ঢাকা, বুধবার, ১২ চৈত্র ১৪৩১, ২৬ মার্চ ২০২৫, ২৫ রমজান ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নারী পোশাককর্মীর হত্যার রহস্য উন্মোচন করল পিবিআই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৫
নারী পোশাককর্মীর হত্যার রহস্য উন্মোচন করল পিবিআই

চট্টগ্রাম: নগরের খুলশী থানার লালখান বাজার মোড় এলাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচ থেকে পোশাককর্মী জ্যোৎস্না বেগমের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার হওয়ার ঘটনার জট খুলেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় রোববার (২৩ মার্চ) নগরের চান্দগাঁও থানার মোহরা এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযুক্ত নয়ন বড়ুয়াকে (২৯) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

গ্রেপ্তার নয়ন বড়ুয়া, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পৌরসভা ১ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম গহিরা এলাকার মিলন বড়ুয়ার ছেলে। ভিকটিম জ্যোৎস্না, নোয়াখালীর জেলার কবিরহাট উপজেলার নলুয়ার চর ভুঁইয়ার হাট এলাকার আবুল কালামের ছেলে।

 

এর আগে, গত শনিবার (২২ মার্চ) নগরের খুলশী থানার লালখান বাজার মোড় এলাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে এক নারীর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের কর্মকর্তারা ভিকটিমের পরিচয় শনাক্ত করে। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্ত নয়নকে শনাক্ত এবং গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় রোববার (২৩ মার্চ) খুলশী থানায় ভুক্তভোগী জ্যোৎস্নার বড় বোন তৈয়বা বেগম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন।

পিবিআই কর্মকর্তারা জানায়, জ্যোৎস্নার আগে স্বামী ছিল। নয়নের সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার পর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি আগের স্বামীকে তালাক দেন। এরপর নয়নকে স্বামী হিসেবে পেতে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে থাকেন। প্রয়োজনে নয়নকে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্যও বলেন। অন্যদিকে চট্টগ্রামের রাউজান এলাকায় আগে থেকে স্ত্রী-সন্তান থাকায় নয়ন তার প্রেমিকা জোৎস্নাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। ভুক্তভোগী জ্যোৎস্না এবং অভিযুক্ত নয়ন চান্দগাঁও থানার কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় অবস্থিত শিল্পগ্রুপ কেডিএসের মালিকানাধীন একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। সেখানে তাদের পরিচয় হয়। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হলেও বছরখানেক আগে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিন মাস আগে থেকে সেই সম্পর্ক আরও গভীর হয়। মাসখানেক আগে নয়ন-জোৎস্না নগরের ইপিজেড থানার বন্দরটিলা আয়েশা মায়ের গলির কামাল ম্যানসনের নিচতলায় একটি এককক্ষের বাসা ভাড়া নেয়। এরপর স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন। এ সময়ে উভয়ের মধ্যে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কও হয়।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জ্যোৎস্না বিয়ের জন্য নয়ন বড়ুয়াকে চাপ দিলে উভয়ের মধ্যে আগে থেকেই বিরোধ চলে আসছিল। বিয়ে না করলে জোৎস্না তার পুরুষ সহকর্মী নয়নকে মামলার হুমকিও দিয়েছিলেন। সম্প্রতি চাপ প্রয়োগের অংশ হিসেবে জ্যোৎস্না রাউজান উপজেলায় নয়নের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেন। যদিও তিনি ওইসময় নয়নের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি ফাঁস করেননি।  

তিনি আরও জানান, একাধিকবার সবকিছু ফাঁস করে দেওয়া এবং মামলার হুমকি দিতে থাকেন জ্যোৎস্না। এটি নিয়ে বিরোধ এবং বাকবিতণ্ডার জেরে গত শনিবার সকালে জ্যোৎস্নাকে গলাটিপে হত্যা করে নয়ন। হত্যাকাণ্ডের পর নয়ন তার প্রেমিকা জ্যোৎস্নার মরদেহ কম্বল মুড়িয়ে দড়ি ও ওড়না দিয়ে বেঁধে ফেলে। পরবর্তীতে মরদেহটি একটি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে প্রথমে রিকশায় কিছুদূর নেয়। এরপর পুনরায় আরেকটি অটোরিকশায় লালখান বাজার এলাকায় মরদেহটি ফেলে চলে যায়। আজ (সোমবার) খুলশী থানায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে নয়ন বড়ুয়াকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৫ 
এমআই/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।