ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

মাশরাফি-তাসকিন তোপে সমতায় ফিরলো বাংলাদেশ

মহিবুর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১৬
মাশরাফি-তাসকিন তোপে সমতায় ফিরলো বাংলাদেশ ছবি: শোয়েব মিথুন-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মিরপুর থেকে: মাশরাফির তুলনা আসলে মাশরাফি নিজেই। মানুষ ক্ষেপে গেলেও দারুণ কিছু হয় তার জ্বলন্ত উদাহরণ এই টাইগার অধিনায়ক।



কেননা তাঁর ক্ষ্যাপাটে বোলিং ও ব্যাটিংয়ে ইংল্যান্ডকে ৩৪ রানে হারিয়ে সিরিজে ১-১ এ সমতা আনলো বাংলাদেশ। বলতে গেলে এক মাশরাফিই ওয়ানডেতে ফর্মের তুঙ্গে থেকে উড়তে থাকা ইংল্যান্ডকে টেনে মাটিতে নামালেন।

ব্যাট হাতে যেমন খেলেছেন ২৯ বলে ৪৪ রানের বিষ্ফোরক ইনিংস তেমনি বল হাতেও তুলে নিয়েছেন ৪টি উ্ইকেট। শুধু মাশরাফিই নন, বাংলাদেশের এই জয়ের দিনে অবদান রেখেছেন তাসকিনও। দলের প্রয়োজনের সময়ে ব্রেক থ্রু এনে দিয়ে থলিতে পুড়েছেন ৩ উইকেট।

মূলত তাদের পেস বিষে নীল হয়েই ২৩৯ রানের সহজ লক্ষ্যও টপকাতে পারলো না ইংলিশরা, ঢলে পড়লো ২০৪ রানে!

তবে বাংলাদেশ জয় তুলে নিয়েছে ঠিকই কিন্তু রোববার (৯ অক্টোবর) সিরিজে ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচে ইংল্যান্ডের বোলারদের সামনে ব্যাট হাতে প্রত্যাশিত রুপে জ্বলে উঠতে দেখা যায়নি স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের। দলীয় ৩৯ রানে তামিম, ইমরুল ও সাব্বির এই তিন টপ অর্ডারের বিদায়ে শুরু থেকেই চাপে ছিল।


তবে চতুর্থ উইকেটে মুশফিক ও রিয়াদের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল তাদের হাত ধরে চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহের পথেই হাটছে লাল-সবুজের দল। সিঙ্গেল, ডাবলস ও বাউন্ডারি অর্থাৎ যখন যে শটটি দলের জন্য খেলা দরকার ঠিক সেভাবেই খেলছিলেন এই দুই ব্যাটসম্যান।

কিন্তু হঠাতই পা হরকালেন মুশফিক। ব্যক্তিগত ২১ রানে জ্যাক বলের শর্ট বলটি ফাইন লেগে তুলে দিলে তা তালুবন্দি করেন মইন আলী। তখন বাংলাদেশের দলীয় রান ৮৯। মুশফিকের ফিরে যাবার আগে টিম বাংলাদেশ যেটা পেল সেটা হল অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ৫০ রানের অবিচ্ছিন্ন এক জুটি।  
একথা সবাই একবাক্যেই স্বীকার করবেন যে ১০০ রানের নিচে যখন টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যানই ক্রিজ ছাড়া হন তখন যে কোন দলের জন্যই তা একটি চাপ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও হল তাই।

দলের এমন চাপের মুহুর্তে ব্যাট হাতে এলেন সাকিব। কিন্তু সাকিবও পারলেন না বিদ্যমান চাপ কাটিয়ে সুখের কোন মুহূর্ত উপহার দিতে। কেননা পঞ্চম উইকেটে রিয়াদের সাথে ২৪ রানের জুটি গড়ে ব্যক্তিগত ৩ রানে উইকেট ছাড়া হলেন।

তবে বেশ নির্ভার খেলছিলেন রিয়াদ। চোখের সামনে দিয়ে এত সতীর্থের চলে যাওয়া দেখেও এতটুকু ভড়কে যাননি রবং ঠান্ডা মাথায় প্রতিটি বল মোকাবেলা করে দলকে কিছুটা হলেও চেয়েছেন চাপ মুক্ত করতে। আর এমন নির্ভার খেলেই ষষ্ঠ উইকেটে মোসাদ্দেকের সঙ্গে ৪৮ রানের জুটি গড়ে ফিরে গেলেন ব্যক্তিগত ৭৫ রানে।  

