চট্টগ্রাম: আন্তর্জাতিক টেন্ডার করার প্রক্রিয়া চলছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, আমাদের ইচ্ছে আছে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ এনসিটি, লালদিয়া এবং বে টার্মিনালে প্রথম অপারেটরকে অন্ততপক্ষে নিয়োগ দেওয়া।
রোববার (১০ আগস্ট) বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরের ৪ নম্বর ফটকে এজেন্ট ডেস্ক উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ মন্তব্য করেন।
এ সময় বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আরএসজিটির (রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল) যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা একদমই সুখকর না।
সিডিডিএল উদাহরণ সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাকে এপ্রিল মে মাসে যখন এসেছিলাম প্রশ্ন করা হয়েছিল, দেশি একজন অপারেটর তো খুব ভালো করেছে, উনি ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন টিইইউস করেছেন। কেন আপনারা খালি খালি অপারেটর চেঞ্জ করতে হবে? এখন তো আমরা চেঞ্জ করে প্রমাণ করে দিলাম। আসলে খুব ভালোটা যে কতটুক এটা নিজেরাই জানি না। আমাদের এটা নির্ধারণ করা নাই এ বন্দর থেকে ম্যাক্সিমাম কতটুকু ভলিয়ুম পাওয়া সম্ভব। রিপোর্ট বলছে এ বন্দর থেকে ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন টিইইউস পর্যন্ত পাওয়া সম্ভব। গত বছর আমাদের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ১ দশমিক ৩। সিডিডিএল প্রত্যাশা করছে এটার ওপরে চলে যাবে। টেকনোলজি, বেস্ট প্র্যাকটিস এবং গ্লোবাল প্র্যাকটিস আসলে এটি হয়তো তার চেয়ে উপরে চলে যাবে। আমার মনে হয়, এটার সাবজেকটিভ জাজমেন্ট না করে সিডিডিএল ভালো করছে এটা বেস্ট নাকি সেটা বলার ক্ষমতা আসলে যারা এক্সপার্ট তাদের কাছেই আছে। যারা করে অভ্যস্ত, যারা টপ র্যাংক হয়ে অভ্যস্ত তাদের কাছে গিয়ে বুঝতে হবে কোন মডেলটা আমাদের দেশের জন্য মোস্ট ফেভারেবল। ব্যক্তিগতভাবে আমি এবং আমাদের অনেকেরই একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতীয় স্বার্থ। দেশের জন্য কোনটা ভালো হবে সেটি করতে হবে। সিডিডিএলকে দিয়ে যদি ম্যাক্সিমাম ক্যাপাসিটি অ্যাচিভ করতে পারি ফ্যান্টাস্টিক। যদি আমাদের মনে হয়, না এখানে আরও কিছু টেকনোলজিক্যাল অ্যাডভেনটেজ আনা সম্ভব, আরও গ্লোবাল রেসপেকটিস আনলে আরও হয়তো ভালো হতে পারে তাহলে সেই কাজটিতে যাওয়ার চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, আমরা সবসময় দেখেছি বাংলাদেশে পাঁচ বছরের পরিকল্পনার প্রকল্প শেষ হয় ১৫ বছরে গিয়ে। তখন গ্লোবাল কম্পিটিশনে আমরা দ্রুত পিছিয়ে যাচ্ছি। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে আমরা অনেক ধীরে আগাচ্ছি। সেটাকে আমরা ব্রেক করতে চাই। আমরা চাই খুব দ্রুত এ প্রকল্পগুলো কমপ্লিট করবো। আমাদের ইচ্ছে হচ্ছে, এই ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা বড় পোর্টগুলোর খুব মাইলস্টোন কিছু প্রগ্রেস করে দিয়ে যেতে চাই। কিছু চুক্তি স্বাক্ষর করে দিতে চাই। কিছু গ্রাউন্ড ব্রেক করা শুরু হয়ে যাবে। আমরা এমন একটা জায়গায় নিয়ে যাব যেখানে চাকা গড়ানো শুরু করেছি সেখানে চাকা থামানো সম্ভব না। নির্বাচনের পর নতুন সরকার আসতে সময় লাগবে। ওই সময় যাতে কাজ থেমে না থাকে। এ কাজগুলো এগিয়ে যেতে থাকবে।
