বৃষ্টি ও বাজে আবহাওয়া কারণে প্রায় আড়াই দিন গড়ানো পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষটিতে এক ইনিংস ও ৮ রানের লজ্জার পরাজয় বরণ করেছে বাংলাদেশ। ফলোঅনে পড়া স্বাগতিকরা টেস্টের পঞ্চম দিনে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৫ রানে অলআউট হয়।
বুধবার (০৮ ডিসেম্বর) মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টেস্টের শেষ দিন বাংলাদেশের ৩ সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস ও সাকিব আল হাসান কিছুটা হাল ধরেন। তবে লজ্জার হার এড়াতে এই দৃঢ়তাও যথেষ্ট ছিল না।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: ৩০০/৪ ডিক্লে.
বাংলাদেশ: (ফলোঅন) ৮৭ ও ২০৫
এর আগে দিনের শুরুতে প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটে ৭৬ রান নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। তবে পাকিস্তানি বোলিং তোপে আজ মাত্র ১০ রান যোগ করতে পারে টাইগাররা, গুটিয়ে যায় মাত্র ৮৭ রানে। ফলে ফলোঅনে পড়তে হয় বাংলাদেশকে।
পাকিস্তানের সাজিদ খান ৮ উইকেট শিকার করেন। প্রথম ইনিংসে ৩৩ করে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ স্কোরার সাকিব। নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট থেকে আসে ৩০।
ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু এই ইনিংসেও পূর্বের ন্যায় পরপর উইকেট হারায়। অভিষেক হওয়া মাহমুদুল হাসান জয় গত ইনিংসে ডাক মারার পর এই ইনিংসে ফেরেন ৬ রানে। কয়েক বল না যেতেই শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে উইকেট হারান সাদমান ইসলাম (২)।
সাদমানের ফেরার কিছুক্ষণ পর বিদায় নেন অধিনায়ক মুমিনুল হকও। হাসান আলীর বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ব্যক্তিগত ৭ রানে সাঝঘরে ফেরেন তিনি। গত ইনিংসে থিতু হয়ে থাকা নাজমুল হাসান শান্ত এবার আর পারলেন না। ফাওয়াদ আলমের হাতে ক্যাচ তুলে আফ্রিদির দ্বিতীয় শিকার হয়ে ব্যক্তিগত ৬ রানে বিদায় নেন তিনি।
শান্তর ফেরার পর ব্যাট করতে নেমে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে দলের হাল ধরেন লিটন দাস। দারুণ ব্যাট করে দলকে শতকের কাছে আনতেই উইকেট হারান এ ব্যাটার। সাজিদ খানের স্পিনে ফাওয়াদের হাতে ক্যাচ তুলে ব্যক্তিগত ৪৫ রানে বিদায় নেন তিনি।
ম্যাচ বাঁচানোর লড়াইয়ে আশা দেখাচ্ছিলেন মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। দুজনের জুটিতে ৪৯ রানও যোগ হয়েছিল। কিন্তু চা বিরতির ঠিক আগে অকারণে ঝুঁকিপূর্ণ সিঙ্গেল নিতে গিয়ে ব্যক্তিগত ৪৮ রানেই রান আউট হয়ে ফিরলেন মুশফিক। ১৩৬ বল স্থায়ী ইনিংসটি ৩ চারে সাজানো। মুশফিকের বিদায়ের পর থিতু হয়ে ব্যাট করে অর্ধশতক তুলে নেন সাকিব। ৮ চারে ৯০ বলে ফিফটির দেখা পান তিনি।
নিজের ৩৪ রানের মাথায় সাকিব আবার দারুণ এক রেকর্ডও গড়েন। দ্রুততম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ৪ হাজার রান ও ২০০ উইকেটের মালিক হন বিশ্বসেরা এই ক্রিকেটার।
যখন নিয়মিত বোলারদের দ্বারা সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের জুটি ভাঙা সম্ভব হচ্ছিল না, ঠিক তখন বল হাতে তুলে নিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। ওভারের দ্বিতীয় বলেই এই পার্ট-টাইম স্পিনারের বলেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়লেন মিরাজ। পরের ওভারে বিদায় নিলেন দারুণ খেলতে থাকা সাকিবও।
টেস্ট ক্রিকেটে পাকিস্তানি অধিনায়কের প্রথম উইকেট মিরাজ। আর তার শিকার হয়ে ফেরেন ৭০ বলে ১৪ রানের ধৈর্যশীল ইনিংস খেলা বাংলাদেশি অলরাউন্ডার। যদিও শুরুতে আম্পায়ার বাবরদের আবেদন সাড়া দেননি। কিন্তু রিভিও নিয়ে উইকেট পতন নিশ্চিত করে পাকিস্তান। ফলে শেষ হয় সাকিব ও মিরাজের ৫১ রানের দারুণ এক জুটির। পরের ওভারে সাকিব বিদায় নিলেন সাজিদ খানের বলে বোল্ড হয়ে। মূলত সাকিবের ১৩০ বলে ৯ চারে ৬৩ রানে আউট হওয়ায় বাংলাদেশের লিড পাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে যায়।
পেসার খালেদ আহমেদ ব্যক্তিগত শূন্য রানে সাজিদের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন। শেষদিকে তাইজুল ইসলাম ও এবাদত হোসেন উইকেট কামড়ে ম্যাচ বাঁচানোর চেষ্টা করেন। তবে সাজিদের বলে তাইজুল এলবি হলে শেষ চেষ্টাও বৃথা যায়। ৩১ বলে ৫ রান করেন তাইজুল। ১৩ বলে শূন্য রান করা এবাদত অপরাজিত থাকেন।
পাকিস্তানি বোলারদের মধ্যে স্পিনার সাজিদ খান ৪ উইকেট নেন। দুটি করে উইকেট লাভ করেন আফ্রিদি ও হাসান আলী। বাবর আজম এক উইকেট পান।
দুই ইনিংসে মোট ১২ উইকেট পাওয়া সাজিদ খান ম্যাচ সেরা হন। আর দুই টেস্টে দারুণ ব্যাট করা আবিদ আলী সিরিজ সেরা।
এর আগে সিরিজের প্রথম টেস্টে চট্টগ্রামে ৮ উইকেট জয় লাভ করে পাকিস্তান।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২১
এমএমএস