রিয়াদের বিদায়ের পর মোসোদ্দেক যখন নাসিরের সাথে হাত খুলে ব্যাট করছিলেন তখন উল্লাসের উপলক্ষ্য ফিরলো টাইগার শিবিরে। দীর্ঘ সময় ঝিমিয়ে থাকা শের-ই-বাংলার গ্যালারিতে প্রাণের সঞ্চার হলো। কিন্তু সেই মুহুর্তগুলোকে খুব বেশিক্ষণ বয়ে নিতে পারলেন না মোসোদ্দেক। দলীয় ১৬৯ ও ব্যক্তিগত ২৯ রানে রশিদের শিকার হয়ে তিনি যখন নিজের ইনিংসের ফুলস্টপ টানলেন তখন অনেকেই হয়তো ভাবেননি বাংলাদেশ ২৩৮ রানের সংগ্রহ গড়তে পারবে।

কিন্তু এমন ধারণা উড়িয়ে দিলেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি। কেননা ব্যাট হাতে আসার পরেই শুরু হলো বাংলাদেশের রানের বন্যা। এখানে মাশরাফিকে একা ক্রেডিট দিলে হয়তো নাসিরের সাথে অবিচার করা হবে। দীর্ঘ দিন পর দলে ফিরে অধিনায়কের সঙ্গে নাসিরও সেই রান বন্যায় শামিল হলেন। টেল এন্ডার হয়েও রান বানে গ্যালারিতে তুললেন আনন্দের ঢেউ।

২৭ বল খেলে ২ চার ও ৩ ছয়ে মাশরাফি খেললেন ৪৪ রানের বিষ্ফোরক ইনিংস আর নাসির খেললে ২৭ বলে ২৭ রানের সময়োচিত ইনিংস। আর তাতে যেটা হলো ৮ উইকেটে ২৩৮ রানের সাদামাটা সংগ্রহ।

মজার ব্যাপার হলো টাইগারদের দেয়া মামুলি ২৩৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই হিমশিম খেয়েছে লায়ন্সরা। আর এই কাজটি করতে যে দুই টাইগার বোলার ভূমিকা রেখেছেন তারা হলেন মাশরাফি ও সাকিব।

মাশরাফি তোপে জ্যাসন রয়, জেমস ভিনস্ ও বেন স্টোকস আর সাকিব ঘূর্ণিতে বেন ডাকেট প্যাভিলনের পথ দেখলে জয়ের সুবাস পেতে শুরু করে স্বাগতিক শিবির।

তবে পঞ্চম উইকেটে জনি বেয়ারস্টো ও অধিনায়ক জশ বাটলার জুটি সেই ভীতি কাটিয়ে উঠে পাল্টা ইংল্যান্ডকে জয়ের পথ দেখাতে চাইছিলেন। কিন্তু সেখানে বাধ সাধেন তাসকিন আহেমেদ। তার গতির কোছে ব্যক্তিগত ৩৫ রানে বেয়ারস্টো পরাস্ত হলে আবার জয়ের পাল্লা হেলে পড়ে বাংলাদেশের দিকে।

হেলে পড়া পাল্লাকে আরও হেলাতে ঠিক তিন ওভার পরেই জ্বলে উঠেন নাসির। মইন আলীকে ব্যক্তিগত ৪ রানে তুলে দেন সাকিবের হাতে। শের-ই-বাংলার গ্যালারি তখন ফেঁটে পড়ছিল বাংলাদেশ! বাংলাদেশ ধ্বনিতে।

আর এই ধ্বনির রেশ হতে না হতেই আবার তাসকিন আঘাতে ব্যক্তিগত ৫৭ রানে অধিনায়ক বাটলার ফিরে গেলে ম্যাচ থেকেই ছিটকে যায় ইংল্যান্ড।
তবে সাত সাতটি উইকেট পড়ে যাওয়ার পরেও দশম উইকেটে আদিল রশিদ ও জ্যাক বল যেভাবে চড়াও হয়েছিলেন তাতে আবার চিন্তার ভাঁজ পড়ে স্বাগতিক সমর্থকদের কপালে।

তবে লাল সবুজের সমর্থকেদের কপালের সেই ভাঁজ মুহূর্তেই মিইয়ে দেন মাশরাফি। ৪৫তম ওভারে তার চতুর্থ বলটি জ্যাক বল আকাশে উঠিয়ে দিলে সীমানা থেকে তা তালুবন্দি করেন ফিনিশার নাসির।

ব্যাস্, ইংল্যান্ডের বিপেক্ষে চতুর্থ ওয়ানডে জয় ও সিরিজে ১-১ এ সমতার উল্লাসে মেতে উঠে টিম বাংলাদেশ।     
   
বাংলাশে সময়: ২৩৫৪ ঘণ্টা, ৯ অক্টোবর ২০১৬
এইচএল

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।