আশিক চৌধুরী বলেন, মাস তিনেক আগে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিলাম। আমাদের অনেক উপদেষ্টা এসেছেন। ফাইনালি মে মাসে প্রধান উপদেষ্টা এসেছিলেন। গত বছরের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে ব্যবসায়ীরা অনেক আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, কীভাবে বন্দরের জট কমবে। একমাস পরিবহন বন্ধ ছিল। সাপ্লাই চেইনে যে ক্ষতি হয়েছে সেটা কীভাবে সামাল দেবে। বন্দর কীভাবে হ্যান্ডেল করবে প্রচুর প্রশ্ন ছিল। আমরা সত্যিকার অর্থে মনে করি যে, বাংলাদেশের জনশক্তি কাজে লাগাতে দেশকে গ্লোবাল ফ্যাক্টরি করতে চাই। এর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরকে ১৫০ শতাংশে অপারেট করতে হবে। পুরো ইকোয়েশনটার পাজলের মধ্যে সবচেয়ে ইমপর্টেন্ট পিসটা হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। নয়তো বেপজা, বেজা, হাইটেক পার্ক, শিল্পায়ন সব ক্ষেত্রে আটকে যাব। খুবই খুশির কথা, এনসিটিতে সিডিডিএল প্রথম এক মাসে শতকরা ৩০ ভাগ কনটেইনার হ্যান্ডলিং ভলিয়ুম বেড়েছে। এটা বড় অর্জন। অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন, একজন অপারেটর থেকে আরেকজন অপারেটরকে দিলে দেশের কী হবে। ২০১১ সালে এ রকম একটা ঘটনা ঘটেছিল আমার যতটা মনে পড়ে। বন্দর, সিডিডিএল, বাংলাদেশ নেভি সবাই একসাথে কাজ করেছে। জাহাজ পণ্য খালাস করে চলে যাওয়া বা টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম শতকরা ১৩ শতাংশ কমে এসেছে। সবই ভালো খবর আমাদের জন্য।
আমরা সবসময় বলে এসেছি, চট্টগ্রাম বন্দরকে গ্লোবাল র্যাংকিংয়ে একদম উপরের দিকে থাকতে হবে। এর জন্য বেস্ট অপারেটর নিয়ে আসতে হবে। রিফরম করা হচ্ছে বন্দরের ভেতরে। একটু আগে একটি সফটওয়্যার উদ্বোধন করলাম। অটোমেট করলে দুইটি সুবিধা আছে। সশরীর গিয়ে যে কাগজ জমা দিতে হতো সেটির বদলে বাটন টিপে জমা দিতে পারছেন। সময় কমে আসছে। সবসময় দুর্নীতি ও হয়রানির অভিযোগ পাই। সেটাও কমে আসবে। বাটন ক্লিক করে পেমেন্ট করে দিচ্ছেন। করাপশন ইনডেক্সে সিগনিফিকেন্টলি ইমপ্রুভমেন্ট আসবে। যত বেশি অটোমেট করা যাবে তত বড় সুযোগ। সকালেও ফাইভজি এমওইউ স্বাক্ষর করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। সেখানেও দেখলাম টেকনোলজি কীভাবে ইনভল্ব করতে পারি। একসময় আমরা হয়তো এআই ইমপ্লিমেন্টেশন দেখতে পাব। যখন ফাউন্ডেশন রেডি হয়ে যাবে। আমরা দেখতে চাই যে, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের বন্দরের ক্যাপাসিটি চার-পাঁচগুণ বেড়ে যাবে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সকালে বন্দর ভবনের বোর্ড রুমে বন্দরের উন্নয়ন ও অপারেশন সংক্রান্ত বিষয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এরপর রবির সঙ্গে ফাইভজি সার্ভিস চালুর বিষয়ে চু্ক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেন। বিকেলে এফ শেডে কেইপিজেড গ্রিন চ্যানেল পরিদর্শন, সিপিএআর গেইটে ভেহিক্যাল ও কনটেইনার ডিজিটাল ডাটা এক্সচেঞ্জ সিস্টেম উদ্বোধন করেন।
এআর/পিডি/টিসি