ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

‘প্রতিবছর বাংলাদেশে পানিতে ডুবে মারা যায় ১৮ হাজার শিশু’

আল মাসুদ নয়ন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১২
‘প্রতিবছর বাংলাদেশে পানিতে ডুবে মারা যায় ১৮ হাজার শিশু’

ঢাকা: দেশে প্রতিবছর পানিতে ডুবে ২২ হাজার লোক মারা যায়। এরমধ্যে ১৮ হাজারই হচ্ছে শিশু।

ইন্টারন্যাশনাল ড্রাউনিং রিসার্চ সেন্টার-বাংলাদেশ (আইডিআরসি-বি) ইন্টারন্যাশনাল ড্রাউনিং রিসার্চ সেন্টারের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।  প্রতিবছর পানিতে ডুবে ২২ হাজার লোক মারা যায়। এরমধ্যে ১৮ হাজারই হচ্ছে শিশু।

আইডিআরসি-বি’ র ওই তথ্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সারা পৃথিবীতে প্রতিবছর ১.২ মিলিয়ন লোক পানিতে ডুবে মারা যায়। অর্থাৎ প্রতি মিনিটে ২ জনের বেশি মানুষ পানিতে ডুবে মারা যান।

সবচেয়ে বেশি পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার সংখ্যা ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর। এশিয়া মহাদেশে প্রতিবছর ৩ লাখ ৫০ হাজার শিশু প্রতিবছর পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে।

ওই গবেষণা প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ১৮ বছরের কম বয়সী ছেলে-মেয়ে প্রতিবছর ১৮ হাজারেরও বেশি পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে। যা প্রতিদিন গড় হিসেবে দাঁড়ায় ৫০ জন।

তবে, সবচেয়ে বেশি যে বয়সের শিশুরা পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে তাদের বয়স ১ বছর থেকে ৪ বছর এবং অতিদ্রুত তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।  

বেশিরভাগ পানিতে ডুবে যাওয়ার ঘটনা সকাল ৯টা থেকে ২টার মধ্যে গ্রাম অঞ্চলেই বেশি ঘটছে। বেশির ভাগ পানিতে ডুবার ঘটনা ঘটছে পুকুর, খাল এবং নদীতে।

ইউনিসেফের জরিপ-২০০৬ এর উদ্ধৃতি উল্লেখ করে ওই গবেষণা প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, বাংলাদেশে শিশুর মৃত্যুর কারণ এবং যে হারে শিশু মৃত্যু হচ্ছে তা হলো,  সেপটিসিমায় ১ শতাংশ , পশুর কামড়ে ৪ শতাংশ, আত্মহত্যায় ৪ শতাংশ, ডায়ারিয়ায় ১৩ শতাংশ,  নিউমোনিয়ায় ২০ শতাংশ, সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ শতাংশ, অপুষ্টিতে ১৩ শতাংশ, একই সঙ্গে ডায়ারিয়া এবং নিউমোনিয়ায় ৪ শতাংশ এবং পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে ২৮ শতাংশ এবং বাকি ৭ শতাংশ অন্যান্য কারণে মারা যাচ্ছে। এরমধ্যে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া শিশুর সংখ্যাই বেশি।

এ ব্যপারে সেন্টার ফর ইন্জুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. একেএম ফজলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিবছর ২২ হাজার লোক পানিতে ডুবে মারা যায়। এরমধ্যে, ১৮ হাজারই শিশু। ’

তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে অস্ট্রেলিয়ান সরকারের অর্থায়নে এইড প্রোগ্রামের আওতায় আমরা এরইমধ্যে ২ লাখ ২০ হাজার শিশুকে সাঁতার শিখিয়েছি। আমরা তাদের শেখানোর পাশাপাশি পানিতে পড়লে উদ্ধার কৌশল এবং পানিতে পড়লে তাকে পরে কি চিকিৎসা দেওয়া হবে সে বিষয়ে সহযোগিতা করছি। ’
 
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে ৪ বছরে নিচে যত শিশু রয়েছে তাদের সাঁতার শিখানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আপনারা দেখেছেন আজও একটি লঞ্চ ডুবির ঘটনা ঘটেছে। সাঁতার শেখাটা কত জরুরি। সেখানেও বেশ কিছু শিশুমৃত্যুর ঘটনা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা অস্ট্রেলিয়ান সংস্থা রয়েল লাইফ সেভিং এবং বাংলাদেশে ইউনিসেফের সাথে কাজ করছি। ’  

উল্লেখ্য, সোমবার দিনগত রাত ২টার দিকে প্রায় দু’শতাধিক যাত্রী নিয়ে এমভি শরীয়তপুর-১ লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার উত্তর চরমসুরা এলাকায় মেঘনা নদীতে ডুবে যায়।

এ ঘটনায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, দমকলবাহিনী এবং পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় মেঘনা নদী থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩২টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৩ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী, ১ জন কিশোরী ও ৫ জন শিশু রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।