চট্টগ্রাম: ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বাংলাদেশ থেকে দুবাই ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অর্থপাচারে এজেন্ট হিসেবে কাজ করা উৎপল পাল ও জাবেদের দেশের সম্পদ দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল আজিজকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলেন, আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড এজিএম আব্দুল আজিজ ও আরামিট পিএলসি’র এজিএম উৎপল পাল। এরআগে
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) তাদের ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের ঘটনায় দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার উৎপল পাল ও মো.আবদুল আজিজের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তার হওয়া ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আব্দুল আজিজ দুদকের এজাহারভুক্ত আসামি। আর আরামিট পিএলসির এজিএম উৎপল পাল নতুন করে মামলায় দেশে-বিদেশে সাইফুজ্জামানের যত সম্পত্তি অবরুদ্ধের তালিকায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী সাড়ে ৪শ কোটির হোটেল করেছে জনগণের টাকায়। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিদেশের সম্পদ অর্জন ও দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী উৎপল পাল। তিনি জাবেদের দেশ থেকে দুবাই ও দুবাই থেকে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অর্থপাচার প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অর্থাৎ উৎপল পালকে মাস্টারমাইন্ড হিসাবে দেখছে দুদক টিম। যদিও তিনি আরামিট পিএলসির কর্মচারী, কিন্তু তার (সাইফুজ্জামান চৌধুরী) ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (বিদেশে সম্পদ তৈরি, দেখাশোনার কাজ) হিসেবে কাজ করেছেন। তার কাছ থেকে জব্দ করা ২টি ল্যাপটপ ও ২টি মোবাইল থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। যা ফরেনসিক করার জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আব্দুল আজিজ সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসেবে কাজ করেন।
এদিকে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারি আবেদন আদালতে করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার পর ওই সময়কার সুবিধাভোগী ব্যক্তি ও শিল্পগোষ্ঠীর অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধান করছে দুদক। এর ধারাবাহিকতায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদ ও তার আরামিট গ্রুপের অর্থপাচারের বিষয়েও অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি। জাবেদ এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুদকের উপপরিচালক মশিউর রহমানকে। এছাড়াও সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক।
চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল ২০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে তার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি একটি মামলা হয়। সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রীর নামে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি সম্পত্তিসহ অন্যান্য দেশে স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। এ ছাড়া গত ৫ মার্চ তাদের নামে থাকা ৩৯টি ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ দেন আদালত। এসব হিসাবে ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকার বেশি জমা আছে। একই সঙ্গে তাদের নামে থাকা ১০২ কোটি টাকার শেয়ার ও ৯৫৭ বিঘা জমি জব্দের আদেশও দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর আদালত সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও রুকমিলা জামানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করে।
ইউসিবি ব্যাংক থেকে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে দুদক। গত ৪ সেপ্টেম্বর নগরের কোতোয়ালী থানায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী রুকমীলা জামানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছিলেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সর্বশেষ গত ১৬ সেপ্টেম্বর ‘ভুয়া তথ্য’ দিয়ে ইউসিবি ব্যাংক থেকে প্রায় ২১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ‘আত্মসাতের অভিযোগে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন দুদক।
এমআই/পিডি/টিসি