রসারণে বিএনপির কালক্ষেপণের কারণ জানতে সমমনা নেতারা দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দ্বারস্থ হলে সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে পারছেন না তিনি। বরাবরের মতো ‘হচ্ছে’ ‘হবে’ বলেই কাটিয়ে দিচ্ছেন। সর্বশেষ আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি নতুন ডেটলাইনের কথা বলেছেন বিএনপির মুখপাত্র। তবে তার এই আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছেন না সমমনারা।

কেউ কেউ বলছেন- রোডমার্চ, গণমিছিল, মহাসমাবেশ নামক ‘মুলা’ ঝুলিয়ে রেখেই সামনের কঠিন মুহূর্ত পর্যন্ত সমমনাদের অপেক্ষায় রাখতে চায় বিএনপি। কেউ কেউ আবার আদৌ জোট হবে না বলে বাজি ধরছেন। ’

জোট সম্প্রসারণে বিএনপির কালক্ষেপণ সম্পর্কে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নীলু বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিএনপি-ই তো মূল (প্রিন্সিপাল) দল। তারা একবার বলল রোডমার্চের আগেই জোট সম্প্রারণ হবে, আবার বলল গণমিছিলের আগেই, এখন বলছে ১২ মার্চের আগেই জোট সম্প্রসারণ। তবে তাদের নড়াচড়া দেখে মনে হচ্ছে না ১২ মার্চের আগে জোট সম্প্রসারণের কাজ সম্পন্ন করবে তারা। ’

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘শেষ মিটিংয়ের পর (২২ জানুয়ারি) এ ব্যাপারে আমাদের আর কিছু জানানো হয়নি। জোট সম্প্রসারণ কবে নাগাদ হবে সে কথা বিএনপিই ভালো জানে। ’

বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘২২ জানুয়ারি খালেদা জিয়া ও ২৭ জানুয়ারি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠকের পর এ ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে আর কোনো আলোচনা করেনি বিএনপি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ১২ মার্চের আগে জোট সম্প্রসারণ হচ্ছে না।

জোট সম্প্রসারণে কালক্ষেপণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজের প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ‘১২ মার্চের আগেই জোট সম্প্রসারণের কাজ চূড়ান্ত করা হবে, এমন কথা আপনাকে কে বলেছে?’

গত ২৭ জানুয়ারি নয়াপল্টনে সমমনাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে দেওয়া বক্তব্য স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ১২ মার্চের আগেই জোট সম্প্রসারণের কাজ সম্পন্ন করতে। দেখা যাক কতদূর হয়। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।