মিতালি অবশ্য বিদেশি গাড়িতেই সন্তুষ্ট নন। তিনি চান, দেশে মেয়েদের ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ও গুরুত্ব দুটোই আরও বাড়ুক।
চাবি প্রদান অনুষ্ঠানে মিতালি জানান, ‘এমন উপহার মেয়েদের খেলায় আরও উৎসাহ বাড়াবে। এর আগেও আমি চামুণ্ডেশ্বরনাথ সাহেবের কাছে একটি গাড়ি পেয়েছিলাম। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় নারী বিশ্বকাপের ফাইনালে স্বাগতিকদের বিপক্ষে হেরে আসলেও তিনি আমাকে একটি শেভরোলেট কার উপহার দিয়েছিলেন। মেয়েদের এভাবে উৎসাহ তিনিই দিতে পারেন। শুধু গাড়িই নয়, চামুণ্ডেশ্বরনাথ সাহেব আমাকে অনেক ব্যাট উপহার দিয়েছেন। আমার এতো এতো রান সেই ব্যাটগুলো থেকেই এসেছে। ’১৯৯৯ সালে ওয়ানডে ক্যারিয়ার শুরু করলেও টিম ইন্ডিয়ার বর্তমান দলপতি মিতালি রাজের টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ২০০২ সালে। দীর্ঘ ১৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে মিতালি রাজ খেলেছেন মাত্র ১০টি টেস্ট! সাদা পোশাকে মিতালি ১০টি ম্যাচ খেললেও ওয়ানডে জার্সিতে ভারতের হয়ে খেলেছেন ১৮৬ ম্যাচ। প্রথম কোনো নারী ক্রিকেটার হিসেবে ৬ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি। এছাড়া, নারীদের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় এক নম্বরে তিনি (৬ হাজার ১৯০ রান)। মেয়েদের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৪৯টি অর্ধশতকও এসেছে মিতালির ব্যাট থেকে। সাদা পোশাকের ম্যাচে ১৬ ইনিংস ব্যাট করে মিতালি করেছেন ৬৬৩ রান। যেখানে একটি সেঞ্চুরি আর ৪টি হাফ-সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি। ব্যাটিং গড় চোখ কপালে তোলার মতো, ৫১.০০। এখানেই মিতালির ব্যাটিং নৈপুণ্য শেষ নয়। তিনবার টেস্টে অপরাজিত থাকা এই ব্যাটারের ব্যাট থেকে যে সেঞ্চুরিটা এসেছে সেটা ডাবল সেঞ্চুরির বিস্ফোরক এক ইনিংস। অভিষেকের বছরই ক্যারিয়ার সেরা ২১৪ রান করেছেন তিনি। মাত্রই তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমে মিতালি ২০০২ সালের আগস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন সেই বিস্ফোরক ইনিংসটি, যা সাজানো ছিল ৪০৭ বলে ১৯টি বাউন্ডারিতে। এটি মেয়েদের ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ২৪২ রান করে দুই বছর পরই (২০০৪) মিতালিকে পেছনে ফেলেন পাকিস্তানের কিরন বালুচ।
অথচ, বিশ্বসেরা এই ব্যাটারের হয়তো ক্রিকেটার হওয়াই হতো না। মিতালির বাবা দোরাই রাজ জানান, ‘আমি ছিলাম ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের অফিসার। পরে অন্ধ্র ব্যাংকে চাকরি নেই। তখন আমার ছেলে মিঠুন রাজকে বন্ধু জয়তী প্রসাদের অধীনে থাকা সেন্ট জনস কোচিং ক্যাম্পে ভর্তি করিয়ে দেই। আর মিতালি ভারতনাট্যম শিল্পী হওয়ার সাধনায় নাচ শিখতে যেত। তখন তার বয়স মাত্র ১০ বছর। মিতু (ডাকনাম) খুব সকালে উঠতে পেত না। তার অভ্যাস বদলের জন্য আমি তার ভাইয়ের (মিঠুন) সাথে ক্রিকেটের কোচিংয়ে খেলা দেখতে যাওয়ার পরামর্শ দেই। সে ভাইয়ের সাথেই কোচিংয়ে খেলা দেখতে যেত। একদিন আমার বন্ধু জয়তী (কোচ) জানালো, মেয়ের খুব ইচ্ছে ক্রিকেট শেখার। সে আরও জানালো, মিতু ক্রিকেট খেললে একদিন সে বিশ্বসেরা ব্যাটার হতে পারবে। সেই থেকেই মিতুর নাচের অধ্যায় শেষ, ক্রিকেটের হাতেখড়ি শুরু। ’
দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ফাইনালে তোলার পাশাপাশি ব্যাট হাতে বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেন মিতালি। ক্যাপ্টেন মিতালিকে সংবর্ধনা দেয় তেলেঙ্গনা সরকার৷ ৩৪ বছরের এই হায়দ্রবাদির হাতে এক কোটি টাকা নগদ এবং বাড়ি তৈরির জন্য ৬০০ স্কয়ার গজের প্লট দেওয়া হয় তেলেঙ্গানা সরকারের পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, ০১ আগস্ট ২০১৭
এমআরপি