ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ চৈত্র ১৪৩১, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কিংবদন্তি গীতিকার সৈয়দ মহিউদ্দিনের মৃত্যুবার্ষিকী সোমবার

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২৫
কিংবদন্তি গীতিকার সৈয়দ মহিউদ্দিনের মৃত্যুবার্ষিকী সোমবার সৈয়দ মহিউদ্দিন

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের সংস্কৃতি, উৎসব আর সঙ্গীত জগতকে আমৃত্যু ঋদ্ধ করে গেছেন তিনি। সাধনা, উৎকর্ষতা আর চিন্তার গভীরতায় সুর-শব্দকে দিয়ে গেছেন অনন্য জাদুকরী ভাষা।

যে জাদুর শক্তিশালী সিড়ি বেয়ে নতুন উচ্চতা পেয়েছিল চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান। আমাদের প্রাণমন-হৃদয়ে সেই জাদুর রেশ রয়ে গেছে আজও, সেই কিংবদন্তি, সেই আঞ্চলিক গানের জাদুকর পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন গত বছর।
 সোমবার (৭ এপ্রিল) তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। শোক, শূন্যতার একটি বছর।  

সৈয়দ মহিউদ্দিন ছিলেন, সংসার বিরাগী মানুষ। অথচ তাঁর সৃষ্টি সুর সব জগৎসংসারের প্রতিচ্ছবি হয়ে ছিলো। তাঁর লেখায় চট্টগ্রামের মানুষ, প্রকৃতি, সংস্কৃতি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন উঠে এসেছিলো অনন্য ঢংয়ে। কখনো বস্তু কিংবা ভাব, কখনো সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি, ব্যক্তি ও সমষ্টি সবখানেই বিচরণ ছিলো চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানকে মানুষের হৃদয়ে ঠাইঁ করে নেয়া এই গীতিকারের।  

‘অ জেডা ফইরার বাপ’, ‘মেজ্জান দিয়ি মেজ্জান দিয়ি ঐতারথ’, ‘গর্কি তুয়ান-বইন্যা-খরা মোহামারি ঘুন্নিঝড়’, ‘হেডমাস্টার’, ‘পিরিত মানে ফুডুর ফাডুর’, ‘সাম্পান মাঝি সাম্পান বায় আগর মতো পেসিঞ্জার ন পায়’, ‘তারা সাত ভাইউত্তে উগ্যা ভৈন পাতা বালি নাম পাতা বালি’, ‘তালাকনামা পাঠাই দিলাম চিঠির ভিতরে’, ‘আঁর বউয়রে আঁই হাসাইয়ম আঁই কাঁদাইয়ম’, ‘আঁর বাপর বাড়ি কধুরখীল হউরু বাড়ি গুজারা’, ‘আসকার ডিঁইর পুকপাড়ে আঁর ভাঙাচোরা ঘর’সহ অসংখ্য সাড়াজাগানিয়া আধুনিক ও মাইজভান্ডারি গানের স্রষ্টা সৈয়দ মহিউদ্দিন। তার এসব সৃষ্টির অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিলো এসব গান রচনায় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারে ছিলেন আপোষহীন।  

আশির দশকে যখন আধুনিক গানের ডামাডোল ও আঞ্চলিক ভাষার বিকৃতিতে চাঁটগাইয়া গানের আকাশে দেখা দেয় অবক্ষয়, তখন সৈয়দ মহিউদ্দিনই তার নিখাদ সৃষ্টি দিয়ে এই অবক্ষয় থেকে আমাদের আঞ্চলিক গানকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান।  

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি শেফালী ঘোষ ও শ্যামসুন্দর বৈষ্ণবের সংগীত গুরু সৈয়দ মহিউদ্দিন। তাঁর কথা ও সুরে শেফালী-শ্যামের বহু গান আজো দাগ কাটে শ্রোতাদের হৃদয়ে, হয়েছে কালজয়ী। এছাড়া তার অনেক সাড়াজাগানো গানে কন্ঠ দিয়েছেন আবদুর রহিম, সনজিত আচার্য্য, কল্যাণী ঘোষ, কল্পনা লালা, রবি চৌধুরী, আলাউদ্দিন তাহের, শিমুল শীল, প্রেমসুন্দর বৈষ্ণব, জলি দাশ, ফকির শাহাবুদ্দিনের মতো বহু গুণী শিল্পী।

এমন গুণী, মহান ও কিংবদন্তী গীতিকার দীর্ঘ বছরের অসুখে ভুগে, সীমাহীন কষ্ট-দূর্ভোগ আর রাষ্ট্রীয় অবহেলার শিকার হয়ে ৭৭ বছর বয়সে বিদায় নিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের ৭ এপ্রিল নগরের মির্জাপুলে এক ভাড়া বাসায় দীর্ঘদিন মানবেতর জীবনযাপনের পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এর আগ পর্যন্ত তাঁর দেখভাল ও চিকিৎসায় শুভানুধ্যায়ী, ভক্ত ও শিষ্যরায় নিবেদিতপ্রাণ হয়ে এগিয়ে এসেছিলেন।  

২০১৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ডিসি হিলে দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি ক্রেস্ট ও সনদ নিয়ে মঞ্চ ত্যাগ করার সময় পা পিছলে পড়ে গিয়ে বাম হাত ও বাম পা ভেঙে ফেলেন। এরপর থেকেই শয্যাশায়ী হয়ে মানবেতন জীবনযাপন করছিলেন তিনি।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার সুয়াবিল গ্রামে জন্ম সৈয়দ মহিউদ্দিনের। তাঁর বাবা সৈয়দ আমির হোসেন এবং মা সৈয়দা আনোয়ারা বেগম।

প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে ফটিকছড়িতে পারিবারিকভাবে তার স্মরণে নানা আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া আগামী ১১ এপ্রিল তাঁর স্মরণে নগরের চেরাগী পাহাড়ে এক স্মরণসভা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন রেখেছে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘খিড়কি’।  

চট্টগ্রামে সঙ্গীতাকাশে সৈয়দ মহিউদ্দিনের মতো নক্ষত্রদের হারিয়ে যাওয়ার গল্পটা হয়তো মলিন ছিলো, ছিলো অসম্মান আর অস্বীকৃতির ব্যঞ্জনায় ফ্যাকাসে। তবে সমাজ রাষ্ট্র বা বাস্তবতার জমিন ছাপিয়ে অসংখ্য সঙ্গীতপ্রেমী, সঙ্গীতবোদ্ধা আর ভক্ত-শিষ্যদের হৃদয়জমিনে তিনি আজও রঙিন আর শক্তিমান জাদুকর হয়ে আছেন। নিজের সুর সৃষ্টি বা গানের রথে চড়ে অমরত্বের পথের পথিক হোক সৈয়দ মহিউদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২৫
এমআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।