ঢাকা, সোমবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩২, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ রবিউস সানি ১৪৪৭

ক্রিকেট

মানজারুল রানা চলে যাওয়ার এক যুগ

মেহেরিনা কামাল মুন, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:০৬, মার্চ ১৬, ২০১৯
মানজারুল রানা চলে যাওয়ার এক যুগ মানজারুল ইসলাম রানা। ছবি: সংগৃহীত

সময়টা নেহাত কম নয়। ১২ বছর। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটে তার চলে যাওয়ার ক্ষত শুকায়নি এক বিন্দুও। এখনও মনের অজান্তেই প্রশ্ন জাগে, যদি মোটরসাইকেলেরর গতিটা একটু কম থাকতো! আরেকটু সাবধানে চালাতো।! এমন অনেক কিছুই এখনও ভেসে ওঠে মনের মধ্যে। কিন্তু তিনি চলে গেছেন অনেক দূরে। সঙ্গে নিয়ে গেছেন তার বন্ধুকেও।

মানজারুল ইসলাম রানা। বাংলাদেশ ক্রিকেটের গুরুত্বপূর্ণ একটি নাম।

খেলার মাঠের পাশাপাশি সতীর্থদের মনে এখনও যেনো অক্ষত একটি নাম। ২০০৭ সালের ১৬ মার্চ এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় জীবন দেন এই ক্রিকেটার। সঙ্গে ছিলেন সাজ্জাদুল হাসান সেতু নামে প্রথম শ্রেণির আরেক ক্রিকেটার।

ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্যাচে পরের দিনই ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। দলের সবাই অনুশীলন শেষ করে ম্যাচের পরিকল্পনায় ব্যস্ত। আর এমন সময় আসে সেই ফোন কল। ‘রানা-সেতু নেই’। পুরো ড্রেসিং রুমে নেমে এলো যেনো কবরের নীরবতা। কারো মুখে কোনো কথা নেই। কেউ নিজের জায়গা থেকেও নড়ছেন না।

গায়ে জ্বর নিয়ে এক পর্যায়ে সেখান থেকে উঠে নিজের রুমে চলে গেলেন রানার সবচেয়ে কাছের বন্ধু মাশরাফি বিন মর্তুজা। কোনো সফরে একই রুমে থাকতেন দু’জন। দু’জন স্বভাবে একেবারেই বিপরীতমূখী হলেও ছিলেন সবচেয়ে কাছের বন্ধু। সেই বন্ধুকে হারিয়ে যেনো খেই হারিয়ে ফেলেন বর্তমান ওয়ানডে অধিনায়ক।

পরের দিন ম্যাচ খেলতে পারবেন কিনা তা নিয়েও দেখা দেয় সংশয়। কিন্তু মাশরাফি তেজোদ্দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা দেন, ‘খেলতে পারবো না কেন? রানার জন্যি খেলতে হবে। ’

মানজারুল ইসলাম রানা স্ট্যান্ড।  ছবি: মেহেরিনা কামাল

পরদিন রানার শোককে শক্তিতে পরিণত করেই মাঠে নামে লাল-সবুজের দল। পায় দুর্দান্ত এক জয়।  

২০০৭ বিশ্বকাপের ঘোষিত স্কোয়াডে জায়গা পাননি বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার মানজারুল ইসলাম রানা। দল চলে গেলেও তিনি চলে যান নিজ শহর খুলনায়। সেখানেই অনুশীলন করছিলেন নিজের মতো করেই। ১৬ই মার্চের বিকেল। অনুশীলন শেষে নিজের প্রিয় মোটরসাইকেলের পেছনে সতীর্থ সাজ্জাদুল হাসান সেতুকে চাপিয়ে যাচ্ছিলেন শহরের অদূরে প্রিয় এক হোটেলে দুপুরের খাবার খেতে।

কিন্তু খুলনার বালিয়াখালি ব্রিজের কাছে আসতেই বিপরীত দিক থেকে আসা এক অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান জাতীয় দলের অন্যতম নিয়মিত সদস্য মানজারুল ইসলাম রানা। গুরুতর আহত অবস্থায় সেতুকে হাসপাতালে নেওয়া গেলেও বাঁচানো যায়নি।

মাত্র ২২ বছর ৩১৬ দিন বয়সে চলে যান রানা। সর্বকণিষ্ঠ প্রয়াত টেস্ট ক্রিকেটারের নাম  মানজারুল ইসলাম রানা। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ দলের জার্সিতে রানার অভিষেক। চার বছরে খেলেন ৬ টি টেস্ট এবং ২৫টি ওয়ানডে ম্যাচ।

এসব ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশের ক্রিকেট রানাকে সবচেয়ে বেশি মনে করে ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের জন্য। ০-২তে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশ যখন একেবারেই খাদের কিনারায়, তখণ রানার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ৩-২ তে জিতে যায় বাংলাদেশ দল। যা এক কথায় ক্রিকেট ইতিহাসে বিরল এক সিরিজ।

মানজারুল ইসলাম রানার স্মৃতিকে ধরে রাখতে তার শহর খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে তার নামে তৈরি করা হয়েছে একটি স্ট্যান্ড। নাম ‘মানজারুল ইসলাম রানা স্ট্যান্ড’।

বাংলাদেশ সময়:  ১৭০৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৯
এমকেএম/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।